somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষয় চিঠি

৩১ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিঠির মত সুন্দর কিছু হয়না।ছেলেবেলা থেকে চিঠি ব্যপারটা নিয়ে অনেক ঘটনা,অনেক স্মৃতি জমা হয়ে আছে।যে বয়স এ ছেলেমেয়েরা বানান করে লিখতে শেখে কেবল,তখন থেকেই আমার ভাইজানের কাছে চিঠি লেখার গুরু দ্বায়িত্বটা আমার কাঁধে পড়েছিলো।ভাইজান তখন ঢাকা মেডিকেল এ পড়তো।
চিঠির বিষয় বেশি কিছুনা।আব্বা ,মা কেমন আছে।আমি কেমন আছি ।পড়া কেমন হচ্ছে।এভাবেই আমার চিঠি লেখার হাতে খড়ি।
এরপর অনেকগুলো বছর ভাইবোনদের কাছে চিঠি লিখতে লিখতে একদিন বড় হলাম আমি।আপু তখন শামসুন্নাহার হলে..একবার একটা চিঠি লিখেছিলাম।অনেকটা এই রকম,"আপু ,সালাম নিও।আশাকরি ভালো আছো।আব্বা ,মা আর আমি ভালো আছি।আমার পড়ালেখা ভালো চলছে।আমাদের গরুর একটা বাছুর হয়েছে।ওর নাম দিয়েছি বল্টু।কারন ওর নাকটা অমন।ভালো থেকো।ইতি সাজি।" আপু আমাকে রাগানোর জন্য সুযোগ পেলে গড়গড় করে এই কথাগুলো বলতো।আমি মাঝে মাঝে পিছনে দৌড়াতাম,কখনো কাঁদতে শুরু করতাম।
একবার ভাইজান বাড়ি আসলো ছুটিতে।আমাকে ডাকলো কাছে।সবার সামনে বললো আমার চিঠির বিবরন।সেটা অনেকটা হলো এইরকম,"ভাইজান ,সালাম নিবেন।আশাকরি ভালো আছেন।আমরা ভালো আছি।আমি এই মাত্র ফুটবল খেলে আসলাম।আমাদের দল ২-০ গোলে জিতেছে।আজ আরনা।আমি খুব ব্যস্ত।ইতি.....এই ব্যস্ত শব্দটা নিয়ে আমাকে ধরা হলো।আমি কেনো এত ব্যষ্ত।আমি যখন ক্লাস ফাইভ এ পড়ি ।মনে হয় সেই সময় একটা চিঠি পেলাম....আমার প্রথম পত্রমিতালী আপু।হীরা আপু।সিলেট থেকে চিঠি লিখতো ।এত সুন্দর সেইসব চিঠি,চিঠির কাগজ ও দারুন থাকতো.।কখনো নীল,কখনো সাদা.......।আমাদের বাসায় যে ডাকপিয়নটা আসতো.।বাসার সামনে এসে সাইকেলের বেল বাজাতো আর নাম ধরে ডাকতো...সাজিমনি চিঠি।বাসায় থাকলে দৌড়ে আসতাম।কখনো আপু,কখনো ভাইজান,কখনো হীরা আপু,কখনো পাশের বাসার বাবুদা।হীরা আপুর কাছ থেকে আমার ঠিকানা নিয়ে একদিন চিঠি লিখলো দাদামনি।এত সুন্দর হাতের লেখা।আমি দাদামনির হাতের লেখা নকল করতাম।অনেকটুকু পেরেছিলাম।
দাদামনির চিঠিতে থাকতো বৌদিমনি আর উনার মামনির কথা............আরো পরে উনাদের ছেলে ময়ূখের কথা।দাদামনি ও সিলেটেই থাকতেন।সিলেট মেডিকেল কলেজে রেডিওথেরাপি বিভাগে কাজ করতেন।উনার নাম ছিলো প্রবীর চৌধুরী।
