আগষ্ট, ২০১৫ বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ০৮:৩০ মিঃ নিকুঞ্জ-১ একটি অসমাপ্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গাড়ির ফুয়েল পুড়ছি প্রায় ত্রিশ মিনিট যাবত, আমি বনানী থেকে যাত্রা’র সাথে সাথে বাড়িওয়ালা আমার বন্ধু মানুষ তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি, তিনি উত্তরা থেকে আসছেন - - - নিকুঞ্জ পৌছে ফোন দিয়েছি তিনি আসছেন - - - দয়া করে অপেক্ষা করতে বললেন, আমি অপেক্ষা করছি। ঝমঝম করে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে - কোনো লোকজন নেই, চারোদিকে শুনশান। রাস্তার মোড়ে চা’য়ের দোকান থেকে এক প্যাকেট টোষ্ট বিস্কুট নিয়ে আবারো বাড়ির সমনে চলে এসেছি (সুন্দর প্যাকেটে চিনি দেওয়া দুইটি টোষ্ট খেতে অসাধারণ) বৃষ্টির সাথে মানুষের অনেক আনন্দ-দুঃখ-কষ্ট মিশে থাকে, তার মধ্যে সম্ভবত দুঃখ-কষ্টই বেশি, অকটেন আর না পুড়ে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে হাটি হাটি পা-পা করে বৃষ্টিতে নেমে এলাম - বৃষ্টিতে ভিজে সয়লাব হয়ে গেছি হঠাৎ অনুভব করলাম - পাশে কেউ! - না কোনো মানুষ নয়, ছোট সাদা কালো অবহেলিত শীর্ণকায় একটি দেশী কুকুরছানা আমার পাশে! মনে হচ্ছে খুশিতে লেজ নাড়ছে, তাকিয়ে জিগ্যাসা করলাম - খবর ভালো তো? সে কুঁ কুঁ করে দুইটি শব্দ করলো, বিস্কুট খাবে - চিনি দেওয়া টোষ্ট? আবারো কুঁ কুঁ শব্দ করে His Masters Voice গ্রামোফোনের কুকুরের মনোগ্রামের মতো বসে পরলো, খানিকটা টোষ্ট ভেঙ্গে দেওয়ার সাথে সাথে অত্যন্ত আনন্দের সাথে খেয়ে আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো মনে হচ্ছে সে বলছে - “আর কিছু কি দেওয়া যাবে প্লিজ” বাকী টোষ্ট দিয়ে দিলাম - মনের আনন্দে সে অতি সামান্য টোষ্ট শেষ করে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার একান্ত দেহরক্ষী হয়ে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করলো! কয়েকবার বললাম - যাও চলে যাও, তোমার কোনো কাজ নেই - আমার দিকে খুব দুঃখ নিয়ে তাকিয়ে আবার কুঁ কুঁ শব্দ করে উঠলো, মনে হচ্ছে আবারো বলতে চাচ্ছে “তোমার পাশে থাকি কিছুক্ষণ, পাহারা দিচ্ছি তো”!!! আহারে কৃতজ্ঞতা!!!
বাড়িওয়ালা কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মুস্তাফিজ ভাই গাড়ি থেকে নেমেই প্রথমে যে কথাটি বললেন - মাহমুদ ভাই আপনি কি ডগ নিয়ে এসেছেন? আপনারা তো বৃষ্টিতে ভিজে সয়লাব - কুকুরছানা টি আমার দিকে তখন এমন চোখে তাকিয়ে ছিলো যে আমার পক্ষে বলা সম্ভব হয়নি “এটি আমার নয় - একে আমি চিনিনা”। আমি মুস্তাফিজ ভাইকে বললাম “হ্যা আমি আর আমার বন্ধু ভিজে সয়লাব এখন আপনার ভেজার পালা”। তিনি শুনলেন কি না জানিনা, তবে বৃষ্টিতে ভেজার ভয়ে হোক আর দেরি করার কারণেই হোক হন্তদন্ত হয়ে বাসার গেট খোলায় মনোযোগ দিলেন।
বাড়ির কাজ দেখতে দেখতে রাত আনুমানিক ১০:০০ বাজে বাইরে এসে দেখি কুকুরছানা এখনো আমার জন্য অপেক্ষা করছে, গাড়ির দরজা খোলার সাথে সাথে সে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে আমার চলে যাওয়া, তার দুঃখ ভরা চোখের ভাষায় যেনো বলছে “আমাকে কি নেওয়া যায় তোমার সাথে” এই কুকুরছানা জন্ম থেকেই মানুষ আর আর গাড়ির তাড়া খেয়েছে, সে গাড়িতে চড়ায় অভ্যস্ত না, তার হাড় জিরজিরে শীর্ণকায় শরীর ধরে আমাকেই উঠাতে হলো, রাস্তার মোড়ের চা’য়ের দোকানে আবারো থেমে দোকানদারের কাছে জানতে চাইলাম এই কুকুরকে চেনেন, দোকানদার কুকুরছানা দেখে বললো “হালা বজ্জাত, হের মা তিন চাইরডা পয়দা করছিলো সব মরছে হে টিক্কা আছে, আফনে নিবেন হেরে? তারপর আর কথা চলে না।
যবনিকা: - আমার জীবনে অনেক সাহসী দুঃসাহসী কুকুর দেখেছি, তবে এর মতো এতো ভীতু কুকুর আমি খুব একটা দেখিনি, আমি তাকে ভীরু বলে ডাকি, বাড়ির যে-কোনেই থাকুক সে দৌড়ে এসে বিশ্বস্ততার সাথে আমার কাছে বসবে, তার একমাত্র কাজ ভয় পাওয়া, তাই তার নাম ভীরু - আমার প্রিয় ভীরু, সে আমাদের গ্রামের বাড়িতেই থাকতে পছন্দ করে, হয়তো এটাও তার বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব ও কৃতজ্ঞতা হিসেবে নিয়েছে, তাই সে গ্রামের বাড়িতেই আছে।
উৎসর্গ: - ব্লগার “মুক্তা নীল” যিনি দুঃখের গল্প ব্লগে লিখতে পছন্দ করেন। তিনি হয়তো জানেন না “জীবন অর্থ পরাজয় নয়, জীবন অর্থ যুদ্ধ, জীবন যুদ্ধে শহীদ হলেও জয়ী বলে গন্য হয়”। ব্লগার মুক্তা নীলের কাছে আনন্দের গল্প আশা করছি।
কৃতজ্ঞতাঃ - সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে এক দিগন্ত ভালোবাসা ও ধন্যবাদ লেখাটি নির্বাচিত পোষ্টে স্থান দেওয়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৫৯