somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘা পর্ব-২

২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেঘা
পর্ব-২
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
ক্যাস্পাস থেকে বের হতে যাবো, ঠিক সেই সময় নীলা এসে সামনে দাঁড়ালো। সে বললো, আপনি ফর্মফিলাপ করেছেন?
আমি সবাইকে মিথ্যা কথা বলতে পারি। কিন্তু বাবা মা আর এই বোরকা পরিহিতা কোনো নারীকে মিথ্যা বলতে পারি না। কেননা এরা যেমন পবিত্র, তেমনি দ্বীনদার। এদের সাথে মিথ্যা বলতে গেলে হৃদপিণ্ডটা কেঁপে ওঠে।
আমি বললাম, না করিনি।
সে বললো, ও। তা, কবে করবেন?
- দেখি, দুই একদিনের মধ্যে করে ফেলবো। এখনো তো নয়দিন সময় আছে।
- ফর্মফিলাপের সময় আমাকে একটু জানাবেন। আমি আপনার টাকার পরিমাণটা কমিয়ে দেবো।
- আচ্ছা।
- আর শোনেন, কোনো বড় ভাই টাইদের কাছে যাবেন না। কেমন?

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।
.
বাসে বসে আছি। পকেট হাতিয়ে দেখলাম, ৩৪৬ টাকা রয়েছে। ভার্সিটিতে বারো মাসের বেতন এবং ফর্মফিলাপ মিলিয়ে বাইশ হাজার সামথিং দিতে হবে। অথচ আমার পকেটে মাত্র ৩৪৬ টাকা।
এদিকে মাঠের ধান পাকতে পাকতে আরো দিন পঁচিশেক লেগে যাবে। যদি আব্বাকে চাপ দেই টাকার জন্য। তবে নিশ্চয়ই কারো কাছে থেকে সুদে টাকা এনে আমাকে দেবেন। যার ভোগান্তি আমার পরিবারকে মাসের পর মাস পোহাতে হবে।

ভাবলাম মেঘাকে একবার কল করে দেখি। ফর্মফিলাপের চিন্তা, সাথে মানুষের দরখাস্ত লেখা, এসবের মধ্যে মেঘার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।
কয়েকবার রিং হতেই সে রিসিভ করলো। আমি "হ্যালো" বলতেই অপর প্রান্ত থেকে সে বলে উঠলো, কোথায় তুই?
- বাসে।
- কখন গেলি?
- এইতো কিছুক্ষণ আগে।
- আমাকে বললি না কেন? আমি তো তোর অপেক্ষায় এখনো বসে আছি। আর দেখ তোকে কতবার কল করেছি। তুই কল রিসিভ করিসনি।
- মেঘা কিছু কথা ছিল।
- বল।
- না, এখানে না। কাল একটু দেখা করতে পারবি?
- কোথায়?
- যেখানে বলবি।
- তাহলে আমার বাসার নিচে চলে আসিস।
- আচ্ছা।

আমি ফোন রেখে দিলাম। মেঘাকে আমার সম্বন্ধে পূর্ণরূপে অবগত করতে হবে। সাথে দেখি তার থেকে কিছু টাকা নেওয়া যায় কিনা।
.
রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। আজ সকাল সকালই ঘুম ভেঙে গিয়েছে। আমি ফ্রেশ হয়ে মেঘার বাসার নিচে চলে গেলাম। তাদের বাসার গেটের সামনে পায়চারি করছি। আর ভাবছি, কিভাবে তাকে টাকার কথা বলবো? আর বললে সে কী মনে করবে! এক পর্যায়ে তাকে কল করলাম, একবার রিং হতেই সে রিসিভ করলো। আমি "হ্যালো" বলার আগেই সে বললো, কোথায় তুই?
আমি বললাম, তোদের বাসার নিচে।
- আচ্ছা ওখানেই দাঁড়া। আমি আসছি।

খানিকবাদে সে নিচে এসে বললো, কখন এলি?
আমি মাথা নিচু করে বললাম, এইতো কিছুক্ষণ আগে।
- তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কী হয়েছে তোর?
- না, তেমন কিছু না।
- তাহলে এমন মনমরা দেখাচ্ছে কেন? রাতে ঘুমাসনি?
- হুম।
- হুম কী?
- ঘুমিয়েছি।

