somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

কোরবানীর গরু কেনা, হারিয়ে ফেলা এবং কিছু খন্ড গল্প!

২৮ শে জুন, ২০২৩ রাত ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
আমি এবং আমাদের এপার্ট্মেন্টের এক এক্স বড় ভাই কোরবানীর গরু কিনতে আফতাব নগর গরু হাটে যাই, আফতাব নগরের গরু হাটের সাইজ কত বিশাল তা বুঝাতে পারবো না, তবে আমার ধারনা এখানে লাখ দুয়েক গরুর সমাবেশ হয়েছে আজ। এমাথা ওমাথা দুই মাইলতো হবেই! যাই হোক, হেঁটে হেঁটে প্রায় শেষ মাথায় যাবার পথে অনেক গরুর দেখা ও দাম হয়েছে কিন্তু কেনা হয় নাই, একদম শেষের দিকে একটা গরু মিলে গেল এবং কেনা হয়ে গেল, আমি আর বাগড়া দেই নাই, এমনিতে আমি গরু কেনায় ভাল না, আমি দরদাম কম করি, যদি ভুল হয় এই জন্য চুপ থাকি, যেন দোষ না পড়ে!

২।
গরু কেনার পরে বড়ভাই বললেন, আপনি নিয়ে যান, আমি রিক্সায় চলে যাই, মনে কিছু করিয়েন না, আমি আর কি মনে করি, আমি তো এটাই চাইছিলাম! ফলে কন্টাকে গরু বাজারের এক অপরিচিত রাখাল বালক নিলাম, গরু নিয়ে আমরা দুইজন রাওয়ানা দিলাম, আফতাব নগর থেকে মালিবাগ! বালক সামনে আমি পিছনে, আফতাব নগরের আঞ্চলিক পাস্পোর্ট অফিসের উল্টা পাশে চা দোকান দেখে আমি বালকটিকে গরু খুঁটিতে বাঁধতে বললাম, চল চা পানি খাই। ছেলেটা আমার কথা শুনলো, রাস্তায় ভীষন ভীড়, সবাই গরু ছাগল কিনে বের হচ্ছে। ছেলেটা চা না খেতে চাইলে ওকে কোক এবং পান খাওয়ালাম, আমি যথারীতি! বিল দিবো, একশ টাকা ভাংতি ফেরত নিবো, এই সময়ে দেখি ছেলেটা এবং গরু নাই! নাই তো নাই, হাজারো গরু মানুষের ভীড়ে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই আমি ঘেমে বৃষ্টি ভেজা! আশে পাশে কেহ কিছু বলতেই পারছে না! এই বুঝি আমার গরু হারিয়ে গেল! আমি শেষ! বার বার মনে হচ্ছিলো, এমনিতে এবারের গরুর টাকা যোগাড়ে কষ্ট হয়েছ্‌ এখন আবার জরিমানার টাকা কি করে যোগাড় করবো? এই কয়েক মিনিটের অনুভুতি আমি আপনাদের আসলে লিখে বুঝাতে পারবো না! শুধু এটুকু বলি, আমার পুরো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পুরাই ঘামে ভিজে গিয়েছিল। কি করবো, কাকে এবং কোথায়, কিভাবে গরু ও ছেলেটাকে খুঁজে পাব তা আমার মাথায় ধরছিলো না!

৩।
আফতাব নগর থেকে মালিবাগ আস্তে কমের পক্ষে শদুইখানেক লোক গরুর দাম কত হয়েছে তা জিজ্ঞেস করেছেন? আমি সবাইকে প্রাণ খোলা হাসি দিয়ে দাম জানিয়ে দিয়েছি। দাম শুনে একেক জন একেক কথা বলেছেন!
; মাশাআল্লাহ
; ভাল হয়েছে
; আজ দাম কমেছে
; দাম বেশি দিয়েছেন, ২০ হাজার কম হলে ভাল হত
; খাটি দেশী গরু পাইছেন
; কোরবানীর গরুর দাম দিয়ে আর কি হয়
; কাল সকালে কিনতে পারতেন
; কই থেকে কিঞ্ছেন
; মাশাআল্লাহ
ইত্যাদি ইত্যাদি।

৪।
আমাদের দেশে শহুরে নারীরা কোরবানীর গরু কেনা এবং গরু নিয়ে বাসায় ফেরার কাজটা প্রায় একটা করেন না, হাজারে হয়ত এক দুইটা হতে পারে। আমি মনে করি গরুর রশি ধরে নারীদেরও অভিজ্ঞতা নেয়া দরকার, তা হলে কিঞ্চিত পুরুষের কষ্ট তারা বুঝতে পারবে। হাজারো মানুষকে উত্তর দিতে দিতে, যানযটের রাস্তা ভেঙ্গে একটা গরুর ছোঁয়ালের দড়ি ধরে এবং আশে পাশের আরো উত্তেজিত গরু থেকে বাঁচিয়ে অনেক পথ হেটে বাসায় নিয়ে আসা এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা!

