somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সমাজ

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাই বড় ধন/রক্তের বাঁধনে/যদিও পৃথক হয়/নারীরও কারণে। এখানে কবি পুরোপুরি নারীকে দোষারোপ করেছেন। আবার দেখা গেছে, কোন কবি লিখেছেন ‘সংসার সুখের হয় নারীর কারণে।’ এখানেও নারী মুখ্য। আসলে সমাজে নারীর ভূমিকা কতখানি? সংসারেই বা কতখানি? আবার দেখা যায় আদর আপ্যায়নে নারীই সেরা। এখনও গ্রামে গেলে চাচী, খালা ও ফুফুরা যে আদর করেন তা অতুলনীয়। কোন কিছুর সঙ্গেই তার তুলনা হয় না। আর মাতো মা-ই। মায়ের আদর সেতো মায়ের আদরই। যাদের মা নেই তারা বুঝতে পারেন মার অভাব। আর যাদের মা থেকেও মার আদর আদায় করতে পারেন না তাদের মতো পোড়া কপাল আর কারও নেই। বিশ্ব বাবা দিবসে পিতাকে মনে করার বিশেষ কোন তাৎপর্য আমার কাছে নেই। বিশ্ব মা দিবসেও তাই। মা-বাবা সবসময় হৃদয়ে আছেন। থাকবেন। তাদের আলাদা করে ভাবার কিছু নেই। তারপরও মা ও বাবাকে বিশেষ মর্যাদা দিতে হয়তো এ দুটো দিবসের উৎপত্তি। তারপরও কথা থেকে যায়- একটা সময় এলে মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অনেক পুত্র। এখনও এমন অনেক পুত্র আছেন পিতা-মাতার খোঁজ নেন না। তাই হয়তো কোন পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে স্থান করে নিতে দেখা যায়। বিষয়টি ভাবলেই মনটা কেমন করে ওঠে। এও কি সম্ভব? কোন সন্তান বেঁচে থাকতে তার পিতার ঠিকানা হবে বৃদ্ধাশ্রম? ভাবলে মনটা কেমন করে ওঠে। যাকগে সেসব কথা বলে লাভ নেই। এখন সমাজটাই যেন এমন হয়ে ওঠেছে। বিয়ের পরই সন্তান আলাদা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। বউরা তার স্বামীকে নিয়ে আলাদা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সন্তান হলে তাকে দেখিয়ে তার ভবিষ্যৎ চিন্তা করতে স্বামীকে মনে করিয়ে দেন। একবারও ভাবেন না যার সন্তানকে আমি এ পরামর্শ দিচ্ছি সেই পিতাওতো তার সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন দেখা পিতার স্বপ্ন চুরমার আমি কিভাবে করি? বিষয়টি ভাবলে সমাজে এমন ঘটনা আর ঘটতো না। একটা সময় ছিল, যখন গ্রামে গ্রামে, ঘরে ঘরে দেখা যেত যৌথ পরিবার। একসঙ্গে রান্নাবান্না, একসঙ্গে খাওয়া সবই হতো। এখনকার বউ-ঝিরা এসব পছন্দ করেন না। তারা এখন স্বামীকে নিয়ে একা থাকতে পছন্দ করেন। যৌথ পরিবারকে তারা ঝামেলা মনে করেন। এ ঝামেলাই গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এমন ঐতিহ্য আরও অনেক আছে। আগে বিয়ে বাড়িতে সাত দিন আগে থেকেই নাইওরিরা আসতো। তারা পিঠাপুলি নিয়ে আসতো। বাড়িতে স্বজনদের মেলা জমতো। গায়ে হলুদের দিনে গীতে গীতে রাত পেরুতো। এখন সেই ঐতিহ্য আর নেই। এখন সবই হচ্ছে কমিউনিটি সেন্টারে। একবেলা খাবার খেয়ে সবাই কমিউনিটি সেন্টার থেকে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। নাইওরি যাওয়ার কোন ঝামেলা নেই। কেউ নাইওরি যাওয়ার চিন্তাও করে না। নাইওরি কালচার সমাজ থেকে উঠেই গেছে। অগ্রহায়ণে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়াতো বাড়ি বাড়ি। গ্রামের পর গ্রাম সাজতো অতিথিতে। ঘরে ঘরে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ি করার শব্দ ভেসে আসতো। এ গুঁড়ি দিয়ে হতো নানা জাতের পিঠা। এখন এসবই স্বপ্ন। ঢেঁকি ছাঁটা চালতো এখন নেই। তা কলের যন্ত্রের কাছে হারিয়ে গেছে। আগে গ্রামের বউ-ঝিরা ঢেঁকিতে ধান ভেনে চাল করতো। আর এ জন্য সবার ঘরে ঘরে ছিল ঢেঁকি। আজ দশ গ্রাম খুঁজেও ঢেঁকি পাওয়া যায় না। অগ্রহায়ণে ধান কেটে তা গরু দিয়ে মাড়াই করা হতো। বাড়ির উঠানে ধান মাড়াই কাজ চলতো রাতব্যাপী। কি যে আনন্দ তাতে। এ আনন্দ এখনকার সন্তানরা দেখবে কোথায়? তারা ধান থেকে যে চাল হয় সেটাই অনেকে জানে না। এ কারণে অনেক সন্তানকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়-বাবা ধান গাছ কত বড়? বদলে তো গেছে সবই। এখন আর পুকুরে পুকুরে দেশী মাছ পাওয়া যায় না। বাড়ির পুকুরেও হয় মাছ চাষ। আর চাষের মাছে হারিয়ে গেছে আসল মাছের স্বাদ। পুকুর কেন? নদীতেও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ হচ্ছে। গ্রামের পানতা ভাত দই দিয়ে খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা। যে দই খেলে হাতে মাখন লেগে থাকতো। এখন সেই দইও গ্রামে হয় না। দই খেতে হলে দোকান থেকে কিনে নিয়ে যায় গ্রামের মানুষ। কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সমাজ। ভাবলে কষ্ট হয়। আগের মতো শিশু-কিশোরদের হৈ-হুল্লোড়ও চোখে পড়ে না। গ্রামের মাঠে কিংবা খালি জমিতে গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা খেলার যে ধুম ছিল সেসব এখন আর নেই। জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু সেটাই ভুলে গেছে অনেকে। তাইতো গ্রামে হা-ডু-ডু খেলা দেখা যায় না এখন আর। এখন যা দেখা যায় তা হলো ক্রিকেট আর ফুটবল। এ দুই খেলাতেই সীমাবদ্ধ গ্রামের ছেলেরা। আর শহরে তো ছেলেমেয়েরা পড়তে পড়তেই সময় পার। খেলার সময় কোথায়? এসব নিয়ে যারা ভাববেন তাদেরও ভাবার সময় নেই। সভা-সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করেই সময় খতম। সব বাদ দিয়ে এখন সন্তানদের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বই আর বই। এখানেও নারীদের অবদান। ঘরে ঘরে সন্তানকে মায়েরা স্কুলে নিয়ে যাওয়া, বাসায় পড়ানো, কোচিংয়ে নিয়ে যাওয়া সবই তাদের করতে হচ্ছে। এরপর রান্নাবান্না তো আছেই। সন্তানদের ভাল রেজাল্টের পেছনে তাই নারীদের অবদানই বেশি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×