নাহ! মেঘাকে আমার পরিবার সম্বন্ধে কিছু বলা যাবে না। শুধু টাকার কথাটাই বলি। একটা চাকরি পেলেই তাকে তার টাকাটা শোধ করে দেবো।

- কিরে? কী ভাবছিস?
- মে... মে... মেঘা।
- হ্যাঁ বল, তুই ঠিক আছিস তো?
- হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। মেঘা...
- হ্যাঁ বল, শুনছি।

এবার আর কোনো সংকোচ না করে বলেই ফেললাম, কিছু টাকা দিতে পারবি?
সে অবাক হয়ে বললো, কত দিতে হবে?
- দশ হাজার দিলেই হবে।
- কবে লাগবে?
- ২৭ তারিখের মধ্যে দিলেই হবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে, পেয়ে যাবি। টাকার জন্যই কি তুই এমন মন খারাপ করে ছিলি?

আমি এপাশ ওপাশ মাথা ঝাঁকালাম। সে বললো, আরে বোকা যেকোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবি।
আমি আর্দ্র নয়নে তার দিকে তাকালাম। সেও তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।
.
বাসায় ফিরে এসে বাথরুমে ঢুকে ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। যাক, ফর্মফিলাপের চিন্তা থেকে তো মুক্ত হলাম। এখন শুধু একটা জব পেতে হবে।
ঝর্ণার পানিতে সকল দুশ্চিন্তা ধুয়ে ফেলে বাথরুম থেকে বের হলাম। এখন একটু স্বস্তি লাগছে, নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে।

প্রাতরাশ শেষ করে মেঘাকে কল করলাম। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। দুইবার কল করে রেখে দিলাম। হয়তো স্নান করতে গিয়েছে। নয়তো ক্যাস্পাসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাই ছোট্ট একটা টেক্সট করে আমি ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে থাকলাম।

প্রতিদিন দু'জন একসাথেই ক্যাম্পাসে যাই। কিন্তু আজ একা একা যাবো। নাহ! আরেকবার কল করে দেখি। বাস কাউন্টারে দাঁড়িয়ে তাকে কল করলাম। কয়েকবার রিং হতেই সে রিসিভ করলো। আমি বললাম, কিরে কোথায় তুই?
- আমি তো ক্যাম্পাসে।
- কি?
- হ্যাঁ রে, একটু জুরুরি কাজ ছিল। তাই তোকে না বলে একা একাই চলে এসেছি। কিছু মনে করিস না। তুই আয়, আড্ডা দেবো।

আমি ফোন রেখে দিলাম। খানিকবাদে বাস এলে আমি বাসে উঠে পড়লাম। প্রতিদিনের মতো আজও জানালার কাছে বসলাম। কিন্তু আজ পাশে মেঘা নেই। কল্যাণপুর থেকে একজন প্রবীণ ব্যক্তি বাসে উঠলেন। আমার পাশের সিটটা খালি থাকায় তিনি সেখানে বসে পরলেন। লোকটির বয়স আনুমানিক পঞ্চাশ পেরিয়েছে। স্বল্প শুভ্র কেশ, মুখভর্তি দাড়ি। একবার আমার দিকে তাকালেন। তারপর আবার চুপচাপ বসে রইলেন। খানিকবাদে ফোনকল আসায় তিনি ফোনে কথা বলতে লাগলেন। আমি উনার কথা বলার ধরণ দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। একদম স্পষ্ট শুদ্ধ ভাষা। তিনি অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে বললেন, সময়কে সঠিক কাজে ব্যয় করো। অন্যের সাফল্যে হিংসা করো না। সে পারলে তুমি কেন পারবে না?
.
ক্যাম্পাসে ঢুকে সোজা ক্লাসরুমের দিকে হাঁটা ধরলাম। ঘড়িতে তখন ন'টা বেজে চৌদ্দ মিনিট। অলরেডি ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি ক্লাসে ঢুকতে যাবো ঠিক সেই মুহূর্তে পেছন থেকে কেউ একজন "শ্রাবণ" বলে ডাক দিলো। আমি পেছনে ঘুরতেই দেখি নীলা দাঁড়িয়ে আছে। সে আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো, একটু এদিকে আসুন। কিছু কথা ছিল।
আমি বললাম, ক্লাস?
সে বললো, এখন থেকে আর ক্লাস হবে না। ফর্মফিলাপের জন্য বন্ধ। এদিকে আসুন।

আমি তার পিছে পিছে গেলাম। সে আমাকে বেলকনির একপাশে নিয়ে গিয়ে বললো, মেঘা আপনার কি হয়?
আমি বললাম, হঠাৎ এই প্রশ্ন?
সে বললো, বলুন না সে আপনার কে?
- মেঘা আমাকে পছন্দ করে। আমিও তাকে পছন্দ করি।
- মানে সে আপনার গার্লফ্রেন্ড?
- বলতে পারেন।
- আপনি কি জানেন, সে আপনার সাথে অভিনয় করছে?

