“পিতাহীন সন্তান যেনো ভাঙ্গা গাছের গুড়া
মাথার উপর পিতার ছায়ায় সন্তান হয় পর্বতেরও চূড়া”
- আমার বেহেস্তবাসী দাদীজান
“পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ,
পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা”
- সনাতন ধর্ম
বাবা একজন খুবই রাগি মানুষ একই সঙ্গে খুবই স্নেহশীল পরম মমতার একজন মানুষ। খুব হাসিখুশি আর কখনো কখনো অনেক দুঃখিও। ব্যস্ত থাকেন সব সময়, আর সময় সময় অনেক চিন্তিত। বাসায় থাকেন কখন? - মাঝে মাঝে অনেক রাত করে ফেরেন। ঠান্ডা খাবার যা থাকে খুব আগ্রহ করে খেয়ে নেন - সম্ভবত বাবাদের খাবার নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকে না, কোনো অভিযোগ থাকতেও নেই। ভোর বেলায় না খেয়েই বেড়িয়ে পরেন! অদ্ভুৎ এক মানুষ!
পৃথিবীর যতো আজব খেলনা সব জড়ো করে নিয়ে আসেন। বাজারের সবচেয়ে বড় মাছ আর কুরবানীতে বাজারের সবচেয়ে বড় পাগলা গরু। যতো মিষ্টি আর মজাদার খাবার তাও - শুধু তিনি নিজে সময় দিতে পারেন না! সবার জন্য নতুন জামা, শুধু তিনি নতুন কোনো জামা পরেন না - সম্ভবত ঈদে বাবাদের নতুন জামা পরতে হয়না! অসুস্থ হলে - সারা রাত মাথার কাছে অশ্রু সজল চোখে জেগে থাকেন। মা এর বকুনি উপেক্ষা করে সবাইকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে নামেন। উৎসবে হৈ হুল্লোড় করে বাড়ি সরগম করে তুলেন - তিনি একাই একশো।
রাতে ভয় পেলে বাড়ির সবচেয়ে সাহসী মানুষ যিনি - তিনি বাবা, তিনি সবাইকে সাহস যুগিয়ে দেন এক নিমিষে। একদিন ভোরে দেখা যায় ঘরে নতুন চকচকে রঙ্গিন এক বেবী সাইকেল! আমরা অবাক হই হতবাক হই। এতো এতো ওজন আমের ঝুড়ি, কমলার ঝুড়ি, লিচু, কাঠাল তিনি কিভাবে বহন করেন - কে জানে? নতুন জুতো, নতুন জামা, রঙ বেরঙের রঙ পেন্সিল, সুন্দর সুন্দর আর মজাদার ঘ্রাণের রাবার, খাতা, বই! দিনের পর দিন বাবা আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে চলেন।
সময় দ্রুত চলে যায় --- --- ---
বাবা যেদিন চিরো বিদায় নিয়ে না ফেরার কোনো দেশে চলে যান, আর ফিরে আসেন না! শুরু হয় তার অনুপস্থিতির দিন। শূন্য বাড়ী অপূর্ণই থেকে যায় অনন্তকাল --- --- --- এই অপূর্ণতা আর কখনো পূরণ হয় না। তিন তিনটি প্রজন্ম এই অপূর্ণতার দুঃখ বহন করতে থাকেন।
আমাদের মাথার উপর যিনি মেঘমালার মতো সবসময় শিতল ছায়া দিয়ে চলেন তিনি আমাদের বাবা, একসময় আমরা নিজেরাও বাবা হই। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় - আমাদের বাবা’র মতো কি আমরা বাবা হতে পেরেছি? আমাদের বাবা'র জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা - HAPPY FATHERS DAY 2020. পরম করুণাময়ের কাছে পার্থনা করি পৃথিবীর সকল বাবা শান্তিতে থাকুন, সুখে থাকুন, হাসি খুশি থাকুন, নিরাপদ থাকুন। আর প্রতিটি সন্তানের কাছে অনুরোধ মাতাপিতাকে সময় দিন, তাদের প্রাপ্য সম্মান দিন, তাদের প্রাপ্য ভালোবাসা দিন।
বাবা দিবসের জনপ্রিয় কিছু ছবি:
১। কিছু বলার নেই, কিছু বলাও উচিত না। শুধু বলতে চাই আমরা এমন কেনো? কবে থেকে আমরা এমন হয়েছি?
২। সন্তান দেখতে যেমনই হোক বাবার কাছে সন্তান রাজপুত্র/রাজকন্যা। আর বাবা দেখতে যেমনই হোক না কেনো - সন্তানের কাছে বাবা একজন বীরপুরুষ। কুচকুচে কয়লা কালো বাবাও সন্তানের কাছে ধবধবে ফর্সা সুন্দর রাজা - বাদশাহ - সম্রাট।
৩। বাবা হচ্ছেন সন্তানের আদর্শ ও আদর্শ শিক্ষক। বাবা যা শিক্ষা দিবেন সন্তান তাই শিখবেন। সন্তান সব সময় বাবাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করেন।
৪। একজন বাবার কাঁধ তার সন্তানের জন্য সব সময় শক্ত মজুবত থাকে। সন্তানের দায়ভার যতোই হোক না কেনো বাবা হাসিমুখে বিনা অভিযোগে তা বহন করেন।
৫। একজন বাবা তার সন্তানকে যতোটুকু ভালোবাসা দিবেন সন্তান ততোটুকু ভালোবাসা নিঃসন্দেহে বাবাকে ফেরত দিবেন। (ব্যতিক্রম ব্যতিত)
৬। প্রাণীজগতে বাবা ও সন্তানের ভালোবাসা দেখেও আমরা শিখতে পারি বাবা ও সন্তানের ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত।
৭। ভয়ঙ্কর একটি হিংস্র প্রাণী সিংহকে দেখে অনুভব করা যায় একজন বাবা কি পরিমান ভালোবাসেন তার সন্তানকে। সন্তানের কাছে বাবা কখনো হিংস্র থাকেন না, সন্তানের কাছে বাবার পরিচয় একজন বাবা হিসেবে।
উপসংহার: বাবা মা এমন নাম যেই নামে সন্তান তার সত্তা ও পরিচয় পেয়ে থাকে। আর সত্তার সাথে পরিচয়ের সাথে কখনো অবমাননা অবমূল্যায়ন করা উচিত না। তাতে প্রকৃতি ও সৃষ্টিকে অবমাননা অবমূল্যায়ন করা হয়। তাতে এখন পর্যন্ত ফলাফল কখনো ভালো আসেনি - অতীত ও ইতিহাস তাই প্রমাণ করে।
ছবি: গুগল
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষ। নির্বাচিত পোষ্টে “উক্ত লেখাটি” স্থান দেওয়াতে সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:২৬