১.
অনেক রাতে বাসায় ফিরে জানালা খুলতেই সেইরকম গন্ধে টের পেলাম এক মাথা-নষ্ট গাছের প্রতিবেশী হয়ে আছি। জানালার বাইরের পাগলা কদম গাছটা নভেম্বরে আরেক দফা ফুল ফুটিয়ে বসে আছে। অবশ্য আবহাওয়ার বেসামাল অবস্থাতে এ বেচারাও সম্ভবত বেশ বিভ্রান্ত হয়ে আছে। সকাল বেলা উপর থেকে অনেক দিনের বৃষ্টি না হওয়া ধুলো জমা পাতাগুলোর মাঝে ফুলগুলো দেখতে ভাল লাগল না। বৃষ্টি ভেজা পাতা না হলে কদম ফুলগুলোর রূপ ঠিক খোলে নাহ।
২.
শরৎ মিয়া এবার বেশ ফাঁকিবাজি করে পার হতে চাচ্ছে। অবশ্য ঢাকার কুৎসিত আকাশে শরৎ দেখতে চাওয়াটাই একটা বেকুবি। তবে সন্ধা গুলো মাঝে মাঝে বেশ জল রং গোলানো আকাশ দেখাচ্ছে। আর ওই সময়ের হুটহাট হিমেল বাতাস হুদাই মনটা খারাপ করে দেয়। ইচ্ছে না থাকলেও ওই সময়টা আমার ঘরে ফেরার সময় হওয়ায় হাটতে হাটতে মাঝে মাঝেই আকাশের দিকে চোখ চলে যায়।
সময়গুলো বেশ তাড়াহুড়ো নিয়ে দৌড়ুচ্ছে। এই সেদিন বছরটা মাত্র আরম্ভ হলা আর এটুকু এসেই দশটা মাস ফুড়ুৎ!
হচ্ছেটা কি?
৩.
বাংলা-মাধ্যমে পড়া যে কারও কাছে নভেম্বর ডিসেম্বর মাসের একটা আলাদা আবেগ আছে। ফাইনাল পরীক্ষা নামের পুলসিরাত আর সেটা পার হবার আনন্দের মাস ছিলো এই দুটো মাস। শীতের সকাল বেলায় কাঁপতে কাঁপতে জেলাস্কুলের রোদ না ঢোকা সেই ক্লাসরুম গুলোতে পরীক্ষা। লেটার প্রেসে ছাপা প্রশ্নপত্রের বিশ্বাসঘাতকতা, ইকোনো-ডিএক্স কলমের থ্যাবড়ানো কালির জঘণ্য হাতের লেখা, লাল আর সাদা রঙের আমার সেই পুরানো টিনের জিওমেট্রি বক্সটা। আর পরীক্ষা শেষ হলে করব এমন জমিয়ে রাখা একগাদা কাজ (যা কখনোই আর করা হত না) আর তিন গোয়েন্দা। আহ... অন্য একটা জীবন মনে হয় এখন। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এই তিন মাস এইসব টুকরো টুকরো ছবিগুলো খুব... খুব নস্টালজিক করে দেয় মাঝে মাঝে।
আর অনেক দিন পর আলমারি থেকে বের করা গতবছরের শীতের কাপড়ে ন্যাপথলিনের সেই গন্ধ আর উঠোনের রোদে মেলে দেওয়া লেপের মার্কিন কাপড়ের সেই লাল রঙের ওম ওম ভাব... আহ!
এইসব মনে পড়লে ধ্যাত্তেরি যাইগা বলে ফিরে যাবার পুরানো ইচ্ছেটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
এইচএসসির পর যখন প্রথমবারের মত অনেক দিনের জন্য ঢাকা আসব, ভোর বেলার বাস ধরার আগে বড়পুলের মোড়ে অজয়দার সাথে দেখা হয়েছিল। "...তুমিও যাইতাছো! আর তো ফিরবানা জানি", এই কথাটার মানে তখন বুঝিনি, এখন মাঝে মাঝে বোঝার চেষ্টা করি।