somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাম্বুরা আর জুতার ফিতা

১১ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাসপাতালে ডাক্তার রোগী দেখছিলেন। তার পেছনে ইন্টার্নি ডাক্তার। সঙ্গে আছেন ডাক্তারকে সাহায্যকারী। যাকে বলে কম্পাউন্ডার। দেখতে দেখতে ডাক্তার এক রোগীর সিটের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালেন। রোগী কিছু বুঝে ওঠার আগেই ডাক্তার রোগীকে ধমক দিয়ে বলতে লাগলেন, তোমাকে বলেছি টক জাতীয় কিছু খাবে না। অথচ তুমি জাম্বুরা খেয়েছো। রোগী ভয়ে থর থর করে কাঁপছে। না, স্যার আমি জাম্বুরা খাইনি। এবার ডাক্তার আরও জোরে ধমক দিয়ে বলেন, আবারও মিথ্যা কথা বলছো। কখনও আর টক জাতীয় কিছু খাবে না। এবার রোগী সব স্বীকার করে বলে, স্যার আমি খেয়েছি। আর কখনও খাবো না। তারপর ডাক্তার তাকে চেকআপ করে চলে যান। কম্পাউন্ডার তো অবাক। ওই বেটা জাম্বুরা খেয়েছে। স্যারের সামনে তো খায়নি। স্যার কিভাবে বুঝলো? ইতস্তত করতে করতে ডাক্তারকে জিজ্ঞেসই করে ফেলল। স্যার আপনি কিভাবে বুঝলেন যে ওই রোগী জাম্বুরা খেয়েছে? ডাক্তার বললেন, আরে রোগীর সিটের নিচে আমি জাম্বুরার টুকরা দেখতে পেয়েছি। তাই তাকে বলেছি। কম্পাউন্ডার বেটা খুবই চতুর। রোগীদের সামনে এমন ভাব দেখায় যেন সে ডাক্তারের চেয়েও বড় কিছু। পরদিনই সে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরতে থাকে। রোগীদের খোঁজখবর নিতে থাকে। হঠাৎ এক রোগীর সামনে গিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে, তুমি জুতার ফিতা খেয়েছো? সর্বনাশ, তুমি মানুষ না অন্য কিছু। রোগী চিৎকার করে বলতে থাকে, না স্যার আমি জুতার ফিতা খাইনি। আর জুতার ফিতা তো খাওয়ার কিছু নয়। সেটা আমি কিভাবে খাবো? কম্পাউন্ডার আরও জোরে চিৎকার করে ধমক দেয়। বলে, বেটা মিথ্যা বলার আর জায়গা পাও না। আমার সঙ্গে মিথ্যা কথা। সিটের নিচ থেকে জুতা বের করে বলে ওঠে, তাহলে এই জুতার ফিতা কোথায়? ডাক্তার জাম্বুরার টুকরা দেখে যেমন রোগীকে বলেছিলেন, তেমনি কম্পাউন্ডার সিটের নিচে ফিতা ছাড়া জুতা দেখে রোগীকে ধরে বসেন। সেটা খাওয়ার বস্তু কিনা তা দেখেননি। কম্পাউন্ডার আসলে ডাক্তারকে অনুকরণ করেছেন। বাঙালি জাতি নাকি অনুকরণ করতে খুব পছন্দ করে। তাই তো দেশের কোথাও একটি ঘটনা ঘটলে দেখা যায় এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পরপর একই ঘটনা ঘটতে থাকে। ইভটিজিংয়ের কথাই ধরা যাক। ইভটিজারের যন্ত্রণায় যখন এক কিশোরী আত্মহত্যা করে বসলো, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল আত্মহত্যার ঢেউ। এভাবে ইভটিজিংয়ের বলি হলো অনেকে। শিক্ষামন্ত্রী ছুটে গেলেন বিভিন্ন জায়গায়। শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দিলেন। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ গেল জেলায় জেলায়। সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে এক সময় তা কমে আসে। আবার যখন দেখা যায়, নেশাদ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেয়ার ঘটনা ঘটছে, তা-ও ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। আতঙ্ক সৃষ্টি হয় সর্বত্র। হাসপাতালে একের পর এক রোগী ভর্তি হতে থাকে। ক’দিন আগে বিরোধী দলের আন্দোলনে দেখা গেছে, পেট্রল বোমার ব্যবহার। এক পর্যায়ে তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। এতে দগ্ধ হয়েছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। আন্দোলন দমাতে পুলিশ কথায় কথায় গুলি ছুড়েছে। মরেছে মানুষ। তাও ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। এক সময় দেশের আনাচে কানাচে কিশোর-যুবকদের মধ্যে চুল বড় করে রাখার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। চুল বড় রাখার প্রবণতারোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাড়িয়ে লম্বা চুল কেটে দিতে দেখা গেছে তাদের। ভাল কিছু অনুকরণের চেয়ে মন্দটাকেই সমাজ গ্রহণ করে দ্রুত। এখন স্কুল-কলেজের ছাত্রদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। ফেসবুকে ফ্রেন্ডশিপ করতে ব্যাকুল তারা। পড়ার ফাঁকে, ক্লাসের ফাঁকে যুবকরা ফেসবুক দেখছে। আগে যেখানে শীতের রাতে লেপের নিচে বই নিয়ে ছাত্ররা পড়তো। এখন সেই হাতে উঠেছে ফেসবুক চর্চা। বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করা। আড্ডা দেয়া। সম্প্রতি যে অনুকরণ সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ব্যাংক লুটের ঘটনা। কিশোরগঞ্জের পর বগুড়ায় ঘটেছে একই কায়দায় সোনালী ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনা। আরও কি ঘটে দেশে কে জানে। আসলে ডাক্তারের জাম্বুরা থেরাপি অনুকরণ করতে গিয়ে কম্পাউন্ডারের মতো জুতার ফিতা খাওয়ার থেরাপি আবিষ্কার করছি আমরা। ফলে ঘটছে নানা ঘটনা। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি? দাদাকে জিজ্ঞেস করলে উল্টো ক্ষেপে যান তিনি। বলেন, আজ ১০ জন তোরা ল্যাংটা হয়ে রাস্তায় হাঁট, কাল দেখবি এক শ’ জন হাঁটছে। আর তুই এসেছিস্ উপায় খুঁজতে। জানিস্ না বাঙালি অনুকরণপ্রিয়। এ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা কঠিন।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×