বর্তমান বিশ্বে স্টেম সেল চিকিৎসায় যুগান্তরী সাফল্য আমাদের আশান্বিত করেছে, তবে সঠিক চিকিৎসা ও ব্যয়ভার এখনো চিন্তার বিষয় হয়ে থাকল,
উন্নত বিশ্বে স্টেম সেল চিকিৎসা ব্যবস্হা আরও বিস্তৃত, যেমন : -
..................................................................................................................................................
PARKINSON’S DISEASE,
CHRONIC KIDNEY DISEASE (CKD)
TREATMENT FOR ALZHEIMER OR DEMENTIA,
LIVER CIRRHOSIS DISEASE
MACULAR DEGENERATION
ERECTILE DYSFUNCTION (ED) TREATMENT
SPINAL CORD TREATMENT
MUSCULAR DYSTROPHY –
...................................................................................................................................................
LASER এর বিস্তৃত রুপ হলো Light Amplification by Stimulated,Emission of Radiation.
আলোক রশ্মির সাধারণ ধর্ম হলো এটি তার উৎস থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং দূরত্ব অনুযায়ী তার শক্তি কমে যায়। কিন্তু লেজার পদ্ধতিতে আলোক রশ্মিকে নির্দিষ্ট দিকে পরিচালিত করে তার শক্তিকে বহুগুণিত করা যায়। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে এ পদ্ধতির সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে ইস্পাতের সুকঠিন স্তর কর্তন কিংবা সুক্ষ কোন স্নায়ু অপারেশনসহ বহু দুঃসাধ্য কাজ এর দ্বারা সম্ভব হয়েছে।
স্টেম সেল (সার্জারি) কি ?
মাতা এবং পিতার কাছ থেকে আগত দুটি প্রজনন কোষের সম্মিলনে সৃষ্ট একটি নিষিক্ত কোষ বিভাজিত হয়ে লক্ষ লক্ষ কোষের সমন্বয়ে গঠিত হয় মানব ভ্রুণ। এ ভ্রুণ গঠনের সূচনায় সীমিত সংখ্যক কোষ এক্টোডার্ম, মেজোডার্ম এবং মেজোডার্ম নামক তিনটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে। এ কোষগুলোকে স্টেমসেল বলা হয়। নির্দিষ্ট ধরণের স্টেম সেল থেকেই শরীরের বিভিন্ন অংগ প্রত্যংগসমূহ গঠিত হয়ে থাকে। ভ্রুনটি পূর্ণভাবে বিকশিত হবার পর এ স্টেমসেলগুলোর আর কোন কার্যকরিতা থাকেনা। তবে, পূর্ণবয়স্ক মানুষের ত্বকের নীচে চর্বির সাথে এবং শরীরের আরো কোন কোন স্থানে কিছু মেজোডার্মাল স্টেমসেল সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এসব সেলকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় উদ্দীপ্ত করে শরীরের নির্দিষ্ট অংগে স্থাপন করা হলে সেগুলো দ্রুত বর্ধিত হয়ে অকেজো অংগের মেরামত, প্রতিস্থাপন, পুণর্গঠন ও ক্ষত নিরাময় করে থাকে। এতে সংশ্লিষ্ট অংগটি তার কার্যক্ষমতা ফিরে পায়। অাধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই প্রযুক্তির নাম হলো স্টেমসেল চিকিৎসা।
এই পর্বে “Chronic Kidney Disease” সংক্ষেপে (CKD) বা কিডনী বৈকল্য সর্ম্পকে সকলের
জানার জন্য পোষ্ট করা হলো,
মানবদেহের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনী। দৈনন্দিন কার্য্যাবলীতে দেহের অভ্যন্তরে সৃষ্ট বর্জ্যপদার্থসমূহ
রক্তবাহিত হয়ে কিডনীর মাধ্যমেই নিষ্কাশিত হয় এবং প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয় ।
এছাড়া কিডনীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হচ্ছেঃ
• রক্তচাপ (Blood Pressure) নিয়ন্ত্রণ করা
• শরীরের পানির ভারসাম্য (Water Balance) রক্ষা করা
• লোহিত রক্ত কণিকা (RBC) তৈরীকে উদ্দীপ্ত করা
• শরীরের লবন ও খনিজ পদার্থের (Electrolytes and minerals) ভারসাম্য রক্ষা করা
• শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অম্ল - ক্ষার ভারসাম্য (Acid-Base balance) রক্ষা করা ।
এক কথায় বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন ছাড়াও কিডনী দেহের আভ্যন্তরীন পরিবেশগত ভারসাম্য (Homeostasis) রক্ষায় সার্বিক ভূমিকা পালন করে থাকে। এমতাবস্থায় কিডনী বিকল হয়ে যাওয়া মানে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া । কিডনীর নিজস্ব রোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বিভিন্ন ঔষধের কারণে (Drug induced) বা ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এবং আরও নানাবিধ রোগের জটিলতায় কিডনীর কার্যক্ষমতা ক্রমশঃ হ্রাস পেতে থাকে, একসময় কিডনী সম্পূর্ণরূপে অকেজো (ESRD-End stage renal failure) হয়ে যায় ।
চিকিৎসার মাধ্যমে প্রারম্ভিক / প্রাথমিক রোগসমূহ নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্রমবর্ধমান কিডনী বিকলতার কোন প্রত্যক্ষ চিকিৎসা নেই। অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অসুস্থ্য বা বিকল কিডনিকে সুস্থ্য এবং কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব নয়, বরং সেক্ষেত্রে সম্পূরক পদ্ধতিতে কিডনির কার্যাবলী চালিয়ে নেয়া হয়। যেমন, লোহিত রক্তকণিকার জন্য ইরাইথ্রোপয়টিন ও রক্ত সঞ্চালন, খনিজ পদার্থের ঘাটতি মিটাতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদি, অম্ল - ক্ষার ভারসাম্যহীনতায় বাইকার্বোনেট ইত্যাদি বাহির হতে সরবরাহ করা হয় এবং সর্বোপরি বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ডায়ালাইসিস করা হয়ে থাকে।
এ অবস্থায় অকেজো কিডনীর কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক আবিষ্কার স্টেম সেল ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর নিজস্ব অস্থি-মজ্জা (Bone marrow) অথবা চর্বি (Adipose tissue) থেকে সংগৃহিত স্টেম সেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে অস্থি-মজ্জার চেয়ে চর্বি থেকে সংগৃহীত স্টেম সেলের ব্যবহার অনেক বেশি কার্যকর । এতে স্টেম সেল সহজলভ্য হয় এবং দূষণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিডনীর চিকিৎসায় চর্বির ভিতরে সুপ্ত অবস্থা থাকা মেসেনকাইম্যাল স্টেম সেল (Mesenchymal stem cell-MSC) ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত আশাপ্রদ ফল পাওয়া গেছে।
Specialized Hospital Concept : স্টেম সেল মানবদেহের একটি আদি কোষ-যা ভ্রুণের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে এবং এই কোষগুলো থেকেই পর্যায়ক্রমে দেহের অন্যান্য সব ধরনের কোষ , কলা (Tissue) ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ (Organ) তৈরী হয়। স্টেম সেল গুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে এরা বিভাজনের মাধ্যমে অবিকল নিজের মতো নতুন কোষ তৈরী করতে পারে, আবার অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের সম্পূর্ণ নতুন প্রকৃতির কোষও তৈরী করতে সক্ষম, আবার সুদীর্ঘমেয়াদে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনে যথাযথ উদ্দীপনার মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। রোগাক্রান্ত বা মৃতপ্রায় কোষের মেরামত বা প্রতিস্থাপনের জন্য সুপ্ত স্টেম সেলকে সহজেই পৃথক করা যায়। পৃথকীকৃত মেজোডার্মাল স্টেম সেল উদ্দীপ্ত করা হলে তা অবস্থানভেদে পেশী, হাড়, তরুণস্থি, হৃৎপিন্ড ও রক্তনালী, স্নায়ুকোষ, ফুসফুস, কিডনী বা লিভারের মতো বিশেষ ধরনের কোনো কোষে রূপান্তরিত হয়ে রোগাক্রান্ত বা মৃতপ্রায় কোষের মেরামত বা প্রতিস্থাপন করতে পারে । স্টেম সেল সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে- ভ্রুনীয় (Embryonic stem cell) স্টেম সেল এবং পরিণত স্টেম সেল (Adult stem cell)। অস্থিমজ্জা , হাড়, চর্বি এবং মাংসপেশীসহ মানবদেহের বিভিন্ন টিস্যু থেকে পরিণত স্টেম সেল পাওয়া যায়।
