somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এম এ জলিল অননন্তের সাথে বসে দেখা "মোস্ট ওয়েলকাম" মুভির আনকোরা রিভিউ

২২ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত কযেক ঈদ আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে দেশ ও জাতির উন্নতির লক্ষ্যে ( আসলে নিখাদ বিনোদনের জন্যে) বাংলা সিনেমা দেখা শুরু করেছি। এই তালিকায় শাকিব খান, ডিপজল এম এ জলিল অনন্ত কারো ছবি বাদ নেই।

তাই এইবারো যখন আমাদের প্রানপ্রিয় অনন্ত ভাইয়ের ছবি মোস্ট ওয়েলকাম আসার খবর পেলাম আমাদের আর পায় কে। কিন্তু কল্পনাও করি নি এতো ভয়াবহ চমৎকার (!!!) একটা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবো।

গতকাল বলাকায় আমরা যখন সিনেমা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি তখন দেখি আমাদের হার্টত্রুব, জানের জান, পরানের পরান, সুপার হিরু, দ্যা ডেশিং গাই(!!) দ্যা সুপার "ইশটার" এম এ জলিল অনন্ত, বর্ষা আর তাদের দলবল নিয়ে হাজির। চক্ষু তো চড়কগাছ আমাদের। আমরা সব ছেলেরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পেছন থেকে "অনন্ত মেরী মি, মেরী মি" বলে চেচাচ্ছিলাম, আর ক্ষনে ক্ষনে বলে উঠছিলাম "ইশটপ, ইশটপ".... কিন্তু তখনো জানিনি আরো কতো কি যে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।

যখন সীট খুজে বসতে যাই দেকি আমাদের আটজনের সীট পড়েছে ঠিক তাদের পেছনে। আর আমাদের পায় কে???? ইচ্ছা করছিলো যে টিকেটটা দিয়েছে তারে চুম্মা দেই।

তো শুরু হলো অনন্তের পেছনে বসে আমাদের ছবি দেখা।

ছবি শুরু হলো এক ব্যবসায়ীকে অপহরনের মধ্য দিয়ে। সন্ত্রসীরা শাসিয়ে গেলো যদি চল্লিশ লাখ টাকা ক্যাশ অথবা চল্লিশ লাখ টাকা পুরষ্কার দেয়া ১০ টাকার লটারীর টিকেট না দিতে পারে তার পরিবার তাহলে সেই ব্যবসায়ীকে মেরে ফেলা হবে।

ব্যাস কোন উপায় না পেয়ে সেই লোকের স্ত্রী মুশকীল আসান বাবার দরবারে গেলো। সেখানকার দরবেশকে মহিলা সব সমস্যার কথা বললো। আমরা ভাবলাম দরবেশ হয়তো দানবাক্স ভেঙ্গে মহিলাকে টাকা দিয়ে দেবে। কিন্তু না...... এই মাজারে দানবাক্স অন্যকাজে ব্যবহার হয়। এখানে দানবাক্সে সমস্যার কথা লিখে যেতে হয়। তারপর সেটা স্বরাস্ট্র মন্ত্রনারয়ে পাঠানো হয়। তারপর আইন শৃংখলা বিষয়ক সভায় সেটা উত্থাপন করে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। এই কথা শুনে তো মহিলার মুখ কালো হয়ে গেলো। তখন দরবেশ হেসে বললো, খামান বেবি, আই ওয়াস জোকিং, উই হ্যাভ এনাদার ওয়ে।

এর পরের দৃশ্য। কয়েকজন সন্ত্রাসী কালার প্রিন্টারে বানানো লক্ষ লক্ষ জাল ডলারের নোট ছিনতাই করে পালাচ্ছিলো। এই সময় তাদের পিছু নিলো এক মোটরবাইক আরোহী।

বলুন তো কে????? বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, এই মোটরবাইক আরোহী আর কেউ না, আমাদের সবার পরিচিত..... কৃষ। ধাক্কা খাইলেন নি বাই?

আমাদেরও একই অবস্থা হয়েছিলো। পোস্টারে যদিও লাকী সিনেমার নায়িকার কথা বলা আছে, কিন্তু কৃষ এর অস্তিত্ব কোথাও ছিলো না।

পরে অবশ্য ডায়লোগ শুনে বুঝতে পারলাম, কৃষ এর মুখোশ পরা এই ভদ্রলোক আর কেউ না, আমাদের সামনে বসে থাকা এম এ জলিল অনন্ত। যদিও এই ছবিতে স্পীডের মতো ভয়াবহ ডায়লোগবাজী নেই, তারপরো অনন্ত ইস ইউনিক।

