সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০০৬ সকাল ৭:৫২
যাবার সময় হলো বিহঙ্গের...চাঁদ ছুঁতে পারবো না বলেই কেটেছি পাখা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আপনাদের মাঝে এসেছিলাম, আবার চলে যাচ্ছি। চলে যাওয়ার কারণটা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন বোধ করছি বলেই এই লেখা, নইলে হয়তো হঠাৎ এসেছিলাম হঠাৎ মিলিয়েও যেতাম, কেউ লৰ্য করতেন না, করার কথাও নয়, আমি এমন কিছু, এমন কেউ নই; অলখে থাকাটাও এক ধরনের সাফল্য, সবাই সেটা পারে না, কেউ কেউ পারে, তারা নমস্য। সে যাক, কেন চলে যাচ্ছি সে কথায় আসি। আমার নিজের দু'একটি পোস্ট নিয়ে অনেকেই অনেক গ্রহণযোগ্য, সৎ এবং যুক্তিপূর্ণ মতামত দিয়েছেন, সে জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আবার কেউ কেউ কুরূচিপূর্ণ বাচালতায়ও নেমেছেন, সে জন্য কিন্তু আমি তাদেরকে নিষিদ্ধ করার দাবি করিনি কিংবা তাদেরকে মলস্নযুদ্ধেও আহ্বান করিনি। বরং চেয়েছি সবাই যেনো ব্যক্তিগত আক্রমণের উর্দ্ধে উঠে প্রসঙ্গ নিয়েই সম-আলোচনা (ভালো ও মন্দ দু'টোই) করেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এখানে ক্রমশঃই সহিষ্ণুতা আর মিষ্টভাষের আকাল পড়ছে। উগ্রবাদ ও ধর্মাগ্রাসন যে কতোটা তীব্র আকার নিয়েছে তা কি এই বস্নগে যারা সুস্থ মসত্দিস্কের মানুষ আছেন তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন না? এরপরও কি আপনারা বাঙালির জাতি-অসত্দিত্ব, লোকায়ত সংস্কৃতি আর শ্বাশ্বত সাধক-সূফী ধর্মবাদী মানসচরিত্রের স্থায়ীত্ব নিয়ে আশাবাদী? আশা ক্থহকিনী, কি জানি সেই ক্থহকিনীর মায়া বাধ্য হয়েই ছাড়তে হচ্ছে। গত তিন চারদিন ধরে এই বস্নগে যতোবার এসেছি প্রতিবারই আশ্চর্য হয়েছি যে, এখানে এতো দুর্গন্ধ এলো কী করে? রজনীগন্ধার সুবাশ খুঁজতে এসে এ কী নোংরায় এসে পড়া গেলো? "তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, অতীতে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে অনেক জাতিই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে"_ পবিত্র ধর্মগ্রন্থের এই বাণী যে এখানে কী ভাবে ভুলুন্ঠিত তা যদি কেউ একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন তাহলে তিনি আশ্চর্যই হবেন না, তার বুক ফেটে কান্না আসার কথা। পৃথিবী আজ এমন একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, আধুনিকতা মানুষকে এমন এক অবস্থানে এনে ছেড়ে দিয়েছে যেখানে কোনও কিছুই প্রশ্নহীন নয়, যাচাই-বাছাই-সমালোচনা ছাড়া কোনও কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে ডিএনএ দিয়ে সনত্দানের পিতৃত্ব নির্ধারিত হচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্র ও তার বেঁধে দেওয়া নিয়মাবলী ঢুকে যাচ্ছে মানুষের শোবার ঘরে সেখানে ধর্ম তো নিমিত্ত মাত্র, তার কাছে প্রশ্নহীন সমর্পণ এখন অসম্ভব কল্পনা। কোনও সচেতন মানুষের পৰেই পৃথিবীর কোনও ধর্মেরই প্রতিটি বাধ্যবাধকতাকে দ্ব্যর্থহীন ভাবে মেনে নিয়ে পালন করার আর কোনও অবকাশ নেই। যদি কেউ তা করতে চান তাহলে তাকে আধুনিকতার সমসত্দটা ত্যাগ করে গুহাবাসী হতে হবে_ বিদু্যৎ থেকে শুরম্ন করে যে কম্পিউটারে বসে এখন লেখাটি লিখছি তাও কিন্তু ধর্মের কোনও অবদান নয়, বাহ্যিক ও পার্থিব উপাদানেই এর সৃষ্টি ও বিন্যাস। ধর্মকে যখনই আত্মা থেকে বাইরে করে আনা হয়, তখনই হয়ে দাঁড়ায় ধর্মহীনতা _ এই মনত্দব্যে আহত বোধ না করে একবার বাক্যটি নিয়ে ভেবে দেখুন, উত্তরটা পেতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। মূলকথা থেকে দূরে সরে যাওয়া আমার স্বভাব, তাই আবার ফিরে আসি বক্তব্যে। এই বস্নগের দুর্গন্ধটা এখন আর কম্পিউটারে নেই, সত্ত্বায় গিয়ে আঘাত করছে। কোনও উপন্যাসের দু'টি অধ্যায়কে নিয়ে যে তেলেসমাতি কাণ্ড এখানে ঘটানো হলো, লেখককে যে ভাবে নোংরায় এনে ফেলে হলো তা একমাত্র বরাহকেই মানায়, মানুষকে নয়। উপন্যাসের ভাষা কিংবা বর্ণনাশৈলী কি হবে তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে, জ্যাক দাঁরিদা, ফুকো কিংবা কাফ্কার মতো বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যতত্ত্ব বিশারদগণও ডি এইচ লরেন্সের লেডি চ্যাটার্লিজ লাভারকে অশস্নীল বলে আখ্যা দিতে পারেননি, বরং তারা মনে করেছেন, অশস্নীলতা ব্যক্তির বোধ-বুদ্ধির ওপর নির্ভরশীল, কোনও ইউনিভার্সাল পারা নেই অশস্নীলতার পারদের - মাসুদা ভাট্টির উপন্যাস সম্পর্কেও আমার মতামত এরকমই। তার উপন্যাসের চরিত্র ধর্মকে আঘাত করেছে কি করেনি তা এই তথাকথিত ধর্মবাদীরা উগ্রবাদের চশমা দিয়ে ছেঁকে নিরূপণ করবেন? আর তাদের নির্দেশে বস্নক কতর্ৃপৰ লেখকের লেখাটি মুছে দেবেন_ এতে আর যাই-ই থাকুক, সততা নেই, যা আছে তা হলো নির্জল পৰপাতিত্ব, নোংরামিকে সমর্থন আর উগ্রতার আগুনে ঘৃতাহুতি। রবীন্দ্রনাথ থেকে হালের হুমায়ূন আহমেদ _ প্রতিটি লেখকই মুক্তবুদ্ধির কথা বলেছেন, আমার কাছে এরা নমস্য, পূজ্যও বলতে পারেন, যে বা যিনি এঁদের লেখা পড়েছেন, এঁদেরকে সম্মান করেন তাদের জন্য মাসুদা ভাট্টিকে এভাবে অপমান করাটা মেনে নেওয়া দুষ্কর, এখানে ব্যক্তি মাসুদা ভাট্টির কথা বলা হচ্ছে না, তার কথা বলা বা তার লেখনীর অধিকারের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সেই পথ যেহেতু কতর্ৃপৰই রম্নদ্ধ করে দিয়েছেন, তাই যে কোনওদিন আপনি বা আমি বা আমাদের মতো যে কাউকেই নিষিদ্ধ করা হতে পারে, বলা নেই কওয়া নেই বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে কারো নির্দেশে আমাদের শখের লেখনী _ সে পর্যনত্দ অপেৰা করে নাকের বদলে নরম্ননটাও খোয়ানোর কোনও কারণ দেখছিনে। সবশেষে, এখানে এই বস্নগে আসলে কে কোথায় খেলেন, কার প্রেমে কে মশগুল, কে সাইকেল কিংবা জগার কিনলেন, কে হালিম নাকি বিরিয়ানী খেলেন _ এসব নিয়েই লেখালেখি করম্নন, এর চেয়ে উন্নত কিছু লিখতে গেলেই বদহজম হবে, মনে-মগজে বায়ু জমবে এবং সেটা যখন বেরিয়ে আসবে তখন সবদিক দিয়েই আপনাদের ৰতি। নইলে দেখুন, মাসুদা ভাট্টিকে না হয় বাদই দিন, উনি প্রতিষ্ঠিত লেখক, স্বনামেই পরিচিত, এখানে এসে বরং বস্নগের নামটাই বাড়িয়েছিলেন, উনার নিজের তাতে কোনও পরিচিতি কিংবা সুনাম বাড়েনি, বরং সেদিন বলেছিলাম, উনি শিং ভেঙে ভ্যাড়ার দলে বাছুর হয়েছেন, কিন্তু যারা নতুন, লেখায় সবেমাত্র হাত পাকাচ্ছেন তাদেরও কোনও উদার ও বিশেস্নষনী মতামতকেও ধর্মের অাঁঠায় গেঁথে নোংরায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে, কী হচ্ছে না? কেউ কেউ আবার নিরপেৰতার মুনি সাজার চেষ্টা করছেন, কিন্তু নিজের জ্বালানো ধুনিতে তার কৌপিন যে পুড়ে গেছে, তিনি নিজেই যে ন্যাংটো বাবা হয়ে যাচ্ছেন সেটা তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না, কিন্তু তার দেউলিয়াত্ব কোনও কিছু দিয়েই তিনি ঢাকতে পারছেন না। যা হোক, নিজের সম্মান নিজে বাঁচিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় চাইছি। আপনারা যতো খুশি, যেভাবে খুশি নেত্য করম্নন, গীত গান, কাব্য করম্নন _ কেউ প্রতিবাদ করবে না। একজন একলাইন লিখে পোস্ট করে বসে থাকুন, চন্ডীদাসের মতো, বস্নগের রজকীনিরা এসে বলবে, বাহ্ দারম্নণ লিখেছেন তো, সেই আনন্দে রাত কাবার করে দিন। এরমাঝে যদি কেউ কোনওদিন আবার বিরম্নদ্ধ মত দেয় তাহলে তাকে কতর্ৃপৰকে দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করান, কেউ তাতে আপত্তি তুলবে না, তুললেও আমি তা দেখতে পাবো না। তবে তা না দেখায় দুঃখ-কষ্ট হবে না। এসেছিলাম সৃজন-রস নিতে এবং দিতে কিন্তু শিল্প-রসকে গেঁজিয়ে তাড়ি বানিয়ে তা পান করে মাতলামোও করা যায় তা এখানে না এলে বোঝা যেতো না। মাতলামো করে নষ্ট করার মতো সময় নেই, তাই বন্ধু বিদায়, কালের যাত্রার ধ্বনি শুনায়ে বোধ হয় লাভ নেই, কারণ কানে ওদেও রসুন গোঁজা, ওরা সবাই ধর্মরথে সমারম্নঢ়। সবাইকে বিদায় আলিঙ্গন ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!
অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য
সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে
আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা
মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??
শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন