বইয়ের নাম: কঙ্কাবতীর কথা
লেখকের নাম: শায়মা হক
প্রকাশনীর নাম : একরঙ্গা এক ঘুড়ি
ছেলেবেলায় সেবা প্রকাশনীর বইয়ের ভক্ত ছিলাম। কোন এক বইমেলায় এই প্রকাশনীর বিদেশী লেখকের দুটি বইয়ের অনুবাদ কিনেছিলাম যার একটি ছিল চার্লস ডিকেন্সকের লেখা "ডেভিড কপারফিল্ড" অন্যটি ছিল শার্ল্ট ব্রুনটির লেখা "জেন আয়ার"। এইদুটো বইয়ের মধ্যে বেশ সাদৃশ্য ছিল 'ডেভিড কপারফিল্ড' একটি এতিম ছেলের বৈরী পরিবেশে বড় হওয়ার গল্প, ডেভিডের বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা একজন দুষ্টু লোককে বিয়ে করেন। সৎ বাবার কাছে অত্যাচারিত ডেভিডের স্থান হয় এতিমখানায় কিন্তু সেখানেও তার উপর নেমে আসে একই রকম নির্যাতন। জেন আয়ারের কাহিনীও প্রায় একই রকম এখানে ডেভিড ছেলে আর জেন মেয়ে পার্থক্য এতটুকুই। এই দুটো বইই আপনাকে কাদাবে। এই দুটি বইয়ের কাহিনীই লেখকদের বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি।
আমাদের শায়মা আপুর রচিত "কঙ্কাবতীর কথা" বইটি এইদুটো বইয়ের কাহিনীর সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। লেখিকা অত্যন্ত যত্নের সাথে প্রাঞ্জল ভাষায় মনের সব আবেগ ঢেলে গল্পের নায়িকার চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন। এই গল্পের নায়িকার উপর শারিরিক নির্যাতনের চেয়ে মানসিক নির্যাতনই বেশি ছিল। নায়িকার অতি সুন্দরী মা তার বাবার প্রত্যাখানের যন্ত্রণা সইতে না পেরে নিজের মেয়েকে সারাজীবন অবহেলা করে গেছেন। মা কখনো এমন হয় নাকি? অনেক খারাপ বাবার গল্প শুনেছি কিন্তু 'মা' শব্দটি উচ্চারণ করলেই আমার চোখে পানি এসে যায় নিজের মায়ের কথা ভাবি,কি অপরিসীম ভালবাসায় মা বড় করেছেন আমাদের।
আশপাশের মানুষের শত অপমান আর মানসিক নির্যাতনের পরও ঝুমকি ফুফুর ভালবাসা যেন মরুভূমিতে দুফোটা জলের মতই পাঠকের মনে তৃপ্তি দেবে। দোলন এবং আরবাজ দুজনকেই আমার কাছে নায়িকার খাটি প্রেমিক মনে হয়েছে। বাকীটা বই পড়ে পাঠক জেনে নেবেন আশাকরি। এমনিতে বুক রিভিউ লেখার অভিজ্ঞতা আমার নেই, এর বেশি লিখলে আবার স্পয়লার হয়ে যাবে।
লেখক পরিচিতি থেকে জানা যায় আপু মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী এবং একাধারে বাচ্চাদের স্কুলের শিক্ষক। বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে আপুর মনোবৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটেছে বইটিতে।
আপুর নিজের আকা লালটুকটুকে প্রচ্ছদটি আমার কাছে খুববেশি আকর্ষনীয় মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছে প্রফেশনাল প্রচ্ছদ শিল্পীকে দিয়ে করালে প্রচ্ছদটি আরো ভাল হতে পারতো।
পরিশেষে বলতে চাই আপুকে তেলমারার জন্য নয় বইটি আসলেই আমার ভাল লেগেছে, যারা বইটি এখনো পড়েননি আশাকরি বইটি কিনলে ঠকবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:০০