somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে গল্পটা বড় হতে পারত !

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






অফিসের কাজ শেষে, চট্টগ্রাম থেকে ফিরল শুভ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার- টেলিকমিউনিকেশান সেক্টরে কাজ করে। গত তিনদিনে চার পাচটা সাইট ভিজিটে বেশ ধকল গেছে। তারপর কুয়াশায়, রাতের বাসে ফিরতে ফিরতে দেরিই হয়ে গেল। ভলভো এসি কোচ যখন রাজারবাগ আসল তখন কাটায় কাটায় সকাল সাড়ে ন'টা!

আশে পাশে সিএনজি একটাও মিরপুরের দিকে যাবে না! এই হয়েছে এক জ্বালা, আপনি যেদিকে যাবেন-সিএনজি সেদিক ছাড়া আর বাকি সবদিকে যাবে! তীক্ষ্ণতায় মন ভরে উঠে। শুভ’র বাসা শ্যাওড়াপাড়া। রাজারবাগ থেকে খুব দূরে না- কিন্তু হতচ্ছাড়া সব সিএনজি ড্রাইভার ক্যান যে যেতে রাজি হচ্ছেনা! অগত্যা সে ঠিক করল- বাসেই যাবে। সাথে ব্যাকপ্যাক আর ছোট্ট একটা লাগেজ। বাস কাউন্টার থেকে শুভ রিকশায় চড়ে বসল। গন্তব্য- মালিবাগ মোড়।


আজ শুক্রবার- রাস্তায় মানুষজনের ভীড় একটু কম মনে হচ্ছে! মালিবাগ মোড়ে রিকশা ছেড়ে দিয়ে, সে রাস্তা পাড় হল। তারপর সামনে স্বকল্প পরিবহনের কাউন্টার এর দিকে হাটা। কাউন্টারে পৌছে, টিকিট কাটার জন্যে পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগ বের করে টাকা নিতে গিয়েই অঘটনটা ঘটল! হাত ফসকে মানিব্যাগ পড়ে যাচ্ছে- রিফ্লেক্স বশত হাত তড়িৎগতিতে মানিব্যাগ ধরে ফেললেও কিছু কয়েন, ভিজিটিং কার্ড, আরও কিছু আবলতাবল কাগজ সব ধুলায় লুটোপুটি!

বিড়বিড় করে গাল বকে শুভ যখন কয়েন আর কাগজ তুলার জন্যে ঝুকল, তখন দুচোখে অপার বিস্ময় নিয়ে সে দেখে, পাশে দাঁড়ানো অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়েটাও ঝুকে বালি থেকে কয়েন উঠাচ্ছে!

চমক তখনো বাকি ছিল! মেয়েটা কয়েনগুলা উঠিয়ে হাতের তালুতে নিয়ে দুই হাতে ঘষে আর মুখে ফু’দিয়ে ধুলো পরিস্কার করে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ‘এই নিন!’
শুভ কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হাত বাড়াল। মেয়েটা তার তালুতে কয়েনগুলো ঢেলে দিয়ে বলল,
--- ‘সাবধানে, থাকবেন, কেমন!’

আমতা আমতা গলায় শুভ’র প্রতি উত্তর, ‘জী...অঅ.অনেক ধন্যবাদ’; আর ঝর্ণাধারা প্রবাহের সুমিষ্ট শব্দের মত মেয়েটার হাসি।

বেসুরো হর্ন বাজিয়ে স্বকল্প এসে থামে। সবাই তাড়াহুড়া করে বাসে উঠে- মেয়েটাও! শুভ টিকিট নিয়ে বাসে উঠে পড়ে-কোন সিট ফাকা নেই। সামনের ইঞ্জিনের ঢাকনার পাশে লাগেজ রেখে পাশের রড ধরে সে দাড়ায়। মেয়েটা অনতিদূরে! মাঝে মাঝেই চার চোখের সাক্ষাৎ হয়- মেয়েটার ঠোটের কোনে কি মুচকি হাসি!? মসৃণ বাহু, লম্বা চুল, কাজল দেয়া চোখ, ওখানে সারাক্ষণ কেমন যেন দুষ্টামি খেলা করছে!
এই কি সেই মায়াবতী, যে মাঝে মাঝেই তার স্বপ্নে হানা দেয়!

শুক্রবারের প্রায় ফাকা রাস্তায় বীরদর্পে স্বকল্প ছোটে। হেলপার টিকিট ছিড়তে আসে। চোখের কোনে ধরা পরে- গন্তব্য কাজীপাড়া! শুভ ভাবে-
‘কথা বোলব নাকি! কি মনে করবে? হয়তো ভাববে কি রকম ছেলেটা! একটু হেল্প করলাম, আর এখন প্রশয় পেয়ে গায়েপড়ে গল্প করতে এসেছে!কিন্তু ঠোটের কোনায় যে হাসি দেখলাম! আরে ধুর বোকা, হাসবে না;তখন কি রকম হাবলা হয়ে গেছিলি! কথা বলি, কি ক্ষতি তাতে! আশে পাশের যাত্রীরা কি মনে করবে! ধুর ব্যাটা... ছ্যাবলা নাকি তুই!’

রাস্তা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। বাস এখন ফার্মগেট হয়ে আগারগাও এর পথে। ‘আচ্ছা এক কাজ করলে কেমন হয়? আমিও কাজীপাড়া চলে যাই; শ্যাওড়াপাড়ার পরের স্টপেজইতো! ফেরার সময় নাহয় রিকশা নিয়ে নেব!’
- শুভ মাথায় ভাবনা খেলে যায়।
‘কাজী পাড়ায় নেমেই কথা বলি! কই অনেকক্ষণ হল মেয়েটা মনে হয় তাকাচ্ছে না!
কই নাতো, এইযে, এইযে... এইমাত্র আবার তাকালো !!! সাথে সেই মুচকি হাসি’


বাস তালতলা পার হয়। শুভ’র মনে ভাবনা অবিরাম চলছেই,
‘নাহ, এটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না! মেয়েটা কি সুন্দর ব্যবহার করল, আর আমি তাকে আবার আমার মায়াবতী বানিয়ে নিয়েছি! মায়াবতীর তো হাতভর্তি চুড়ি। আচ্ছা, এর হাতেও কি চুড়ি আছে? কয়েন দেয়ার সময় এমন হতবিহবল ছিলাম যে মনে করতে পারছি না! এখান থেকে অবশ্য একটা হাত দেখা যাচ্ছে, কিন্তু কোন চুড়ি নাই /:)! আচ্ছা, থাক নেমেই যাই শ্যাওড়াপাড়া।’

লাগেজ নিয়ে শ্যাওড়াপাড়া নেমে বাসের জানালায় তাকাতেই, মেয়েটার অবাক চোখ! দু’সেকেন্ডের এই উপলব্ধির মাঝেই বেসুরো হর্ন দিতে দিতে স্বকল্পের ফের ছুটে চলা! শুভ’র দিকে হাত উচিয়ে দুচোখে মায়াঝরা দৃষ্টির অপলক চাহনি। আর কি আশ্চর্য! মেয়েটার হাতভর্তি চুড়ি!!!


১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×