আমি নীলার কথায় বেশ কিছুটা অবাক হলাম। সে আবার বললো, আপনি ক্লাসের ফার্স্টবয়। আপনাকে ফার্স্ট থেকে লাস্ট করার জন্যই সে আপনার সাথে প্রেমের অভিনয় করছে।
- মানে?
- মানে আপনি এসব প্রেম ভালোবাসা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মন দিন। নয়তো দেখবেন, দিন শেষে মেঘা তার পরিকল্পনায় জয়ী হবে। আর আপনি হবেন.....।
- আপনি কিভাবে জানলেন যে, মেঘা আমার সাথে অভিনয় করছে?
- সে অনেক কথা অন্য দিন বলবো। আপনি মন দিয়ে লেখাপড়া করুন।
- আমি এখনই শুনতে চাই।
- আচ্ছা, আপনি আমাকে এটুকু বলুন যে "আপনি শেষ কবে বাসায় বই খুলেছেন?"

আমি তার এমন প্রশ্নে কিছুটা সচকিত হলাম। ভেবে দেখলাম, সত্যই তো! আমি তো বেশ কয়েকটা মাস যাবত বাসায় পড়তে বসি না।

নীলা বললো, কী ভাবছেন?
- হ্যাঁ হ্যাঁ?
- যবে থেকে মেঘার সাথে আপনার সম্পর্ক হয়েছে। তবে থেকে আপনি বাসায় পড়ার কথা ভুলে গিয়েছেন। সারারাত ফোনকল, মেসেজিং, চ্যাটিং, এসবে দিন পার করছেন। এ্যাম আই রাইট?

আমি মাথা ঝাঁকালাম। সে আবারও বললো, আপনি জানতে চাইলেন না, আমি এসব কী করে জানলাম?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
সে বলতে শুরু করলো, আপনি যখন ক্লাসে প্রথম এসেছিলেন এবং স্যারের প্রতিটি প্রশ্নের জবাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ঠিক সেদিন থেকেই সে আপনাকে টার্গেট করে। আপনি দেখতে অনেকটা অগোছালো টাইপের ছিলেন। কিন্তু আপনার মেধাশক্তি ছিল প্রচুর। অন্যদিকে মেঘার আপনাকে সহ্য হচ্ছিলো না। একদিন সে তার বন্ধুদের সাথে আলাপ করছিলো, কিভাবে আপনাকে নিচে নামানো যায়। দূর্ভাগ্যক্রমে আমি সেদিন তাদের কথাগুলো শুনে ফেলেছিলাম।

এটুকু বলে নীলা থামলো। আমি বললাম, এসব করে তার কী লাভ?
- তার কোনো লাভ নেই। ঐযে বললাম, আপনাকে তার সহ্য হয় না। ক্লাসে স্যার কোনো প্রশ্ন করলে, কেউ উত্তর দিতে না পারলেও আপনি পারেন। এটাই মূলত তার এরূপ মিশনের মূল কারণ।
- কিন্তু তাকে দেখে তো এমনটা মনে হয় না।
- আপনি সবাইকে আপনার নিজের মতো ভাবেন। এজন্যই তার এই নিখুঁত অভিনয়টা আপনার কাছে সত্য বলে মনে হয়।
- তাহলে এখন আমার করণীয়?
- আপনি পড়ালেখায় মন দিন। সামনে পরীক্ষা। সে কথা বলতে চাইলে অল্প কথায় আলাপ শেষ করুন। আর দেখুন রেজাল্ট বের হলে কী হয়?

নীলা চলে গেল। আমি বেলকনির রেলিং ধরে কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইলাম। সবকিছু আমার কাছে ঝাপসা মনে হচ্ছে। নীলা এসব কী বলে গেল? যদি তার কথা সত্যই হয়, তাহলে আমাকে মেঘার মায়া থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কিন্তু মেঘা এই সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এতো বড় অভিনয় কিভাবে করছে, কেন করছে? নাকি সে মেন্টালি সিক?

