somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই সময়!

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তো সবই শেষ হয়! আমাদের হাহা হিহি’র দিন থেমে থাকে না! অথচ, ঠিক নিয়ম করে জ্যোৎস্না আসে, উথাল পাথালে সব ভাসায়ে যায়! কোথাও কোথাও আকাশ ঠিক ঠিক নিচে নেমে আসে। এতটাই নিচে যে, হাত বাড়ালেই তারাগুলো ঠিক ছুয়ে দেয়া যায়! হাটতে হাটতে দেখা যায়, আকাশও আমার সঙ্গী! বোকাটা আমার একাকীত্বে সঙ্গ দেয়, কী আশ্চর্য! ওর এই আন্তরিকতায় আমার কখনো আর বলা হয়ে উঠে না, তুই আমার সাথে চলতে থাকলে ওই সীমান্তে-যেখানে তোর অবস্থান আমার হাতের নাগালে; ওখানে আমার কোনদিনই পৌছানো হবে না!
হলুদ সোডিয়াম এর আলোয় ঢাকা নতুন শহরের সন্ধান পেলাম। এখানে সন্ধ্যা নামে ঝুপ করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই কি অভিমানে টুপ করে লেকের পানিতে মিলিয়ে যায়! তারপর, হালকা ধোঁয়াশা মাখা হলুদ আলোয় রাত বাড়ে! এখানের মানুষগুলাও হোমো সেপিয়েন্স, আমাদের মতই! ঘুরে ফিরে, কাজ করে, আড্ডা দেয়, সপ্তাহান্তে মাতাল হয়! মাতাল হয়ে সাত বছরের পুরাতন প্রেমিকাকে টেক্সট করে; যে কিনা দুই বছর আগেই, কোন কারন ছাড়াই নাকি ছেড়ে গেছে! সাধ আর সাধ্যের টানাপোড়ন এদের মধ্যেও, খালি প্রকাশ ভিন্ন!
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই আমার মাইনাস ডাইওপ্টারের চশমা রেখেই এলোমেলো পায়ে বেরিয়ে পরি! ধোঁয়াশা মাখা হলুদ আলোর রাতে, দুরের ঝাপসা অবয়ব কেমন মায়া ছড়ানো মনে হয়- অদ্ভুত মাদকাময়! কুয়াশায় নাকি ১০ পার্সেন্ট এলকোহল আছে! এই হাড়কাপানো শীতে, হলুদ আলোর রাস্তায়- ঝাপসা চোখে হাটতে হাটতেই ঝিম ধরে আসে! পার্সেন্ট জানিনা, তবে অতে ঠিক নেশা আছে! মাঝে মাঝে হুটহাট দুএকজন, ‘এক্সকিউজ মি, ডু ইউ হ্যাভ অ্যা স্মোক টু স্পেয়ার?’ বলেই কি অধীর আগ্রহে তাকায়!তারপর হতাশ হয়ে ঘাড় নাড়তে নাড়তে চলে যায়। অথবা, হাউ ডু ইউ ডু বলেই কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই গটগট হেটে যায়! চলন্ত গাড়ি থেকে ‘হাই হানি’ও শুনেছিলাম একদিন!
সোডিয়াম আলোর রাস্তায় রাত বাড়ে। পাতাহীন গাছগুলাতে বাতাস আছড়ে পড়লে কি রকম শীষ দেয়ার মত শব্দ ভেসে বেড়ায়। শোঁ শোঁ শব্দে মিলিয়ে যাওয়ার আগে, বুকের মধ্যে একবার ঘুরপাক খায়! তারপর অনেকক্ষণ কানে ঝিম লেগে থাকে!
মঝে একদিন আইস ফিশিং এ গেলাম। সে মস্ত আয়োজনের ব্যাপার! ট্রাক ভর্তি মালামাল নিয়ে, টোপ কেনার দোকানে ঢু মেরে আর গাড়িতে কান্ট্রি মিউজিক বাজিয়ে আমাদের মাছ ধরার যাত্রা! পথের ধারে মাঝে মাঝেই এভারগ্রীন ট্রি’র সারি- এদের পাতা কখনোই ঝরে না! চোখের আরামদায়ক সবুজ রং দেখতে বেশ- তাও আবার সাদার ব্যাকগ্রাউন্ডে!
দীর্ঘক্ষণের যাত্রায় একসময় গন্তব্যের দেখা মেলে। স্যাট করে গাড়ি লেকে! পানি জমে পুরু বরফের আস্তরের উপরদিয়েই গাড়ী চলে! কি আশ্চর্য! বড়শি ফেলার জন্যে সাথে নিয়ে আসা ব্যাটারীচালিত মোটর আর টারবাইন আকৃতির ড্রিলার দিয়ে বৃত্তাকার গর্ত শেষে পানির দেখা মিলতে প্রায় আড়াই ফুট! তার নীচে, এই ভয়াবহ ঠাণ্ডায়ও মাছের অবাধ বিচরণ। প্রকৃতির কি খেয়াল!
প্যারা হচ্ছে ফেরার সময়। আয়োজনের সকল আইটেম একএক করে আবার গাড়িতে তোল! ঐযে কন্টেইনারটা, অইখানে গ্যাসের সিলিন্ডার, গোটানো তাবু, পরিত্যাক্ত ময়লা, ক্যান হাবিজাবি সব দেখে দেখে উঠাও! তার উপর বিস্তীর্ণ ফাকা লেকে হিম শীতল ঠাণ্ডায় বিষফোড়া- বাতাস! একসময় তাও শেষ হয়- আমাদের ঠাণ্ডায় জমে থাকা সময়ও থেমে থাকে না! একসময় আবার পরিচিত চারদেয়াল!
আরেকদিন, নতুন একটা খেলার দেখা মিলল! আগে শান্ত টলটলে পানিতে, পাতলা নুড়ি পানির অনুভূমিক তল বরাবর তেছরা করে ছুড়ে দিয়ে, দুই,তিন কিংবা কপাল ভাল হলে পাচ ছয় বার ড্রপ খেতে খেতে একসময় তলিয়ে যাওয়ার খেলা, বর্ষায় প্রায় নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল। ব্যাঙ্গ মারা বলে ডাকতাম! ঐদিন ডাউনটাউনের পাশের জমে যাওয়া ক্যানাল লেকে, বরফের বড় খন্ড ছুড়ে মারতে মারতে কঠিন মজা পেলাম। ধুব্ শব্দে আছরে পরে, খণ্ড খণ্ড টুকরো বরফ, পিচ্ছল সারফেসে স্কিড করে বহুদূর যেতে যেতে সেই শৈশবের কথাই স্মৃতিতে জাগিয়ে দিয়েছে!
এখানকার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য- তুষারপাত। কি মিহি শ্বেত শুভ্র, তারকাকৃতি নিয়ে নিঃশব্দে ঝড়ে পড়ে! চারপাশে তখন সাদার উড়ো উড়ি। একটা দৃশ্য দেখার জন্যে অপেক্ষায় আছি-উথাল পাথাল জোস্নায় ভেসে যাওয়া রাতে, শুভ্র তুষারপাত! আর সাথে যদি জমে যাওয়া সাদা লেক থাকে!

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×