somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজা হবুচন্দ্রের সহিত বাঙ্গাল।

০৫ ই জুন, ২০১০ বিকাল ৪:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদা রাজা হবুচন্দ্রের দেশে স্বাদু জলের বড় আকাল পড়িল। দীর্ঘদিন বারিষ হয় না। মাঠের ফসলাদি জলের অভাবে বিনাশ হোইল। এমতাবস্থায় রাজ্য ত্রান সাহায্যের বড় জরুরত পড়িল। জলের অভাবে চারিদিকে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। প্রজাগণ রাজসভার হর্তাকর্তাদিগের নিকট ত্রানের আশায় নানান দাবি-দাওয়া তুলিল। রাজসভার সকলের এই ঘোর দূর্দিনে কোষাগার উন্মুক্ত করিয়া লঙ্গরখানা খুলিবার ব্যাপারে সম্মত হৈলেন। কিন্তু হাড় কিপ্টে রাজা হবুচন্দ্রেকে একথা কে বলিবে?কাহার ধড়ে দুইখানা মাথা! কেহই সাহস করিয়া উঠিতে পারিল না। সকলে মিলিয়া বাঙ্গালকে ছাই দিয়া ধরিয়া বসিল। বাঙ্গাল কিছুতেই তাদের না করিয়া পিছলাইতে পারিল না। রাজসভায় সস্তা বিনোদনের কাজ ছাড়া আর কিছুই সে পারে না বলিয়া দূর্নাম আছে। এবার তা ঘুচবে...সেই আশায় এই দুঃসাহস করিতে রাজি হৈল বাঙ্গাল।

কিন্তু রাজসভায় কথা পাড়িতে গিয়া বাঙ্গাল বুঝিল, ইহা মোটেও ছেলে খেলা নয়। তাহার হাটু কাপিয়া উঠে...গলা শুকাইয়া যায়। কিপ্টে রাজা গেল বছর ফেরিতে ডুবিয়া মরা সকল পরিবারকে একখানা করিয়া ছাগলের রশি দিয়া বাড়ি পাঠাইয়াছিল। জলের অভাবে এখনো কেউ মরে নাই...অবশ্য মরিতেও দেরি নাই। এবছর না মরলেও আগামী বছর না খেয়ে আদ্দেক মরবে নিশ্চিত। বাঙ্গাল ভাবিল...সোজাসাপ্টা রাজকোষ খুলিবার কথা বলিলে জুতো ছাড়া কিছুই মিলিবে না। তাই সে অনেক ভাবিয়া ভিন্ন পথ নিল।

পরদিন রাজসভার প্রভাতী অধিবেশনে বাঙ্গাল একখানা পুরনো ময়লা ধুতি... হাটুর কিছুটা উপরে পড়িয়া আসিল। সকলে মুখ টিপাটিপি করিয়া হাসিতে লাগিল। সবার পরনে চকচকে কাপড়চোপড়ের মাঝে মলিন বিমর্ষ বাঙ্গালের সুচিক্কন কৃষ হাটু বড়ই বেখাপ্পা লাগিতেছিল। ব্যাপারখানা রাজা হবুচন্দ্রের নজর এড়াইলো না। বাঙ্গালকে ডাকা হৈল।

"কিরে তোর কি হইয়াছে? ধুতিখানাও ঠিক মতো পড়িতে শিখিস নাই?" রাজা শুধান।
- জ্বী রাজা মশায়। বেয়াদপি লিয়েন না...আজ্ঞে রাস্তা ঘাটে বড্ড ধুলোতো তাই উঠিয়ে রেখেছি এক্টূ
"ক্যানো রে...ধুলো লাগ্লে ধুয়ে ফেল্লেই তো হয়...হেহে"... চারিদিকে হাসিতে কয়েকজন একে অপরের উপরে এলাইয়া পড়িল।
- "আজ্ঞে কাপড় ধোয়ার সাবানতো বাসায় রয়েচে...কিন্তু জল নেই"
- "বড় হাসালিরে...তোর বাসায় জল না থাকলে ধোপার কাছে দে..."
- "রাজা মশায়...আমার ধোপা গতকাল জল খাইতে না পাইয়া তেষ্টায় মারা গেছে"

চারিদিকে নিরবতা পড়িল। হবুচন্দ্র ক্ষিপ্ত হোইয়া তাহার ডিজিএফাইকে ডাকিলেন "প্রজারা পানির অভাবে মরিয়া জাইতেছে তোমরা আমায় সেই খবরটা দিতে পারিলে না...আমাকে শুনিতে হৈল নটাঙ্গি বাঙ্গালের কাছে...তাও আধা ঘন্টা নাটক করিবার পর!"

ডিজিএফাই বাহাদুর বিশাল গোফ নাড়ীয়া বলিলেন "খবর নিবার জন্য ঘোড়সাওয়ার পাঠাইতে চাইয়াছিলাম...কিন্তু রাজপ্রসাদ হৈতে এতটা পথ যাইতে ঘোড়ারো পানি খাইতে হয়...উহা পাইব কোথায়?"

পরদিন রাজা হবুচন্দ্র রাজ্যে নিয়ম জারি হোইল "প্রকাশ্যে কাপড় ধোয়া নিষেধ। ধুতি হাটুর উপরে পড়ীতে হবে"...লে হালুয়া!

--------------------------------------------------------------------------------------------------
এতটুকু স্বপ্ন দেখবার পরে বাঙ্গালের ঘুম ভাঙ্গল। হবুচন্দ্রের দেশে নয়...নিজের বাংলাদেশে। ফ্যানের পাখা ঘুরছে...কারেন্ট গেলেও সমস্যা নাই...আইপিএস আছে। রিমঝিম বরষাও এসে গেছে। কাথামুড়ি দিয়ে কষে ঘুম দিল সে। বাংলাদেশের সব মানুষই এখন আরামে ঘুমুচ্ছে। বিদ্যুত নিয়ে তারা আর ভাবে না। এ বছরটা না হয় গেল। আগামী বছর গ্রীষ্মে? একদিকে সরকার এডিবির ঋণে গ্যাস পাইপ বসিয়ে যাচ্ছে। গ্যাস কোথায়? পাচ বছর আগে আমরা খাম্বা পুতেছি। এখন বিদ্যুত নাই।
দুইকোটি মানুষের কংক্রীটের জঙ্গলে কি শান্তিতেই না আমারা আছি। ১১৭জন পুড়ে মরেছে? দুই দিন চুক চুক করে ঢাকাবাসি। আরো ডজন খানে ভবণ ধসে মরেছে? আহারে। ওরা অভাগা ছিল। আমিতো বেচে আছি। দামি ফ্লাটে আছি...লক্ষাধিক টাকায় কেনা...হুহু...হেল্বে না ফাটবে না...ভূমিকম্প? সেটা আবার কবে হয়েছিল?

ঢাকাবাসি আবার ঘুমায়। আগামী বছরের চিন্তা কে করে? আগামীকালের চিন্তাইতো মাথায় আসে না। হবুচন্দ্রের দেশে সবাই সুখেই থাকে। যাদের সুখ শেষ হয়...তারা মারা যায় বা পুড়ে যায় বা কোথাও মাথা থেতলে চাপা পড়ে থাকে...শিয়াল-শকুনেরা তাদের খোজ পায়। ঢাকাবাসী তাদের খোজ রাখে না।
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×