মেঘা বলেছিল, সে নাকি ক্যাস্পাসে এসেছে। কিন্তু না, তাকে ক্যাস্পাসের কোথাও খুঁজে পেলাম না। কল করছি, রিসিভ করছে না। আমি সিদ্ধান্ত স্থির করলাম, তার সাথে সম্পর্ক রাখবো ঠিকই। কিন্তু পড়ালেখা থেকে নিজেকে দূরে রাখবো না।
.
২৭ তারিখ ফর্মফিলাপের লাস্ট ডেট। আর মাত্র তিন দিন বাকি আছে। ক্লাস না হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যাই। আমার মতো এমন অনেকেই আছে, যাদের পূর্ণ টাকা  পরিশোধ করে পরীক্ষা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। একমাত্র তাদের উপকারের জন্যই আমি ক্যাম্পাসে যাই। এখন পর্যন্ত প্রায় একশো জনকে দরখাস্ত লিখে দিয়েছি। অথচ নিজেরটাই লেখা হয়নি।

মেঘাকে কল দেই। সে বেপাত্তা। তার কোনো খোঁজই নেই। সে টাকাটা না দিলে আমি ফর্মফিলাপ করতে পারবো না। পরিচিত কিছু স্যারদেরও আমার সমস্যার কথা বলেছি। উনারা আমাকে জানিয়েছেন, কিছু তো ম্যানেজ করো। একেবারে ফ্রি তো আর করা যাবে না। অন্তত ফর্মফিলাপের সাড়ে ছয় হাজার আর দু'এক মাসের বেতনের টাকাটা জোগাড় করো।
.
আগামীকাল ফর্মফিলাপের ডেট শেষ হবে। আমি এই মুহূর্তে মেঘার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। কতবার ফোন দিলাম। তবু সে রিসিভ করলো না। হাজারটা টেক্সট করা হয়ে গিয়েছে। তবু কোনো প্রত্যুত্তর পাইনি। ফেসবুকে এক্টিভ। কিন্তু মেসেজ সিন করে না। মেসেন্জারে কল দিলে রিং হয়। কিন্তু রিসিভ হয় না। আব্বাকেও কল করতে পারছি না। গত পরশু কথা হয়েছিল আব্বার সাথে। বাড়িতে বাজারের টাকা পর্যন্ত নেই। আর আমাকে দেবে কোথা থেকে?

এশার আজান পরেছে প্রায় আধাঘণ্টা হবে। আমি এখনো দাঁড়িয়ে আছি মেঘার বাসার নিচে। যদি কৃপা করে একবার সে বাইরে বের হয়। কিন্তু না, তার কোনো হদিশ মিলছে না। গেটে দারোয়ান দাঁড়ানো। তাকেও কিছু বলতে পারছি না। এদিকে খিদেতে পেট চোঁচোঁ করছে।

কিছু বন্ধুবান্ধব ছিল। সবাইকেই আমার অবস্থা সম্পর্কে অবগত করেছি। কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি। আর করবেই বা কেন? আমি তাদের টাকা কবে পরিশোধ করবো, সে সম্বন্ধে আমি নিজেই নিশ্চিত নই। যদি এমন হতো, আমার অনেক আছে। কিন্তু সম্প্রতি এমন বিপদে পড়েছি। তবে নিশ্চিত, অনেকে আমাকে সাহায্য করতো।
.
রাত দশটা বেজে পঁচিশ মিনিট। রাস্তায় প্রচুর মানুষ। সবাই সবার স্বীয় কাজে ব্যস্ত। রাস্তার ফকিরগুলো এখনো ভিক্ষা করছে। হয়তো আরেকটু পেলে তাদের আজকের টার্গেটটা পূরণ হবে।

জনতা হাউজিংয়ের সামনে যেই লাভরোডটা রয়েছে। আমি সেখানকার ফুটপাতে বসে পড়লাম। পা চলছে না আর। কিছু খেতে হবে। পকেটে বিশ টাকার দুইটা নোট। আর পাঁচ টাকার একটা কয়েন ছাড়া কিছুই নেই। অবশ্য কোনো মতে বাসা পর্যন্ত যেতে পারলেই হতো। বাসায় রাতের রান্না হয়েছে। খাওয়া নিয়ে বাসায় কোনো টেনশন নেই। কেননা মাসের শুরুতে সবাইকে খাওয়ার টাকা জমা দিতে হয়।

