somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুটুলচাচার কনে দেখা।।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টুটুল চাচা।আমার চাচাত চাচা।বছর দশ পনের আগে এমেরিকায় পাড়ি জমাইয়াছিলেন।তাহার জুলফি অঙ্কিত কালো রেশমি স্টাইলিশ চুল দেখিয়া কাহারও বুঝিবার উপায় নাই তাহার বয়স ঠিক কোন দশকের ঘরে অবস্থানরত পঞ্চাশ নাকি ষাটের ।তবে দুষ্টু লোকেরা নানা কথা কহিয়া বেড়ায়। কারণ তিনি এখনও বিয়ের পিড়িতে বসিতে পারেন নাই কিন্তু তাহাতে কি? চাচার যৌবন সদা বিভাময়।দেশ থেকে দুইদিন পর পরই ইমেইলযোগে নিত্যনতুন মনোহরিণির ছবি পাঠানো হয়।কিন্তু হাজার জাতির বাস যেই দেশে সেইখানে বসিয়া বংগললনা নির্বাচন যে দুঃসাধ্যকর্ম তা এতদিনে বোধগম্য হইয়াছে। তাই আমরাও সে কর্মে ক্ষ্যন্ত দিয়াছি।


(আর একটা কথা বলিয়া রাখা উচিত মনে করিতেছি।বছর তিনেক আগে টুটুল চাচা তাহার পছন্দের মেয়ের শখানেক গুণাবলি বিন্যস্ত করিয়া এক ফ্যাক্সবার্তা পাঠাইয়াছিলেন।সেই থেকে শুরু।আমরা কুড়িচারেক চাচাত ভাইবোন বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘুরিয়া ঘুরিয়া প্রায় তিনশখানা ছবি যোগাড় করিয়াছি।এবং তাহা হইতে লিস্টখানার সাথে মিলাইয়া মিলাইয়া প্রাথমিকভাবে ৯৯ জনকে আপাত বাছাইপর্বে রাখা হইয়াছে।চাচা আসিলেই দ্বিতীয় ও ফাইনাল পর্বের বাছাই কর্ম সমাপ্ত হইবে আশা করি)


কিন্তু ইদানিং আমার দাদীমহাশয়া খুব চিন্তিত।দেশে দিনে দিনে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে নাগালের বাহিরে চলিয়া যাইতেছে তাহাতে তাহার পুত্রভাগ্যে শ্বশুরালয়ের জামাই আদর নিমিত্তে প্রস্তুতকৃত সাগরানা,কিংবা পোলাও রোষ্ট দূরে থাক আলুর সহিত পেয়াজ মিশাইয়া ভর্তা জুটিবে কিনা সন্দেহ।তিনি টিভিতে নিত্য পন্যদ্রব্যের মুল্য দেখেন আর টুটু টুটু করিয়া রব তোলেন। যৌবনের তাড়নায়ই হোক আর দাদীর কান্নাকাটিতেই হোক চাচা এবার দেশে আসিয়াছেন গাটছড়া বাধিবেন বলিয়া।

লিস্ট কড়চাঃ
টুটুলচাচা সুপুরুষ তাহার উপর এমেরিকা ফেরত বলিয়া কথা।তাহার রুচির বিকশিত শোভা দেখিয়া সকলে ধন্যি ধন্যি রব ক্তুলিয়া দিল।তাহার উপর তিনি বুদ্ধিমান।তিনি বারে বারে বলিয়াছেন মেয়েকে তুলি দিয়া অঙ্কিত অপ্সরী হইতে হইবে এমন আক তিনি কখনই কষেন না।তবে তাহার গায়ের রঙ হইতে হইবে ফর্সা।ধবধবে সাদাটে ফর্সা না দুধের মধ্যে হলুদ দিয়ে পারিলে তাহার মধ্যে কিঞ্চিত আলতা ঢালিলে যে নৈসর্গিক রঙ বাহির হয় ঠিক এইরকম একখানা কন্যার পাশে উপবেষ্ঠিত হইবার তাহার বহু দিনের তামান্না।তাই এইটাকে তিনি তাহার লিস্টের এক নম্বরে স্থান দিয়াছেন।