এরপর যা হলো মোটামুটি দেখার মতো। দাবাঙ এর অ্যাকশান, রবিন হুডের ডাযালোগ আর আমাদের এম এ জলিল অনন্তের এই সিনেমার ট্যাগলাইন "যারা ভালো হতে চায় তাদেরকে মোস্ট ওয়েলকাম, আর যারা চায়না তাদের গুড বাই"

এই অনন্তই হচ্ছে দুদকের সৎ অফিসার যে ঋনখেলাপীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে। এখানে অনন্তর নাম আরিয়ান। অবশ্য নাম এই ছবির জন্যে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না। কারন এখানে অনেকের নাম এ-বি-সি-ডি-ই-এফ-জি-এইচ রাখা হয়েছে। তো এরকমই এক ঋনখেলাপী এবিসি এর বাসায় তল্লাসী চালিয়ে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করে অনন্ত। আর এবিসি হয়ে যায় পথের ফকির। এ অবস্থা দেখে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে এবিসির মেয়ে বর্ষা নেমে পড়ে অনন্তকে সাইজ করতে।

এবং এরই ধারাবাহিকতায় রাস্তাঘাটে অনন্তকে "ইভটিজিং" করতে শুরু করে বর্ষা। এতেও কাজ হচ্ছেনা দেখে দৌড় দিয়ে অনন্তের চলন্ত মোটরসাইকেলে গিয়ে উড়ে বসে বর্ষা (আল্লাগো!! সে দেখার মতো সীন) শুধু তাই না, চলন্ত অবস্থায় সে অনন্তের শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। এর আগে স্পীডে নায়িকা অনন্তকে জোর জবরদস্তি করতে আমরা দেখেছি, তবে তা বাসর রাতে। এই ছবিতে দিনদুপুরে রাস্তাঘাটে এই কাজ করায় অনন্ত মান ইজ্জত বাচাতে নায়িকার সাথে বেতালে নাচানাচি করে।

একসময় হাজির হয় মিশা সওদাগর। সে মুশকিল আসান বাবার কৃষকে ধরার জন্যে ফাদ পাতলেন। এইবার আমি আবারো বিমরি খাইলাম। এইবারে অনন্ত একেবারে কৃষ এর মতো বাতাসের মধ্যে সাতার কেটে নেমে আসলেন। আমরাতো পুরাই ফিদা।

কিন্তু আমাদের কৃষ ধরা পড়লেন। তাকে ব্লাকমেইল করে পাঠানো হলো বিদেশ থেকে মিশা সওদাগরের টাকা উদ্ধারে। এরপর আমাদের অনন্ত ভাই দুইটা ভয়াবহ জিনিষ দেখাইলেন। এক সমুদ্রের পানির নিচে নাচানাচি করে কাটাইলেন, কারো কিছুই ভিজলো না , অক্সিজেনের কোনো সমস্যা হলো না।

আরেকটা জিনিষ হইলো মোটরসাইকেলে উড়ে গিয়ে উড়ন্ত হেরিকপ্টারের উপর ঝাপায়া পড়লেন। এই দৃশ্য শেষ হবার পর অনন্ত ভাই আমাদের ডেকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হলো এই সীনটা? এইটা পুরা আমেরিকার মুভির মতো করা হইছে।

এরপর নায়ক নায়িকার মিলনের মধ্য দিয়ে সিনেমা শেষ হইলো। তবে সিনেমার আগে পরে যতজনই অনন্ত আর বর্ষার ছবি তুলেছে সব যায়গায় আমরা বান্দরা ছিলাম। এমনকি "দিগন্ত টেলিভিশন" একটা সাক্ষাৎকারো নিলো অনন্তের, পেছনে আমরা উকিঝুকি মারলাম্ কিন্তু বাসায় এসে খুজে দেখি আমাদের দিগন্ত টিভি আসে না,( যা গতকালই বুঝতে পারলাম, আগে জানতাম ও না)

যাবার আগে অনন্ত ভাই বললেন আমাদের সাখে ছবি দেখে নাকি তাদের অনেক ভালো লেগেছে, আমরা যে আরো কতো বালো লেগেছে আমরা কেমনে বুঝাই..... :P :P

তবে সিরিয়াসলি এই ছবি যে কোন দিক থেকেই অনেক ভালো হয়েছে অনন্তের অন্যান্য গুলো থেকে। ইংরেজী উচ্চারন ভালো, গল্প ভালো, অভিনয়েরও উন্নতি হয়েছে। বলা যায় স্পীড এর তুলনায় অনেক ভালো মুভি এই মোস্ট ওয়েলকাম।

অনন্ত আর বর্ষার সাথে সময়টা খারাপ কাটে নাই যার প্রমান ছবিগুলো।


বর্ষার সাথে আমি (দাড়িওয়ালা)



শেষে অনন্তকে সরায়া দিলাম সবাই মিলে



ছবির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনন্তের সাথে আলাপচারিতা :P :P
৪৩টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×