বেতন পাবো আগামী মাসের দশ তারিখে। এই পঁয়তাল্লিশ টাকা দিয়ে আগামী দশ তারিখ পর্যন্ত চলতে হবে। আমি যেখানে বসে আছি, তার থেকে একটু দূরে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে প্রেমে বিভোর হয়ে আছে। সামনে দিয়ে কাকপক্ষী চলে গেলেও তাদের দৃষ্টিগোচর হবে না। ভাবছি আর কিছুক্ষণ বসে থাকি। কিছুটা শক্তি সঞ্চার হলে ধীরে ধীরে বাসার দিকে রওনা দেওয়া যাবে। হঠাৎই মনে হলো নাফিজের কথা। সে আমার ক্লাসমেট। ছেলেটা গিটার খুব পছন্দ করে। তার ইচ্ছা সেও আমার মতো গিটার বাজাবে, গান গাইবে।

কখনো অতি প্রয়োজন ছাড়া আমি ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নেই না। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রয়োজন আমার চরম শিখরে। আমি ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নিয়ে নাফিজকে কল করলাম। রিং হচ্ছে। কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। বার কয়েক কল দেওয়ার পর রিসিভ হলো। সে অপর প্রান্ত থেকে সালাম দিয়ে বললো, শ্রাবণ ভাই কেমন আছেন?
আমি মত বিনিময় সেরে তাকে বললাম, ভাই আমার গিটারটা বিক্রি করে দেবো। কিনবি ভাই তুই?

সে বোধ করি আমার কথায় কিছুটা অবাক হলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, হঠাৎ গিটার বিক্রি করবেন কেন?
আমি তাকে বললাম, ভাই কারণ জিজ্ঞেস করিস না। তুই যদি গিটারটা নিস। তাহলে বড্ড উপকার হবে। আর গিটারের সাথে একটা সুযোগও রয়েছে।
সে বললো, কী সুযোগ?
আমি বললাম, গিটার কিনলে তোকে গিটার বাজানো শেখানোর দায়িত্ব আমার।

সে প্রলোভিত কণ্ঠে বললো, কত দিতে হবে?
আমি একটু সময় নিয়ে হিসেব করে বললাম, পাঁচ হাজার দিলেই হবে।
সে বোধ হয় এবার একটু বেশিই অবাক হলো। বললো, কয়েকমাস আগে একজন আট হাজার বলেছিল। আপনি তখন দিলেন না। আর এখন পাঁচ হাজারে দেবেন?
- ভাই, এত প্রশ্ন করিস না। তুই নিলে বল। আমি কালকে ক্যাস্পাসে নিয়ে যাবো।
সে বললো, আচ্ছা দাঁড়ান। আমাকে একটু সময় দিন। আমি খানিক পর কল করছি।

ফোন রেখে দিলাম। এখন ভাবছি, যদি গিটারটা পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করি। তাহলে আরো পাঁচ হাজার টাকা। এই টাকাটা পাবো কোথায়? পাঁচ হাজার না হলেও অন্তত তিন হাজার তো লাগবে। পাশে তাকিয়ে দেখি ঐ দু'জন ছেলেমেয়ে এখনো বসে আছে। তাদের কার্যক্রমে কিছুটা লজ্জাবোধও হচ্ছে আমার।

আমি তাদের সামনে গিয়ে গলা খাকারি দিলাম। সাথে সাথে দু'জন দু'জনকে ছেড়ে দিলো। তারা এই সময়ে এই খানে কারো আগমন মোটেও প্রত্যাশা করেনি। ছেলেটা তোতলাতে তোতলাতে বললো, কী.. কী.. কী চাই?
আমি বললাম, ভাই একটা ফোন বিক্রি করবো।
ছেলেটা এবার একটু উচ্চস্বরেই বললো, তো আমাদের কাছে কী হ্যাঁ? অন্য জায়গা যান মিয়া। যত্তসব ফালতু পোলাপান।

মনে চাচ্ছিলো কয়েকটা লাগিয়ে দেই। ফালতু কে এবং কারা, সেটা বুঝিয়ে দেই। কিন্তু শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি না থাকায় কিছু না বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলাম।
.
অপেক্ষা করুন তৃতীয় পর্বের।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×