somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে অর্থ নয়, সঠিক পদক্ষেপ প্রয়োজন

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকারের টাকা মানেই আমরা মনে করি, ফাও টাকা। বাংলাদেশের খুব কম মানুষেই বুঝে না যে, সরকারের টাকা মানেই দেশের জনগণের টাকা। টাকা দেশের, দেশের জনগণের, সরকারের নয়- এটা দেশের শতকরা ৮০ জন লোক যখন বুঝবে তখনই দেশের উন্নতি সম্ভব হবে। আর দুর্নীতিগ্রস্থ শিক্ষা ব্যবস্থায় সঠিক শিক্ষা অর্জন করাও কঠিন। দেশের সঠিক উন্নতির জন্য শিক্ষা খাত সরকারি হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
আমরা প্রায়ই মিডিয়াতে দেখতে পাই, বাংলাদেশের শিক্ষাখাত একটি দুর্নীতিগ্রস্থ খাত। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই শিক্ষা খাতের দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রাথমিক শিক্ষা বাদে বর্তমানে শতকরা ৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। শিক্ষা মন্ত্রনালয়, উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, সকল শিক্ষা বোর্ড, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সকল শিক্ষা অফিস, আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ এ সকল প্রতিষ্ঠানের কাজ হল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই । এ বিশাল কর্মকর্তা-কর্মচারিগণের বেতন-ভাতাদি সরকার বহন করে। বিপুল পরিমান টাকা এ খাতে করচ করছে সরকার। কিন্তু শত চেষ্টা করেও এ খাতের দুর্নীতি কমাতে পারছে না। আমি যে সকল প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করলাম তারাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হর্তা-কর্তা। তাঁরা যদি কোনদিন শোনে যে, এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হয়ে গেছে তাহলে তাদের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। কারণ তাদের অতিরিক্ত আয় বন্ধ হয়ে যাবে। কিছু কিছু সৎ কর্মকর্তা আছেন তাঁরা খুশি হতে পারেন।
সরকারে উচিত এবং ফরজ কাজ হল এমপিও ভুক্ত পাঁচ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারিকে এ দুর্নীতির জাল থেকে উদ্ধার করা। এ অবস্থার জন্য আসলে কারও দোষ নেই। এটা একটা প্রক্রিয়ায় পরিনত হয়েছে। শিক্ষকগণ বিপদে পরে অফিসগুলোতে যায় কাজ করাতে। অফিসার ও কর্মচারীগণ দুর্বলতার সুযোগে কিছু পেতে চায়। শিক্ষকগণও কাজ উদ্ধার করার জন্য ঘুষ দেয়।
এ ধরণের সমস্যার একমাত্র সমাধান এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করলে ৯০ শতাংশ দুর্নীতি কমে যাবে। এ কাজটি সহজভাবেই সরকার করতে পারে। এরজন্য দরকার হিসাব-নিকাশ ও জরিপ করা। আমি একটা সহজ হিসাব তুলে ধরছি।
আমাদের দেশে এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ৩০ হাজার। মোট শিক্ষক-কর্মচারি হল প্রায় পাঁচ লক্ষ। গড়ে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারি আছেন প্রায় ১৬ জন।
প্রতি বছর সরকার শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা দিচ্ছেন প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। দুই হাজার করে ছাত্র-ছাত্রী আছে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ সকল প্রতিষ্ঠান প্রতি ছাত্রের নিকট থেকে বেতন নিচ্ছে গড়ে ৩০০ টাকা। এ হিসাবে ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানে বছরে বেতন আদায় হয় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। আর বাকী ২০ হাজার প্রতিষ্ঠানে বছরে বেতন আদায় হয় ৬ হাজার কোটি টাকা। তাহলে বেতন বাবদ আয় হয় ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে সরকারের খাত থেকে অতিরিক্ত কোন টাকার প্রয়োজন নাই। হয়তবা কিছু লাগতেও পারে নাও লাগতে পারে।
সরকার যদি সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করে তাহলে এটি সকারের একটি আয়ের উৎস হতে পারে।
এখন আসাযাক এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর কী পরিমাণ টাকা লোপাট হচ্ছে। যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই হাজার ছাত্র-ছাত্রী আছে সে সকল প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর সেশন ফি এর কথা বলে অতিরিক্ত টাকা নেয় প্রায় ১ কোটি। এ হিসাবে প্রতি বছর লোপাট হচ্ছে ১০ হাজার কোটী টাকা। আর বাকী ২০ হাজার প্রতিষ্ঠানে লোপাট হয় কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর লোপাট হচ্ছে অভিভাবক মহল থেকে। এ টাকা কারা লোপাট করছে এ ব্যপারে সবাই অবগত আছেন।
সরকার যদি ৩০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে তাহলে কী খরচ হতে পারে? হ্যাঁ, ৪০% বাড়িভাড়া সহ যদি সরকার শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন দেয় তাহলে প্রতিমাসে প্রয়োজন হবে গড়ে প্রায় ৩২ হাজার টাকা। এ হিসাবে বছরে খরচ হবে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। তাহলে এখন সরকার দিচ্ছেন ১৩ হাজার কোটি টাকা। আর অতিরিক্ত লাগবে ৬ হাজার কোটি টাকা। যদি সরকার বিদ্যালয়ের আয় নিয়ে যায় তাহলে জাতীয়করণ করার পর সরকারের খরচ হবে ৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকারের আয় হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। তাও আবার জাতীয়করণ করার সাথে সাথে এ আয় হবে।
সরকার যদি ইচ্ছা করে তাহলে, প্রথমে একটি নিয়ম করে দিতে পারে। যেমনঃ যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিগত ৫ বছরে পাবলিক পরীক্ষায় ৮০% ফলাফল করেছে তাদের জাতীয়করণের আওতায় আনা হবে। আর বাকীরা এ নিয়মের আওতায় আসতে পারলে তাদেরকেও জাতীয়করনের আওতায় আনা হবে। পরিশেষে সরকারের কাছে আকুল আবেদন যে, এ সকল দিক বিবেচনা করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে জাতিকে মুক্তির পথ দেখাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৪৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×