তিনি আরো বলিয়াছেন লম্বায় তাহার সহিত মানানসহি হইলেই হইবে শুধু লক্ষ্য রাখিতে হইবে পাত্রী যেন কোনক্রমেই স্বাস্থ্যবতী না হয়।কারণ এইরকম জড়পিন্ডতে তাহার নাকি বডড এলার্জী।

ঠোট নাক মুখ কেমন হইবে,দেহাঙ্গের কোথায় কতটুকু ভাজ থাকিবে কিংবা একটা সবুজশাড়ীতে তাহাকে কেমন দেখাইবে?এসব কথা তিনি ঘুণাক্ষরেও উল্লেখ করেন নাই কিন্তু অপয়া কাগজখানা কেমন করিয়া যেন এসব কথাই ব্যক্ত করিতেছে বার বার।

কাগইজখানা পাইবার পর এমন একখানা আয়তলোচনা,অপরূপা অপ্সরীকে কল্পণা করিয়া দুলাভাইগণেরা ঈর্ষান্বিত হইতে লাগিলেন আর বোনেরা গর্বে বুক ফুলাইয়া কহিতে লাগিলেন "আমাদের ভাই বলিয়া কথা।"

এবার মেয়ে দেখার পালাঃ
মাস দুএকের ছুটি লইয়া টুটুলচাচার দেশে আগমন।বাড়িময় এমেরিকা এমেরিকা গন্ধ।আমরা ভাতিজা ভাতিজির দল সেই গন্ধে বিভোর হইয়া তাহার চতুর্দিকে ঘুর ঘুর করি।চাচা আজ বসিয়াছেন তাহার সেই লিস্টি নিয়ে।আর হাতে নিরানব্বইএর ধাক্কা।শুনিয়াছিলাম নিউমার্কেটে শাড়ী বাছাই আর রোকেয়া হলে মেয়ে বাছাই করা নাকি একই কর্ম।সাধ্যি থাকিলে নাকি সবকয়টাকে ঘরে তুলতে মন চায়চাচাজানের চেহারায়ও অস্পষ্টভাবে সেই কথাখানাই স্পষ্ট হইতেছে।

খোলা হাওয়ায় পারিলে সব মেয়েকেই গিলিয়া খাওয়া যায় কিন্তু আপনার করিয়া একটাকে ঘরে তোলা--হায় বিধি এরচেয়ে কঠিন কর্ম জগতে বুঝিবা দ্বিতীয়টি নাই।টুটুলচাচা নিশ্বাস ফেলিলেন।

একখানা ছবি হস্তগত করিয়া তিনি উহা নাড়াচাড়া করিতেছেন।বিপদ্গ্রস্থ কিম্ভূতকিমাকার চেহারা তাহার।৪০সেকেন্ডের জন্যে চোখ বন্ধ করিলেন।হয়ত এতদিনের লালিত স্বপ্নের সহিত ছবিখানা মিলাইয়া নিতে চাহিতেছেন।চোখ খুলিলেন।ছবিখানা এগিয়ে দিলেন আমার দিকে।বুঝিলাম তাহার মাথাখানা সত্যি সত্যিই ঘুরাইয়া গিয়াছে।৯৯খানা ছবিকে যদি ৩ ক্যাটাগরিতে ফেলিয়া দিই তাহলে চাচার ধৃত ছবিখানা ২য় শ্রেনির শেষেরদিকেই স্থান করিয়া নিবে। হায়রে চোখ কখনও কখনও নিজের সহিত এমনতর বিশ্বাসঘাতকতাও করিয়া থাকে~!~!~!~

প্রথম মেয়ে দেখাঃ
প্রথম মেয়ে দেখিতে চলিয়াছেন চাচাজান।দাদী আয়াতুল কুরসী পড়িয়া তাহার আপাদমস্তক ঝাড়িয়া বলিলেন,বাবারে স্মার্ট মেয়ে খুজিছ খোজ তবে সে যেন আমার ঘরের লক্ষ্মী হইয়া বসত করে সেই বিবেচনা করিতে যেন না ভুল হয়।কথাখানা মাথায় রাখিও।

