গত ৩ অক্টবর ২০১৪ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় পাতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ একটি কলাম লিখেছিলেন। যার শিরোনাম ছিল ‘ইষদুষ্ণ রাজনীতি ও বামপন্থীদেরও করনীয়’। শিরোনাম দেখেই বোঝা যায় লেখার উদ্দেশ্য। ‘ইষদুষ্ণ’ মানে হলো ঈষৎ সরগরম অবস্থা অর্থাৎ বর্তমান সরগরম রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বামপন্থীদের করনীয়। বেচারা সারাজীবন অর্থনীতি পড়াচ্ছেন, আমি একজন বিবিএর ছাত্র হিসেবে অর্থনীতি ভাল বুঝিনা এটা ঠিক কিন্তু‘ অর্থনীতিই বিবিএর প্রধান উপাদান বা নেয়ামক হওয়ায় সে হিসেবে যতটুকু অর্থনীতি পড়ার সুযোগ হয়েছে পৃথিবীতে বর্তমানে চার ধরণের প্রধান অর্থনৈতিক ধারণা বিদ্যমান রয়েছে-
১. পুজিবাদী তথা ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি ২. সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ৩. মিশ্র অর্থনীতি ৪. ইসলামিক অর্থনীতি।
এম এম আকাশ সাহেবরা খুব ভাল করেই জানেন অর্থনীতি পড়াতে গেলে স্বল্প পরিসরে হলেও প্রতিটি অর্থনৈতিক ধারনার একটির সাথে অন্যটির তুলনামূলক বিশ্লেষন ও পার্থক্য সমালোচনাসহ পড়াতে হয়। মজার বিষয় হল এই চারটি প্রধান অর্থনৈতিক ধারণার মধ্যে শুধুমাত্র ইসলামী অর্থনীতি ছাড়া প্রতিটির ইতিবাচক নেতিবাচক দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ ইসলামী অর্থনীতির নেতিবাচক দিক বের করে বাংলাদেশে অর্থনীতি বিষয়ে কোন বই রচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ইসলামী অর্থনীতির নেতিবাচক দিক খুজে বের করার দুঃসাহস এখনও পর্যন্তÍ আমাদের এসব স্যাররা দেখননি। এতসব কিছু জেনেও আমাদের এসব পন্ডিত স্যাররা মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়ে এবং ইসলামের সকল সুবিধা ভোগ করেও কার স্বার্থে স্বীকার করতে চান না বরং বিরোধীতা করেন তা আমার বোধগোম্য নয়। এখনও এই সভ্য যুগে মাদ্রাসা থেকে পাশ করা একজন ছাত্র ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে তাক লাগিয়ে দিলেও সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে অর্থনীতি পড়তে পারছে না। কারণ তাদের ধৃষ্টতাপূর্ণ যুক্তি ‘Islamic Ecnomics is not Economics’ তারা মাদ্রাসায় যে অর্থনীতি পড়ে এসেছে সেই ইসলামী অর্থনীতি নাকি প্রকৃত অর্থনীতি নয়।
যাহোক আমি আমার মূল কথায় আসি, বলছিলাম এম এম আকাশের বামপন্থীদের নছিহত করে লেখা প্রথম আলোর কলাম সম্পর্কে। তিনি খুব সাবলিলভাবে এবং অকপটে স্বীকার করেছন যে বামপন্থীদের ধস নেমেছে। এখন উনারা শুধু মাঝে মাঝে ফরমালিন দিয়ে একটু তাজা রাখার চেষ্টা করছেন মাত্র। এপ্রেক্ষিতে আমার কথা হচ্ছে, বঙ্গপসাগরে যদি ভাটা লাগে বুড়িগঙ্গায় কি তখন জোয়ার আসে? সমাজতন্ত্রের জন্মভূমিতেই সমাজতন্ত্র যেখানে আত্নহত্না করেছে সেখনে বাংলাদেশে তারা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিবাস্বপ্নে বিভোর। তবে তাদের সড়যন্ত্র থেমে নেই। বুকের মধ্যে জমে থাকা তুষের আগুন মাঝে মাঝে আগ্নেয়গীরীর জ্বালামুখের স্ফুলিঙ্গের ন্যায় জেগে ওঠে। ৭২এ ড. কামালের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের যে সংবিধান রচনা করা হয়ে ছিল তাতে ৯০ ভাগ মুসলমানের ইচ্ছা আকাঙ্খার বুকে লাথি মেরে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্র কায়েম করেছিল আওয়ামীলীগ। আবার সেই কথিত সমাজতান্ত্রিক সংবিধানের ব্যর্থতাকে মেনে নিয়ে ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর নাকে খত দিয়ে প্রইভেটাইজেশন কমিশনের মাধ্যমে সমাজতন্ত্রের মাথা ন্যাড়া করে চুন-কালি মাখিয়েছিল তারা নিজেরাই।
এম এম আকাশ এক জায়গায় লিখেছেন, ‘আওয়ামীলীগের ভিতরে ও বাহিরে বন্ধু সেজে থাকা সত্রুদের হাতেই শেখ মুজিবের মৃত্যু হয়েছিল। এবারও শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ যদি সত্যিকার মিত্রদের চিনতে ভুল করে,সেক্ষেত্রে আবারও ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। কিন্তু প্রথমবার শেখ মুজিবের বেলায় যেটা হয়েছিল ট্র্যাজেডি এবার সেটা হবে নিতান্তই প্রহসন এবং তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না’। সত্যই আকাশ সাহেব খাশাই বলেছেন। তবে দুঃখের ব্যাপার হল, শেখ মুজিবের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তাকে যারা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল তাদেরকেই শেখ হাসিনা বন্ধু বানিয়েছেন।’
যে সকল ইসলামপন্থীদের আওয়ামীলীগ তাদের প্রধান সত্রু বলে মনে করে, শেখ মুজিবের ধ্বংসের পেছনে তাদের কোন অবদান কিন্তু কেউ কোন দিন প্রমান করতে পারেনি। বরং যাদের কথা ইতিহাসে বার বার উঠে এসেছে, যারা শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিলেন তারাই এখন আওয়ামীলীগের পরম বন্ধু। আর এম এম আকাশ সাহেব ও সে সব বন্ধুদেরই একজন হিতাকাঙ্খি। সুতরাং শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ প্রকৃত বন্ধুদের চিনতে ভুল করলেও ইতিহাস কিন্তু চিনতে ভুল করবে না। কিন্তু তখন ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি দেখে দূর থেকে মুচকি হাসি দেবেন এসব বক বন্ধুরা।