অনেক দিন পর লেখতে বসলাম, সময়ের অভাবে লেখা লেখি প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। অনেকটা বাধ্যহয়ে, রাত জেগে বসে লেখছি। কারন পারিনি চোখের পানি ধরে রাখতে, কখনই পারবো না মেনে নিতে, সবাই হয়তো ভাবছেন কিসের এত দু:খ আমার, কিসের এত কষ্ট, কি মেনে নিতে পারছিনা? তা হলে শুনুন আমার কষ্টের কথা, দু:খের কথা । যার জন্য এত দু:খ ও কষ্ট সে আমার কেউনা, সে আমার রক্তের কেউ না, তারপরে ও সে আমার সবচেয়ে আপন। সে আমাদের ফেলানী. সেই ফেলানী যাকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী হায়নার দল গুলি করে হত্যা করে ছিল। আমার রক্তের কেউ না হলেও সে আমার বাংলাদেশের এক জন শিশু। সে আমার দেশের মানুষ, সে ছিল আমার দেশের সন্তান। কি অপরাধ ছিল ফেলানীর? সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়। এর বিচার চায়। কঠিণ বিচার।
কিন্তু আমাদের দেশের সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থা, রাজনীতি বিদ,বুদ্ধিজীবি ও আইন জীবিদের অবস্থা দেখে অবাক হই।কেন তারা চুপ? কেন তারা কিছুই বললেন না? তাহলে তারা কি চেখে দেখেনা? কানে শুনেন না? এরা কি এ দেশের মানুষ? এরা কি লোকালয়ে থাকেন না? নাকি এরা পরাধীন? নাকি এরা লোকালয় ছেড়ে গহীন কোন জঙ্গলে বসবাস রত? জাতি আজ তা জানতে চায়?
যে দেশের মানুষ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল, যে দেশের ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়ে ছিল স্বাধীনতার জন্য। সে স্বাধীন দেশের মানুষকে প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত রক্ষী হায়নার দল কি ভাবে হত্যা করতে পারে।
জবাব চাই সরকার, বিরোধীদল ও দেশের বিচারক গণের কাছে? নাকি আপনারা উত্তর দিতে ভুলে গেছেন? ভুলে গেছেন আমরা স্বাধীন। আপনারা কি ঘুমিয়ে আছেন? যদি ঘুমিয়ে থাকেনতাহলে ঘুম থেকে জেগে উঠুন।
সেই শিশুটির কি অপরাধ ছিল????
তার অপরাধ সে বাংলাদেশে জন্মেছিল।
তার অপরাধ সে সীমান্তবর্তী গ্রামে জন্মেছিল।
তার অপরাধ সে সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে ছিল।
কিন্তু বিএসএফ যে অপরাধ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। বিএসএফ একের পর এক এ জাতীয় কর্ম করে যাচ্ছে অথচ আমাদের সরকার,বিরোধীদল সহ সবাই চুপকরে আছেন কেন তা বোধগোম্য নয়!!!!! কোন বড় ঘটনা ঘটলে সরকারের এক বা একাধিক মন্ত্রি দায়সারা ভাবে মিডিয়ার সামনে কিছু বলেই শেষ। এর কোন প্রতিকার হচ্ছে না। ফেলানীকে হত্যার পর কেন, মহামান্য রাষ্ট্রপ্রধান কিছু বললেন না? কেন প্রধান মন্ত্রী কিছু বললেন না? কেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত কে বঙ্গভবনে বা প্রধান মন্ত্রির কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হলোনা? বাংলাদেশের সরকার প্রধান কেন ভারতীয় সরকার প্রধানকে ফোন করে নাই? বা তার কাছে এর প্রতিকার চেয়ে মেইল বা ফেক্স বার্তা পাঠায়নি? কেন বিরোধীদল হরতাল ডাকে নি? কেন ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করার জন্য রাস্তায় নামে নি? কেন রৌমারীর উদ্দেশ্যে লংমার্চ করেনি? দেশের সর্বচ্চো আদালত কেন স্বপ্রনোদিত হয়ে সরকারের প্রতি রুল জারী করেনি? এটা জাতি জানতে চায়?
