somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিস্ময়ের বিস্ময় : বাবুই পাখির গল্পকথা !!

২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

" বাবুই পাখিরে ডাকি
বলিছে চড়াই,,
কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের
বড়াই,, আমি থাকি মহাসুখে
অট্টালিকা পরে,, তুমি কত কষ্ট পাও
রোদ বৃষ্টি ঝড়ে,, বাবুই হাসিয়া কহে,
সন্দেহ কি তায়? কষ্ট পাই তবু থাকি
নিজেরও বাসায়,, পাকা হোক তবু ভাই
পরের ও বাসা,, নিজ হাতে গড়া মোর
কাঁচা ঘর খাসা !! " কবি রজনীকান্ত
সেনের "স্বাধীনতার সুখ" কবিতাটি
মানবজাতির মানবিকতার বিশেষ
একটি দিক তুলে ধরে |. . . . . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
এই কবিতাটি আজও মানুষের মুখে
মুখে উচ্চারিত হলেও বাবুই পাখি
এবং তার সেই শৈল্পিক বাসা আজ
স্মৃতির অন্তরালে | এক কথায়
বলতে গেলে সোনার হরিণের মত |
আজ থেকে প্রায় ১৫/২০ বছর
আগেও গ্রামেগন্জ্ঞে এই পাখির
বাসা খুব সহজেই চোখে পড়ত |
বিশাল লম্বা তালগাছ, নারিকেল গাছ
অথবা খেঁজুর গাছের মাথায় যখন
বাবুই পাখির বাসা বাতাসে দোল
খেতে দেখা যায় তখন তা সত্যিই
আমাদের অভিভূত করে তোলে | মনে
হাজারো প্রশ্নের উঁকি দেয় | যুগে
যুগে কালে কালে বাবুই পাখির বাসা
মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে, সাহায্য
করেছে স্বাবলম্বী হতে |. . . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বাবুই পাখি দেখতে অনেকটা চড়ুই
পাখির মত | গায়ের রং হলুদ বাদামী
বর্ণের তবে প্রজননের সময় রং এর
পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় | সারা
বিশ্বে ১১৭ টি প্রজাতি পাওয়া
গেলেও আমাদের দেশে মাত্র ৩টি
প্রজাতি পাওয়া যায় | এই পাখি খুবই
পরিশ্রমী | তার শক্ত
ঠোঁট দিয়ে সংগ্রহ করে বেড়ায়
নলখাগড়া, হোগলা, খড়কুঠো,
বিভিন্ন ধরনের লতাপাতা যেগুলো
দিয়ে সুনিপুণ ভাবে তার বাসা তৈরির
কাজ সম্পন্ন করে থাকে | তবে
বর্তমানে নলখাগড়া আর হোগলা
আমাদের দেশে আর আগের মত নেই
যার ফলে বাবুই পাখির বাসাও আজ
বিলুপ্তির পথে | অনেকেই এই
পাখিকে তাঁতী পাখি
(weaver bird) এবং বুনে পাখিও বলে
থাকেন | বাবুই পাখির বাসা এত্তই
শক্ত আর মজবুত হয় যে তা রোদ,
বৃষ্টি, ঝড় সবকিছুকেই হার মানায় |
এমনকি প্রতিটি খড়কুঠো আর
লতাপাতা দিয়ে বাসাটি এমন শক্ত
করে তৈরি করা হয় যে তা টেনেও
ছেঁড়া যায় না |. . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বাবুই পাখির কিছু চমৎকার আর
বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য রয়েছে | মূলত
পুরুষ বাবুই পাখিই বাসা তৈরি করে
থাকে | সেই বাসাতে যখন স্ত্রী
বাবুই ডিম পাড়ে আর তা ফুটে যখন
বাচ্চা বাবুইয়ের জন্ম হয় তখন
তাদেরকে পরম আদরে বড় করে
তোলা হয় | একটা নির্দিষ্ট সময়ে
বাচ্চা বাবুইকে বাসার উপর থেকে
নিচে ফেলা দেয় তাদের মা-বাবা |
বাচ্চা বাবুই এই ঘটনার জন্য
কখনোই প্রস্তুত থাকে নাহ | ফলে
যে বাবুই গুলো একটু বোকা ধরনের
হয় তারা বুঝতে পারে না যে তাদের
এখন উড়তে হবে | ফলে তাদের
অনেকের জীবনের ইতি সেখানেই
হয় ! অন্যদিকে যারা একটু চালাক
তারা যখন উড়ে গিয়ে পুনরায় তাদের
বাসায়
ফিরে যেতে চায় তখন তাদের মা-বাবা
তাদেরকে আর বাসায় প্রবেশের
সুযোগ না দিয়েই তাড়িয়ে
দেয় | তখন ঐ বাচ্চা বাবুই বুঝতে
পারে যে তারও এখন বাসা বানানোর
সময় এসেছে | বাসা বানানোর এই
কৌশলটি বাবুইদের একটি জিনগত
কারণ | আবার রাতের বেলায় ঘর
আলোকিত রাখতে বাবুই পাখিরা
জোনাকি
পোকা এনে ধরে রাখে আর সকাল
বেলায়
তাদেরকে ছেড়ে দেয় |. . . . . . . . . . . . .
. . .
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বাবুই পাখির বাসা নির্মাণ যেমন
আমাদেরকে স্বাবলম্বী হওয়ার
ইঙ্গিত প্রদান করে | অন্যদিকে
বাবুইকে বাসা থেকে খুব অল্প বয়সে
বিতাড়িত করার ব্যাপারটিও খুবই
গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে |
আমরা যখন হঠাৎ কোন বড় রকমের
অপ্রীতিকর পরিবেশে পড়ে যাই তখন
যারা দুর্বল প্রকৃতির তারা খুব
সহজেই হতাশার সাগরে ডুবে যাই !
আর যারা সবল তারা আবার নতুন
উদ্দামে নতুন প্রত্যয়ে ঘুরে দাঁড়াই !
এইখানে এই অপ্রীতিকর পরিবেশটি
হল বাবুই পাখির মা-বাবা আর বোকা
বাবুই হল সেই সব দুর্বল প্রকৃতির
মানুষ এবং চালাক বাবুই হল সবল
প্রকৃতির মানুষ | তাই এই ছোট্ট
সুন্দর পাখিটিকে এবং তার শৈল্পিক
বাসাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা
করতে হবে | কেননা একমাত্র বাবুই
পাখির গল্পকথা থেকেই আমরা
জীবনের একটি চরম প্রিয় ও অপ্রিয়
শিক্ষা খুব সহজেই গ্রহণ করতে
পারি !!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরাধের সেকাল ও একাল

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

সেকাল
--------------------------------------------------------
স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হেনরি বেভারিজ ছিলেন বৃটিশ-ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য৷বেভারিজ ১৮৭০ সালের মার্চ হতে ১৮৭১ সালের মার্চ এবং ১৮৭১ সালের জুন থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×