৫।
ঠিক রামপুরা টিভি ষ্টেশনের দক্ষিনে একটা গলি আছে, এই পথে অনেকে বনশ্রীতে প্রবেশ করেন, এই রাস্তার মাথায় হয়ত রিক্সা বা বাসের জন্য এক হিন্দু দম্পতি দাঁড়িয়ে ছিলেন, আমি নারী সঙ্গীর হাতের শঙ্খ বালা ও মাথায় সিঁদুর দেখে বুঝতে পারছিলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম এই দম্পতি গরুর দাম জিজ্ঞেস করবেন না এবং করতেই পারেন না! আমার সব অভিজ্ঞতা উড়িয়ে দিয়ে সেই নারী পুরুষ প্রায় এক সঙ্গেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কত দিয়ে কিনলেন? একেই হয়ত বলে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ কিংবা সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে!

৬।
রামপুরা বাজারের কাছে আস্তে রাস্তায় মটর সাইকেলে সটানে বসে সিগারেট টানা এক যুবককে আমার দিকে চেয়ে দেখতেই আমি নিজেই গরুর দাম অগ্রীম বলে দিলাম, গরু দাম বলে আমি হেসে দিলাম, কেহ জিজ্ঞেস না করলেও আমি কেন দাম বলে যাচ্ছি! যুবকটি আমাকে নিশ্চয় পাগল ভাবছে আজ, অথবা ভাবছে, জীবনে এই মনে হয় প্রথম কোরবানীর গরু কিনেছে!

৭।
আমাদের গরুটা অপেক্ষাকৃত বেশ ভদ্র মনে হল, তাকে মেইন রোডে উঠিয়ে আনার পরে সে বার বার ফুটপাতে উঠার চেষ্টা করছিলো, আমার ধারনা সে বুঝতে পারছিলো, শহরের বড় রাস্তার পাশে ফুটপাতেই হাটতে হয়!

৮।
গরু নিয়ে এপার্ট্মেন্টে পৌঁছার পরে গেইটে সেই বড়ভাইয়ের সাথে দেখা, তিনি বললেন, অনেক কষ্ট করেছেন, অনেক সময় লেগেছে! এপার্ট্মেন্ট ম্যানেজার মনে হয় তেল দিয়েছে, বলল, স্যার ভাল গরু কিনেছেন!

৯।
অনলাইনে কিছু গোলামের পুতাইন গরুর ছবি প্রকাশে বাঁধা দিচ্ছেন দেখলাম, তাদের যুক্তি বেশ! কিন্তু এই যে গরু কিনে প্রায় পনে তিন কিমি হাটিয়ে নিয়ে বাসায় ফিরলাম, তাতে আমি বুঝতে পারছি, কেন মানুষ গরুর ছবি প্রকাশ করছেন, এত কষ্টের পরে গরুর ছবি প্রকাশ না করা আসলেই একটা অভদ্রতা, এটা একটা আলাদা আনন্দ ও বেদনা! গোলামের পুতাইনেরা দুনিয়ার সব কিছু তথা আফ্রিকান বৃহৎ অ্যাস সহ্য করতে পারলেও মুসলিম ধর্মের অনুশাসন পছন্দ করে না!

১০।
যাই হোক, এতক্ষন যারা এই লেখা পড়েছেন, তাদের নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা হচ্ছে, গরুটা যে হারিয়ে গিয়েছিল, তা খুঁজে পেয়েছি কি করে! আমি সেই চা দোকানের সামনে কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভাবলাম, ছেলেটা গরু নিয়ে পিছনের দিকে নিশ্চয় যাবে না, এটা অনেকটা মনের ইচ্ছা ছিলো, আমি আফতাব নগরের মেইন গেইটের দিকে দৌড়াতে থাকলাম, শতশত গরু মানুষ গাড়ি কাঁদা গোবর ভেদ করে আমি দৌড়াতে থাকি, প্রায় মিনিট দশ পার করে আমি দূরে দেখলাম ছেলেটা গরু নিয়ে এগিয়েই চলছে, ছেলেটা হয়ত পিছনে ফিরে আমাকে দেখার চেষ্টাই করে নাই, সে ভেবেছে আমি পিছনে আছিই! গরু দেখে আমি আরো ঘেমে গিয়েছিলাম, বিধাতাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম, তবে ছেলেটাকে কিছু বলি নাই, গরু নিয়ে সটকে পড়া তার ইচ্ছা ছিলো না, সে একজন সৎ রাখাল বালক, যা ভুল আমিই করেছি, আমার চিন্তা ভুল ছিলো, এভাবে একজন অপরিচিত রাখালকে নিয়ে একা গরু নিয়ে বাসায় ফেরা আমার মত একজন গাধাই করতে পারে এবং পথে থেমে চা পানের ইচ্ছা করতে পারে আমার মত একজন গাধাই!

(লেখাটা ব্লগে প্রকাশিত, ছবিটা গরু নয়, গাধার! রাখাল ছেলেটাকে নিজ পকেট থেকে অতিরিক্ত বকশিস দুইশত টাকা দিয়ে মনের দুঃখ দূর করেছি, ছেলেটার মনে কোন পাপ থাকলে এবং উল্টা দিকে চলে গেলেই আমি আজ নিজেই কোরবান হয়ে যেতাম!)

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২৩ রাত ১:৩৯
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×