somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী
অবসরে বই পড়তে পছন্দ করি, মুভি দেখতেও ভালো লাগে। ঘোরাঘুরিও পছন্দ তবে সেটা খুব একটা হয়ে উঠে না। বাকেট লিস্ট আছে অনেক লম্বা। হয়তো কোন একদিন সম্ভব হবে, হয়তো কোনদিন হবে না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে জানি, প্রত্যাশা করতে জানি। তাই সেটাই করে যাচ্ছি।

অপ্রস্তুত কাব্য

০৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমরা অনেক সময় এমন সব কাণ্ড অজান্তে করে ফেলি যার কারণে অপ্রস্তুত হয়ে যেতে হয়। অন্যদের কথা জানিনা তবে আমি মাঝে মাঝেই এমন কিছু করে বসি পরে নিজেই বুঝতে পারিনা কিভাবে রিআ্যক্ট করবো। আমার জীবনে এমন ঘটনার কোনো অভাব নেই। এর ভিতর থেকে দুটি ঘটনা এখানে ছোট করে লিখছি।


১) আমি তখন অনার্সের লাস্ট সেমিস্টারে। একটা কমার্শিয়াল ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করছি। সেদিন ছিল আমার ইন্টার্নশিপের লাস্ট দিন। শেষের অল্প কিছুদিন আমি ফরেক্স ডিপার্টমেন্টে কাজ করেছিলাম। সেদিন অফিস আওয়ারের শুরুতেই একটা কাজে আমাকে আ্যকাউন্টসে পাঠানো হল। সেই ব্রাঞ্চে আমাদের যে ম্যানেজার অপারেশন স্যার ছিলেন তাকে সবাই যমের মত ভয় পেতেন। দুই দিন আগে তিনি ছুটি কাটাতে ভারতে গিয়েছিলেন। আ্যকাউন্টসে জাহিদ ভাই নামে একজন কাজ করতেন। তিনি ক্রেডিট ইনচার্জ স্যারের সাথে কথা বলছিলেন। আমি যখন ওখানে গিয়ে পৌঁছালাম তিনি স্যারকে বললেন, "স্যার, বিয়ে আজকে।"
স্যার তাকে বললেন, "আজকে বিয়ে তো অফিসে এসেছেন কেন?"
পাশের টেবিল থেকে সানজানা আপু জানালেন, "স্যার, সে ভয়ে এসেছে। ছুটি নিতে পারেনি তাই।"
ক্রেডিট ইনচার্জ স্যার বলেছিলেন সাইন করে চলে যাওয়ার জন্য। আমি ভাবলাম আজকে জাহিদ ভাইয়ের বিয়ে। তাই তাকে কংগ্রাটস জানালাম।
সানজানা আপু তখন বলে উঠলেন, "আরে ওর বিয়ে না। তার ভাইয়ের বিয়ে আজকে।"
পুরো ভগলু হয়ে গিয়েছিলাম, কি বলবো বুঝতে পারিনি। সরি বলা উচিত ছিল কিন্তু ঐ অবস্থাতে সেটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। ততক্ষণে আমার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল, তাড়াতাড়ি ফরেক্সে চলে এলাম। সেইদিন যেহেতু লাস্ট দিন ছিল তাই এই ঘটনার পরে সেই ভাইয়ার সাথে আর কোনোদিন দেখা হয়নি।
বেঁচে গিয়েছিলাম।


২) এটা আরও আগের ঘটনা। আমি তখন নতুন কলেজে উঠেছি। ঐ টাইম টাতে পড়াশুনার চাপ কম তাই বেজায় আনন্দ সবার মনে। সামনে কুরবানির ঈদ তাই সেদিন ঈদের আগে লাস্ট ক্লাস ছিল। ক্লাস শেষে ফুসকা খেয়ে আমি আর আমার ফ্রেন্ড নুমা হাঁটা শুরু করেছি কলেজের পাশের ফুটপাথ দিয়ে। আমি সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম। নুমা তার ডান পাশে রাস্তার দিকে তাকাতে তাকাতে হাঁটছিল। আমরা যেখানে হাঁটছিলাম সেই ফুটপাতের পাশে একটা গাড়ি পার্ক করা ছিল। রাস্তার অপোজিট দিক থেকে একজন ভদ্রলোক রাস্তা পার হয়ে এদিকে আসছিলেন। গাড়িটা সম্ভবত তার। আমি তার চেহারার দিকে তাকাইনি, যেহেতু আমি সামনের দিকে তাকিয়েছিলাম। নুমা ভদ্রলোককে দেখে হঠাৎ জোরে চিৎকার করে বলে উঠলো, "আরে! এটা হায়দার না?" আমি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি নুমার চিৎকার শুনে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তখন চিনতে পারলাম তাকে। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে সামনে দৌঁড় দিলাম। নুমাও আমার পিছনে পিছনে দৌঁড়ালো। হ্যাঁ, তিনি সেই বিখ্যাত গায়ক এবং বিমান প্রকৌশলী হায়দার হোসেইন। পাশে কতগুলো ছেলে দাঁড়িয়েছিল। তারা হাসতে হাসতে বলছিল, "মেয়েরা হায়দারেরও আবার ফ্যান হয়।" বলাই বাহুল্য তাদের মত তাদের কমেন্টটাও লেইম ছিল।

