somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওদের কাছে স্বপ্নের আলাদা কোনো অর্থ নেই

০৫ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনে দিনের কত কিছুই তো পাল্টে যেতে দেখলাম এই নগরের; নাগর জীবনের। সময়ের শ্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে যেতে শুরু করেছে মানুষের রুচিবোধ, চাহিদা, পছন্দ, চিন্তা, আদর্শের। এই তো কিছু দিন আগে পালিত হয়ে গেলো বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ।

বরাবরের মত বৈশাখে পাল্টে গেল রাজধানী ঢাকার গোটা দৃশ্যপট। ঐদিন সকাল থেকেই পথে ঢল নামলো কথিত বাঙালি সংস্কৃতি লালনকারী, আনন্দপিয়াসী নগরবাসী। বড়-ছোট প্রায় সবার পরনে লাল-সাদার বাহারি নকশার পোশাক। শিশুরা বের হয়েছে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে।

কিন্তু এর মধ্যেই এমন কিছু মানুষের দেখা মিলল যাদের কাছে পৌঁছায় না এ পরিবর্তন আর বদলে যাওয়ার হাওয়া। নতুন বছর, নববর্ষ এসবের আলাদা কোনো অর্থ তাদের কাছে নেই। বলছিলাম ‘পথশিশুদের’ কথা।

ক্ষুধার যন্ত্রণায় মায়ের কোল ছেড়ে শিশুরা যখন মা-বাবার ঘর ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়ায় তখনই তাদের পরিচয় হয় পথশিশু। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় এই ‘পথশিশু’ শব্দটাই যেন এক অভিশাপ ওদের জন্য। আর তাই শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের মতে, পথশিশু শব্দটাই ভুল। পথ তো কোনো শিশুকে জন্ম দেয় না। তাহলে তারা পথশিশু কোন অর্থে! বরং শব্দটি তাদের মানবিক মর্যাদা নষ্ট করে। তারা আসলে সুবিধা বঞ্চিত শিশু। জীবনযুদ্ধে হারমানা সুবিধা বঞ্চিত। সহজে বললে অবহেলিত, অবাঞ্ছিত। সমাজ থেকে বহুদূরে সমাজেরই অংশ। সাবেক এক রাষ্ট্রপতির ভাষায় ওরা হলো ‘পথকলি’।



ইচ্ছা না থাকলেও গণমাধ্যমে কাজ করার কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই পয়লা বৈশাখে ঢাকার রাজপথে বের হতে হয়েছিল। তবে উদযাপন করতে নয়। মানুষের আনন্দ কলমের আচড়ে পাঠকের কাছে তুলে ধরতে। শাহবাগের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চোখ পড়ল গায়ে ধুলাবালি, মলিন চেহারার ছোট্ট একটি মেয়ের দিকে। কিছুক্ষণ পর পর কারও ওড়না, কারও শাড়ি অথবা কারও পাঞ্জাবির কোনা টেনে ধরছে সে; আর বলছে, দুইডা ট্যাকা দেবেন? কেউ কেউ দুই টাকা-পাঁচ টাকা দিচ্ছে। কেউবা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলছেন, অন্য কোথাও দেখ।

পকেট থেকে পাঁচ টাকা বের করে হাতে দিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করতেই একটু থেমে বললো ‘রিপা’। ওর বাবা ডাকে- রিপামনি। থাকে তেজগাঁও সাতরাস্তার একটি বস্তিতে। বাবা এখন কোথায়- রিপা বলতে পারে না। তবে ওর মা শাহবাগে ফুল বিক্রি করে। আজ শাহবাগে এতো মানুষ কেন- জানতে চাইলে, এক বাক্যে বলল, জানি না। ও জানে না আজ নববর্ষ; জানে না, নববর্ষের অর্থ কী!

আর একটু সামনে এগুতেই চোখে পড়ল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে ডুগডুগি বিক্রি করছে ১১ বছর বয়সী ইলিয়াস। জানালো, সে নিজেই এই ডুগডুগি বানিয়েছে। যার প্রধান উপকরণ কনডেন্স মিল্কের পরিত্যক্ত কৌটা ও সিমেন্টের কাগজ। রংসহ প্রতিটার জন্য খরচ পড়ে ৩ থেকে ৪ টাকা। বিক্রি করে বিশ টাকা করে। সে কারণে বাড়তি আয়ের আশায় চেয়ে থাকেন বৈশাখের দিকে।

আজ এখানে এতো মানুষের ভিড় কেন? কিসের উৎসব? এমন প্রশ্ন করতেই ইলিয়াস জানালো, এখানে বৈশাখী মেলা হচ্ছে। বৈশাখী মেলা কেন হয় বা নববর্ষ কি- এতসব সে জানে না। তার জানার প্রয়োজনও পড়ে না।

ইলিয়াসের বাবা রিকশা চালায়; আর মা অন্যের বাসায় কাজ করে। আজ পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার সুযোগ না পেলেও সারা বছরই কিছু না কিছু কাজ করে সে; আয়ও খারাপ না। তবে কোনো কারণে যদি কাজ না জোটে তবে, ভাঙ্গারি কুড়িয়ে চলে ইলিয়াসের দিন-রাত। আজ এসেছে ডুগডুগি নিয়ে।

রাজধানীজুড়ে এমন হাজারও রিপা, ইলিয়াস রয়েছে- যারা বৈশাখী মেলা কেন হয় বা নববর্ষ কী? এতসব কিছুই জানে না। কারণ নতুন বছরের আলাদা কোনো বিশেষত্ব বা মহত্ব নেই তাদের কাছে। এই শিশুদের কাছে বছরের সব দিনই একই রকম। ঈদ-পূজা বা নববর্ষের কোনো বৈচিত্র তাদের স্পর্শ করে না।

তাই হয়তো ওদের স্বপ্নগুলো একটু আলাদা। অবহেলিত শব্দটি এই শিশুদের জীবনের সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:২১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×