ফেলানী নামের শিশুটি সাধারণ মানুষের সন্তান বলেই কি এর কোন প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, প্রতিকার হয়নি? আজ ফেলানীর জায়গায় যদি প্রধান মন্ত্রীর ছেলে-মেয়ে হতো, তাহলে আজ সীমান্তে সেনা সমাবেশ সহ তিন বাহিনী প্রধানকে ডেকে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে বলতেন। না হয় জাতিসংঘে এর নালিশ করতেন। আর্ন্তজাতিক আদালতে এর বিচার চাইতেন। ঠিক তেমনি ভাবে বিরোধী দলীয় নেত্রীর ছেলে বা তার পরিবারের কেউ যদি আজ এ ঘটনার স্বীকার হতেন, তা হলে দেশে হরতাল, অবোরোধ, জ্বালাও পোড়াও , গাড়ী ভাংচুর সহ ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও, ভারতের উদ্দেশ্যে লংমার্চ এবং সরকার পতনের আন্দোলনে যেতেন। কিন্তু ফেলানীর জন্য কারো কিছু যায় আসে না। কারন সে সাধারন মানুষের সন্তান।
যে দেশে সাধারন কিছু ঘটনার জন্য আন্দোলন করে, হরতাল করে, দূনীতির মামলার জন্য আন্দোলন করে। কিন্তু দু:খের বিষয়, এত নেক্কার জনক ঘট না যা দেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি স্বরুপ। এ আচরনের পরেও দেশের গুরুত্বপূর্ন সকল মহল কেন চুপ তা জানতে ইচ্ছে করে???????
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আমার আরো জানতে ইচ্ছে করে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে আপনি কেন চুপ? আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন তাহলে কি এর প্রতিবাদ ও প্রতিকার না করে ঘুমাতেন? আপনি সেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে কেন চুপ? আর মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রীকে বলছি, আপনি এক জন মুক্তিযুদ্ধার স্ত্রী, আপনার স্বামী ছিলেন দেশের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান, আপনার স্বামী জীবিত থাকলে কি এর প্রতিবাদ বা প্রতিকারের কোন ব্যবস্তা করতেন না ? কিন্তু আপনি কেন চুপ? আপনিওতো দেশের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন। আজ যদি এরশাদ ক্ষমতায় থাকতো তা হলে কি এর প্রতিবাদ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করতেন না? কিন্তু এখন কেন চুপ?
তা হলে কি আমরা বাঘের জাতি থেকে বিড়ালের জাতিতে পরিনত হয়েছি? জানতে ইচ্ছে করে আমরা কি আসলে স্বাধীন হয়েছি? নাকি স্বাধীনতার জন্য আবার একটা মুক্তি যুদ্ধ করতে হবে???? সন্দেহ হয় আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ক্ষমতা কমে গেল কি? সেনাবাহিনীর কি অস্ত্রের অভাব ও সৈনিকে অভাব ? যদি ভেবে থাকেন সৈনিকের অভাব তা হলে বলবো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সৈনিকের দেশ বাংলাদেশ। কারন এদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৬ কোটিই সৈনিক। যার প্রমান ১৯৭১ সনে পৃথিবীর মানুষ পেয়েছে। আর যদি বলেন অস্ত্রের অভাব, তা হলে বলবো অস্ত্র তৈরী করেন, ক্রয় করেন। টাকা এ দেশের মানুষ দিবে। তিন বেলার জায়গায় এক বেলা খেয়ে, দু-বেলা খাবারের পয়সা দিবে অস্ত্র কিনতে। দেশে তৈরী করবেন? জনবল ও মেধা কোনটারই অভাব নেই বাংলাদেশে।
তারপরও বলছি দেরীতে হলেও আপনারা জেগে উঠুন আর ঘুমিয়ে থাকবেননা। আমাদের অধিকার আমাদেরকেই আদায় করে নিতে হবে। আমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। স্বাধীন ভাবে থাকতে চাই। আমরা নেপাল, ভুটানের মতো হতে চাইনা। আমরা বীরের জাতি, আমরা বীরের মতো বাঁচতে চাই। কা-পুরুষের মতো বাঁচতে চাইনা।
একটি শিশু যেমন তার মায়ের কোলে সবচেয়ে নিরাপদ, ঠিক তেমন একটি স্বাধীন দেশ ও প্রতিটি মানুষের জন্য মায়ের কোলের মতো নিরাপদ। একটা স্বাধীন দেশেরসীমানা রেখার ভীতরে তার সকল নাগরিক সমান নিরাপদ।
সর্বশেষ আমি আশা করবো সাংবাদিকরা ভারতের প্রধান মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় তার কাছে জানতে চাইবেন, কোন বৎসর, মাস, দিন, এবং কতোটার পর থেকে সীমান্তে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের বাংলাদেশী মানুষ হত্যা বন্ধ হবে।
আর যদি তা বন্ধ না হয় তা হলে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ , আপনারা ও বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে অনুমতি দিন যাতে একটা গুলির পরিবর্তে ১০টা গুলি ছুড়ে। আর একজন বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করলে যাতে ১০টা বিএসএফ মারে।সকলকে একটি কথা স্বরণ করিয়ে দেই, বাংলাদেশের মানুষ পারেনা এমন কোন কাজ পৃথিবীতে নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:২৪