এ ধরনের স্টেম সেল শরীরের অকেজো হয়ে যাওয়া অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার, রক্তনালী সচল করা, ক্ষত সারানো, ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু পুনরুজ্জীবিত করা, স্বাস্থ্যকর নাইট্রিক অক্সাইড রিসেপটর ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা উদ্ভাবন করছেন। দুরারোগ্য বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী, ব্যয়বহুল ও কষ্টদায়ক চিকিৎসার পরিবর্তে স্টেম সেল বেজড চিকিৎসা বর্তমানে সাফল্যমন্ডিত ও প্রমাণিত ।
কিডনীর দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার প্রতিকারের ক্ষেত্রেও স্টেম সেল চিকিৎসা কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত। এই পদ্ধতি কিডনীর অকেজো কোষকে সক্রিয় করে, নতুন কোষ উৎপন্ন করে, নতুন করে কোষের মৃত্যু রোধ করে এবং নিজস্ব স্টেম সেল গুলোকে উদ্দীপ্ত করে কিডনীর ক্ষত সারিয়ে তোলে। বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় (Clinical trial) ইতোমধ্যেই এই পদ্ধতির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া এই চিকিৎসা পদ্ধতির সফল ব্যবহার নিয়ে অসংখ্য ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ভাবে অবশ করে (Local Anesthesia) পেটের, উরুর অথবা মেরুদন্ডের পার্শ্ববর্তী চামড়ার নীচের চর্বি সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে এই চর্বি প্রক্রিয়াকরনের মাধ্যমে পরিণত স্টেমসেল (Adult stem cell) সংগ্রহ করা হয় যা শিরাপথে বা কিডনীর নিজস্ব ধমনী (Renal Artery)- র মাধ্যমে রোগীর শরীরে সঞ্চালন করা হয়। নিজস্ব শরীরের চর্বি হতেই প্রক্রিয়াজাত করা হয় বলে ট্রান্সপ্লান্ট প্রত্যাখ্যান (Transplant rejection) বা অন্য কোন জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভবনা থাকে না। কিডনীর স্থায়ী চিকিৎসার জন্য ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের মতো ব্যয়বহুল, ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টদায়ক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। স্টেমসেল চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীকে পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকার পরিবর্তে কর্মক্ষম ও উৎপাদনশীল নাগরিক হিসেবে পুনর্জীবন দান করে।
বাংলাদেশে ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি এন্ড হাসপাতাল এবং BLCS হাসপাতাল এ যৌথ ব্যবস্থাপনায়
প্রখ্যাত প্রফেসর ডা: ফিরোজ খান (নেফ্রোলজিস্ট) এর তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কিডনীর
এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করে আসছে।
আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ যদি কিডনী রোগের রুগি থেকে থাকে
তবে ডায়ালাইসিস ও কিডনী ট্রান্সপ্লান্টের মতো ব্যয় বহুল চিকিৎসা থেকে সরে
এসে "স্টেম সেল" পদ্ধতির চিকিৎসা নিতে বলতে পারেন। খরচ কম সেই সাথে খুবই কার্যকরি।
চলবে : পর্ব-০১
তথ্যসূত্র ও যোগাযোগ :BLCS Hospital,Phone: +88-02-55046715
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৪৪