তিনি কস্মিনকালেও এই পোস্ট পড়বেন না। কিন্তু তার সাথে যেহেতু কোনোদিন দেখা হবেনা তাই এই পোস্টে তাকে সরি বলছি।

৩) এটা আমার ঘটনা না৷ তারপরও লিখছি কারণ এটা আগের দুটো ঘটনার থেকে আপনাদের কাছে বেশি ভালো লাগবে। ২০১৪ সালের কাহিনী। সেই বছর স্বাধীনতা দিবসের দিন জাতীয় সংগীত গেয়ে একটা রেকর্ড গড়া হয়েছিল। পরে অবশ্য সেই রেকর্ড ভেঙ্গেও গিয়েছিল। যাই হোক, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির স্টুডেন্টরা প্যারেড গ্রাউন্ডে গিয়েছিল জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য। আমাদের ভার্সিটিতে কোনো কোনো কোর্সের টিচার তো ঘোষণাই দিয়েছিলেন তার ক্লাসের কেউ যদি জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য যায় তাহলে এক মার্ক বোনাস দেওয়া হবে। এক মার্কের ভ্যালু অনেক। গ্রেড পাল্টে যেতে পারে। অনেকেই তাই গিয়েছিল। আমি আর যাইনি। অনেক কষ্টে একদিন ছুটি পেয়েছিলাম। তাই বের হতে চাইনি। তাছাড়া একদিন পরই একটা এক্সাম ছিল। আমার কয়েকটা ফ্রেন্ড গিয়েছিল। ভার্সিটি থেকে বাসে করে প্যারেড গ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আবার বাসে করে ভার্সিটিতে স্টুডেন্টদের পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।

আমার একটা ফ্রেন্ড কণিকা প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে ভার্সিটিতে ফেরার জন্য বাসে উঠে বসলো। আসার সময় যে যেই বাসে উঠে এসেছে সেই বাসে উঠেই আবার ফিরতে হবে। কণিকা খেয়াল করলো বাসে মানুষ অনেক কমে গিয়েছে। বেশিরভাগ স্টুডেন্ট নিজেদের মত বাসায় চলে যাবে। ভার্সিটিতে আর যাবে না। একটা নতুন মেয়ে উঠেছে তার পিছনের সিটে যে কিনা আসার সময় এই বাসে ছিল না। ভার্সিটির সিনিয়র হবে মনে হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে কথা বললো কণিকা মেয়েটার সাথে। মেয়েটি তার বাসটা আর খুঁজে পায়নি তাই এই বাসে উঠেছে। কথা প্রসঙ্গে জানলো সে ই.সি.ই. ডিপার্টমেন্টের। যেহেতু আমাদের ডিপার্টমেন্টের না তাই কণিকার চেনার কথাও না। সেম ডিপার্টমেন্ট হলেও চিনবে না। কারণ আমাদের ভার্সিটির সিস্টেমটাই হল ওপেন ক্রেডিট, নিজের ডিপার্টমেন্টের নিজের ব্যাচের অনেককেই আমরা চিনিনা। সিনিয়র, জুনিয়র তো দূরের কথা। প্রতি সেমিস্টারে নতুন নতুন কোর্সে সম্পূর্ণ নতুন মুখ। কে সিনিয়র, কে জুনিয়র, কে ব্যাচমেট জানা নেই। তাই ক্লাস বাদে লাউঞ্জ, ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি, রিসোর্স রুম সব জায়গাতেই অপরিচিত মানুষকে আমরা আপনি বলতাম। তবে ক্লাসে কোর্সমেট সিনিয়র হলেও তাকে তুমি বলতাম, নাম ধরে ডাকতাম। কণিকা এদিক থেকে ব্যতিক্রম, সাধারণত ক্লাসের বাইরেও সবাইকে তুমি বলতো।

যাই হোক, মেয়েটার সাথে বেশ কিছু কথা হল তার, তুমি করেই কথা বলেছিল। বাসে সবাই উঠে পড়েছে। একটু পর গাড়ি স্টার্ট দিবে। একজন স্যার উঠলেন গাড়িতে। তিনি আসার সময় এই বাসে উঠেছিলেন। স্যার এসে মেয়েটিকে বললেন, "ম্যাডাম এই বাসে আপনি?" কণিকা তো সেই লেভেলের অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেল। কিন্তু সে আমার মত সহজে নার্ভাস হয়ে পড়ে না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সে ম্যাডামকে সরি বললো। ম্যাডাম কোনো ব্যাপার না বলে উড়িয়ে দিলেন। বরং তাকে কণিকা স্টুডেন্ট ভেবেছে বলে তিনি অনেক খুশি। সেই ম্যাডামের আরও একটি পরিচয় হচ্ছে তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত সাহিত্যিক এবং নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের বড় মেয়ে ড. নোভা আহমেদ। ই.সি.ই. ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টরা যারা তার ক্লাস করেছে সবাই বলতো নোভা ম্যাডাম অনেক সুইট এবং ফ্রেন্ডলি।



ছবি - অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ফ্রোজেন থেকে নেওয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:১৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×