অনেক বছর পর ,আমি তখনে কলেজে পড়ি।ইডেনের হোষ্টেলে থাকি।ছুটিতে মির্জাপুরের কুমুদিনীতে ভাইজান /ভাবীর বাসায় যাই ।কুমুদিনী হাসপাতালে ভাইজান আর ভাবী কাজ করতো ।
দাদামনি এলেন বেড়াতে।ভাবনা বিলাসী আমি চিরদিনই,আমার লেখায় সবার সর্ম্পকে কি ধারনা করেছিলো কে জানে,সবার সাথে দেখা হয়ে মনে হয় তা পুরোপুরি খুঁজে পাননি।কি যানি কোন সে কারনে উনি ব্যথিত হয়েছিলেন।সেই যে দাদামনি গেলেন আর লেখেননি।আমার খুব মন খারাপ লাগতো।হীরা আপু দাদামনির সাথে আর যোগাযোগ থাকেনি।
যখন আমি যখন হোস্টেল এ থাকতাম.......আমাকে চিঠি লেখার তখন কেউ নেই।ভাই বোনরা সংসার নিয়ে ব্যস্ত।খুব ইচ্ছে হতো আমার ও চিঠি আসুক।কিন্তু আব্বা আর মা ছাড়া কারো চিঠি পাইনি তেমন।ইডেন পুরাতেন হোষ্টেলে আবার চিঠি খোলা হতো।বাবা মার খোলা চিঠি হাতে পেতে আমার খুব খারাপ লাগতো।যে কোন চিঠি হাতে পাবার পর যে আনন্দ আজ অনেকগুলো বছর পরবাসী জীবন কাটিয়েও সেই সব মনে পড়ে।প্রতিদিন মেইল বক্স এ চিঠি আসে.......ক্রেডিট কার্ডের বিল,ফোন আরো কত চিঠি।
ঝাপসা চোখে মা চিঠি লিখতেন আগে।প্রতি সপ্তাহে ২/৩ বার ফোন করা হয় বলে কথাও খুঁজে পাননা লেখার.......ভাইজান প্রথম দিকে লিখতো,ভাবী,বোনরা.এখন আর কেউ লেখেনা।ইমেইল ও না।মাঝে মাঝে কিছু অফ লাইন মেসেজ।
মাত্র কয়টা বছরে পৃথিবী কোথায় এগিয়ে গেলো.......মানুষের অনুভব গুলো সেকেন্ডেই পৌছে যায় অন্যখানে।ভালোবাসা,রাগ ,অনুযোগ এইসব অনুভূতি এখনো আছে...কিন্তু তা এতটাই তাৎক্ষনিক।ভাবনাটা গভীর কিনা বুঝবার আগেই অন্যখানে পৌছে যায়।
কি জানি একেই কি এগুনো বলে?

এখনো ড্রয়ারে জমে থাকা চিঠিগুলো আমাদের অনেক সুন্দর সময়কে এনে দেয়।কখনো কখনো মনে হলে ড্রয়ার খুলে মেঝেতে বসে চিঠিগুলো পড়ে আনন্দ হাসির দোলায় ভাসতে থাকি........
আর অন্যখানে পৃথিবীর কোথাও কোনখানে কোন ছেলে বা মেয়ে তার সারাক্ষনের সংগী ফোনটা হারিয়ে মন খারাপ করে থাকে...ফোনের সাথে হারিয়ে যায় অজস্র মেসেজ।ভালোবাসার ,বিরহের ,বেদনার।

(টাইপ করতে বসেছিলাম "চিঠি :নামে একটা যুগলের কিছু চিঠি ।কি জানি কেন এই এলোমেলো লেখাটা লেখা হয়ে গেলো।একান্ত ব্যক্তিগত কিছু অনুভব চলে এলো।ভাবনা প্রসূত কিছু নয়।এলোমেলোতার জন্য পড়তে ভালো না লাগলে মার্জনা চাইছি আগে ভাগেই)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৪৬
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×