একজন শিক্ষাবিদ ও বীরযোদ্ধার কথা বলছি
সকালে বন্ধু মোবাইলে ফোন করে খুব ঝাড়পোছ করল আমাকে,
ব্লগে এত্ত এত্ত কিছু লেখা হয় অথচ একজন শিক্ষার উজ্জল আলো নিয়ে বিচরন
করছেন আমাদের মাঝে, হঠাৎ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন,
কোথায় ব্লগে এমন কোন আলোচনা দেখলাম না !!!
মনটা খুব বিষন্ন ছিলো গত দুদিন যাবত, ভাবছিলাম কি লিখব, জীবিত থাকতে কিছু
লিখলাম না, বুঝতে পারছিলাম বন্ধুটি কার কথা বলছে ।
এখন তো করোনা কান্ডে প্রায়:শ দেখতে পাই অনেক প্রিয় মুখ হারায়ে যাচ্ছে, তেমনি একজন ছিল
সাদাত স্যার, কিন্ত যেদিন উনার স্ত্রী মারা যান সেদিন বিস্য়করভাবে জানলাম, উনার স্ত্রী
আমাদের টিচার ছিলেন ।সারাদিন আমার মন খারাপ করা দিন কেটেছিলো ।
বন্ধুর কথায় এখন যার কথা বলব তিনি নিজ চেষ্টায়, ১৯৭৪ সালে নিজ বাসায় ১৫ জন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে ছোট
বিদ্যালয়টির সূচনা করেন,দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য কিছু একটা করার চিন্তা থেকে স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ইংরেজি শেখাতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতার মাঝেও
তিনি মনে করতেন বাংলা ভাষা না শিখে কিংবা বাঙালিত্ব হারিয়ে নয়। সবার আগে মাতৃভাষা বাংলা, এ বিষয়ে আপস নেই। বাংলা শিখে বাঙালি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। আর এখন তো শিশুদের তিনটি ভাষা শেখানোর কথা বলা হয়। ছোটবেলায় ভাষা শেখাটা সহজ। সেখানে আমাদের দেশে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি শেখাটা কঠিন কোনো ব্যাপার বলে মনে হয় না।
অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ হিসাবে উনার অভিমত ছিলো যে , চাহিদা আছে বলেই ইংরেজি শিক্ষার প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা আবশ্যক। গতিময় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের জ্ঞান, প্রযুক্তি ও কর্মদক্ষতা অর্জন করতে হবে। সে জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে বসে এখন আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পাওয়া যায়। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ ও এডেক্সেল—এই দুটি বোর্ডের অধীনে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
দেশে উচ্চমানের শিক্ষা ব্যবস্হা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি নিজ প্রতিষ্ঠানকে তিল তিল করে সাজাঁয়ে তুলে ছিলেন,
যে কারনে ব্যক্তিগত জীবনে আরও অনেক সুযোগ থাকা সত্বেও তিনি মনে করতেন :-
অন্য কর্মক্ষেত্রে এত ভালোবাসা ও সম্মান পেতাম কি না, সন্দেহ। নিখাদ ভালোবাসা পাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। এখন তো আমার স্কুলে দ্বিতীয় প্রজন্ম আসছে। প্রথম দিকে যারা আমার ছাত্র ছিল, তাদের ছেলেমেয়েরা এখন আসছে।
কিন্তু বাবা–মায়েদের সঙ্গে তাদের সন্তানদের একটি বড় পার্থক্য খুঁজে পাই। এখনকার প্রজন্ম আগের চেয়ে
অনেকটাই এগিয়ে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, চাহিদা ও প্রয়োজন অনেক বদলে গেছে। গত সাড়ে চার দশকে আমার দায়িত্ব
অনেকটাই বেড়েছে। একজন পরিচালকের লক্ষ্য ও আদর্শ হবে স্পষ্ট। প্রয়োজনবোধে তাকে সাহসী হতে হবে, বদলাতে হবে এবং বদলে দিতে হবে।
সর্বপ্রথম জনতা ব্যাংক ১০ হাজার টাকা ঋণ দেয়। এ টাকা দিয়ে তিনি ১০টি ডেস্ক ও বেঞ্চ কেনেন। সেগুলো রাঙানো হয়েছিল লাল রঙে, যেটি সমৃদ্ধির রং। ১৯৭৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সকাল ৮টায় নিলুফার মঞ্জুর ব্ল্যাকবোর্ডে লেখেন ‘সানবিমস’ (সূর্যকিরণ), প্রথম ঘণ্টা বাজান তাঁর বিদ্যালয়ের।
১৯৯৬ সালে সানবিমস জিসিই অর্ডিনারি লেভেল কোর্সগুলো চালু করে। তাদের প্রথম ‘ও’ লেভেল ব্যাচ পাস করে ১৯৯৮ সালে। ২০০৭ সালে সানবিমস উত্তরায় নিজেদের ক্যাম্পাসে যায়, যার আয়তন ২ একর। ২০০৮ সালে তাদের
প্রথম ব্যাচ ‘এ’ লেভেল সম্পন্ন করে। এখন সানবিমসের দুটি ক্যাম্পাস, একটি ধানমন্ডি ও অন্যটি উত্তরায়।
ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সানবিমসের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ১১৩ জনের বেশি।
শিক্ষকের সংখ্যা ১৬১ জন এবং ৮১ জন সহকারী।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নিলুফার মঞ্জুর মঙ্গলবার ভোর তিনটার দিকে সবাইকে ছেড়ে চিরবিদায় নেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
আমি তার আত্নার মাগফেরাত কামনা করি এবং শিক্ষা খাতে উনার
এই দীর্ঘ ৪৭ বৎসরের অবদান চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে বলে বিশ্বাস করি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১৪