গাড়ি অবধি আগাইয়া আসিলেন দাদাজান।দরজা লাগাইতে লাগাইতে কহিলেন মেয়েটা নামাজকালাম পারে কিনা খোজ নিও সযতনে।অবশেষে একদিনত সকলকে মরিতেই হইবে।
আমি মনে মনে জপিলাম লে হালুয়া আর কত ম্যাটারিয়াল জুটিবে ইহাতে।।



এর মধ্যে একমাস হইয়াছে গত।কোন মেয়েই ফ্যাক্সের বার্তা পূরন করিতে পারিতেছেনা দেখিয়া চাচা আমাকে বারান্দার এককোণে ডাকিয়া শুধাইলেন,

মনি লিস্টের একনম্বরটা একটু মোডিফাই করিলে কেমন হয় বলত?

আমি হায় হায় রবে আর্তনাদ করিয়া উঠিলাম,"এমেরিকান পাত্র বলিয়া কথা"।

চাচা আমার স্বগোক্তি দেখিয়া মুষড়িয়া পড়িলেন।আমার মাথায় হাত রাখিয়া বলিলেন,দুধের সাথে আলতার রঙ না থাকিলেও মেয়েদের খুব একটা খারাপ লাগেনা।

না না এ হয়না---------হাজার হোক-------------
চাচা আমাকে বুঝাইলেন।আমি বুঝিলাম।বাসায় ঘোষণা করিয়া দিলাম একনম্বর মোডিফাই করা হইয়াছে।

আরও এক সপ্তাহ পার হইল।সময় কমিতেছে ওদিকে লিস্টে ক্রস বাড়িতেছে ।এমনি ফাপড়ে পড়া দূর্বিসহ যখন পরিস্থিতি আমি চাচাকে বলিলাম,
বিয়ে বাতিল ঘোষণা করা হউক।সামনেরবার আসিয়া না হয়---------।

টুটুলচাচার মুখখানা হঠাতই ভচকাইয়া গেল।মুখ দিয়ে বের হল অস্পষ্ট "আ" ধ্বনি। যেন ১০০টনই কোন ট্রাক তাহার মুখের উপর দিয়া চলিয়া গিয়াছে।

বুঝিলাম এতদিন তিনি ভালোই ছিলেন তবে এখন আর দিন চলিবেনা---------------।

এখন চেতনে অচেতনে অদেখা নিশিকাব্যের জন্যে তাহার বুকের ভিতর অজানা ব্যাথারা জাগিয়া ওঠে।এখন আর তিনি দিবারাত্রি বউ বনাম শ'খানেক গুণাবলির পারমুটেশন আর কম্বিনেশনের ছক আকেন না।

শেষ কথাঃ
আমরা সবাই আজ দল বাধিয়া মেয়ে দেখিতে চলিয়াছি।দাদা দাদী,চাচা চাচী, ফুপাফুপু সকলেই আজ খুব করিয়া সাজিয়াছেন।আমরা সকলে অঘোষিতভাবে ইহাও জানি যে আজ টুটুলচাচার বিবাহও সে মেয়ে যেমনতরই হউকনা কেন।কারণ আমার টুটুলচাচা আজ অনুধাবিত হইয়াছেন "বাত্তি নিভাইলে ধলা কালা সব মাইয়্যাই এক"।

উপগল্পঃ
আমার রাতুলচাচাও বিয়ে করলেন কয়েকদিন আগে।অদ্ভূত মানুষ এই রাতুলচাচা।বিয়ের আগে ঘোষনা দিলেন তার জন্যে এত মেয়ে খোজার দরকার নেই।প্রথম যে মেয়েকে তিনি দেখবেন তাকেই বিয়ে করবে কারণ সে এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি।।আর দুই একদিন দেখে কারও কিছুই বোঝা যায়না।আমি যদি ভালো হই সেও ভালো হতে বাধ্য।ওমা বলে কি ?এই নাকি ঢাকা ভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করা ছেলের কথা।যা পাবে তাই নেবে।ছি ছি পড়ে গেল গেল বাড়িতে।।

মোর‌্যাল অফ দ্যা স্টোরিঃ আমার দুই চাচীই অসম্ভব ভাল।একজন আমাকে অনেক কিছু দেয় বলে আরেকজন ?আমি তারমত হতে চাই বলে।।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:১৬
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×