somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি আছি, সে নেই!

২৫ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দু'জন মানুষের মাঝে একটা সম্পর্কের গল্প বলছি। জীবনের এক সুতীক্ষ্ম বাঁক নেয়া সময়ে যখন আমার আবাল্য পরিচিত সুহৃদ-বন্ধুরা সময়ের তাগিদে একে একে দূরে সরে যাচ্ছিলো, ঠিক সেই সময়েই তার সাথে আজকের এই সম্পর্কের সূচনা- অনেকটা একমুখী।
'আশেপাশে এতো মানুষ থাকতে কেবল সেই কেন?, -প্রশ্ন হতে পারে। উত্তর জানাতে আর ও কয়েক বছর পেছনে চলে যেতে হয়। তাকে চিনতাম তখন থেকেই, তবে ঋনাত্মক দৃষ্টিকোণ হতে, মূলতঃ পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবেই। কিন্তু প্রথম পরিচয়ে, প্রথম আলাপচারিতায় তার মাঝে ধনাত্মক ছাড়া ঋনাত্মক কিছুই খুঁজে পাইনি। ফলে সৃষ্টি হলো মানসিক টানা-পোড়ন। তবে, মাঝের সময়গুলোতে বন্ধুদের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া আর পড়াশোনা নিয়ে তুমুল ব্যস্ততা সে টানাপোড়নের স্রোতে পলিমাটির আস্তরণ দিয়ে গিয়েছিল আর একটু লম্বা অবসর পেয়েই সে আস্তরণ সরে গেল; তৈরী হলো এক দূর্বার আকর্ষন।
না, আমি সে আকর্ষনকে উপেক্ষা করতে পারিনি, কিংবা হয়ত মন থেকে চাই ও নি। তারপর সময় এগিয়ে চললো। তার চেয়ে ও দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে গেলাম আমরা। পরিচিত দু’জন মানুষ একে অপরকে বন্ধু বলে স্বীকৃতি দান করলো। মাঝে অনেক চরাই-উতরাই পার হতে হয়েছে। এসেছে সামাজিক বাধা, অভিভাবকের চোখ রাঙ্গানী, নিজেদের মানসিকতার দ্বন্দ্ব, সর্বোপরি নিকট বন্ধুদের প্রশ্নবিদ্ধ ভ্রূকুটি। কিন্তু থামিনি আমরা। একজনের দূর্বার আকর্ষন, নতুন কিছু আবিষ্কারের আনন্দ আর অন্য জনের দুরন্ত জেদ- সবকিছুকে হার মানিয়ে দিলো। বন্ধুত্বের সম্পর্ক নতুন রূপে ধরা দিলো।
এরপর ঘটলো সেই দূর্ঘটনা। অনেক আন্তরিকতা আর ভালবাসা মেশানো আমার সেই উপহার সে ফিরিয়ে দিলো, (পরবর্তীতে যদিও সে তার একটা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা আমায় শুনিয়েছে, তবু) সেদিনের সেই মূহুর্তের অনুভূতি, সেই ব্যাথাভরা মন আমার সারাজীবনের স্মৃতির সারথী হয়ে রইলো। এরপর, মনে প্রশ্ন এলো, 'কেন এত ব্যাথা পেলাম? উপেক্ষার ব্যাথা তো আমি আগে ও সয়েছি। আজ তবে কেন পারছি না?' উত্তর পেতে একটু সময় লেগে গিয়েছিল। তাই উত্তরটা আমি ও পরেই দিচ্ছি।
আবার, সময় তার অমোঘ বেগ নিয়ে চলতে থাকলো। আমরা আর ও কাছাকাছি এলাম। বন্ধুত্বের দাবী বেড়ে চললো। অন্যদিকে, 'তুমি' সম্বোধন নেমে এল 'তুই'তে। এমনি সময়ে, দ্বিতীয় প্রশ্ন এসে উঁকি দিলো মনের কোণে। 'কেন এত আকর্ষন? কেন তার দূর্ব্যবহার, উপেক্ষা, ভ্রূকুটি - এই আকর্ষনকে বিন্দুমাত্র কমাতে পারছে না?'
এ সকল প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব যখন আমি পেয়ে গেলাম, তখন আমি স্তম্ভিত হয়ে পড়লাম। এ হতে পারে না! বন্ধুদের, পরিচিতজনের সকল প্রশ্ন, বিদ্রুপ, আক্রমন প্রবল শক্তিতে যে আমি মোকাবেলা করেছি, হার স্বীকার করিনি, সেই আমিই আমার নিজের কাছেই কি হেরে গেলাম?
সত্যিই তাকে আমি ভালবাসি। কতটা ভালবাসি তা কেবল আমার স্রষ্টা আর আমিই জানি আর জানে কতগুলো নির্ঘুম রাতের অগুণতি তারকামালা। না, তাকে আমি কখনোই কামনা করিনি; আপন করে, নিজের মত করে কখনোই পেতে চাইনি। চেয়েছি কেবল সে সুখে থাক, তার হাসিমাখা মুখখানি অক্ষয় হোক।
সাত ঘাটের না হোক, চার-পাঁচ ঘাটের পানি খাওয়া মানুষ আমি। তবু, সে আমাকে ভুলিয়ে দিলো! জবাব খুঁজেছি, পেয়ে ও গিয়েছি সাথে সাথেই। তার রূপ, তার হাসি, তার কথা, তার চোখ কিছুই আমাকে ভোলাতে পারেনি। আমাকে ভুলিয়েছে তার অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব আর অটল সততা। তাইতো, ব্যক্তিগত জীবন বিশ্বাসের বিপরীত বৃত্তে দাঁড়িয়ে ও আমি তাকে বন্ধু ভেবেছি; হয়তো সে ও আমাকে তাই ভেবেছে।
যতবার তার কথা মনে এসেছে, ততবারই বুঝে গেছি, 'আমি শান্ত দিঘীর নরোম জল আর সে অনন্ত বিস্তৃত নীলাকাশ। মর্ত্যের জলের কী সাধ্য, আকাশ ছুঁয়ে আসে?' মেঘ হয়ে তাই যতবার তাকে ছুঁতে গিয়েছি, ততবার - ততবার আমি শ্রাবণধারায় অঝোরে দীঘির বুকেই ঝরে পড়েছি। এইতো আমার নিয়তি; বাকিটা দীর্ঘশ্বাস।
শেষ করছি এই বলে, যদি কখনো তার মাঝে ডুবে যাই, তবে নিজের কাছেই হেরে যাব। তাই হাত বাড়িয়ে কখনো কোন দাবী নিয়ে তার কাছে যাই না। তবে, যদি সে কখনো কোন আলোঝরা বিবর্ণ সন্ধ্যায় তার মায়াময় দু’টি হাত বাড়িয়ে দেয়, তখন? সম্ভবতঃ হেরে যাওয়াটাই হবে আমার নিষ্ঠুর নিয়তি। আমি তো অতি দূর্বল দো-পেয়ে এক মানুষ মাত্র। ‘না’ বলতে পারার অসাধারণ সামর্থ্য হতে বঞ্চিত রেখেই স্রষ্টা যাকে দিয়েছেন ভালবাসবার এক অতলস্পর্শী ক্ষমতা, ব্যাথা বইবার এক অপরিসীম শক্তি।
'যদি দং হৃদয়ং তব, তদস্তু হৃদয়ং মম ..............'। আমি আছি, সে নেই।
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×