আমাদের দেশে মানুষের জীবন ক্রমেই সস্তা হয়ে আসছে । ষোল কোটি মানুষের দেশে কখন কে কিভাবে মরছে কাত জনেই বা খবর রাখছে । কোন কোন মৃত্যু মাঝে মাঝে আমাদের মনে দাগ কাটে আমরা ব্যথিত হই আমরা উত্তেজিত হই কিছু দিন পরে আমরা আমার সব ভুলে যাই ।গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর সার্ক ফোয়ারার কাছে দুই বাসের ভয়ংকর প্রতিযোগিতায় হাত হারাতে হয়েছিল তিতুমীর কলেজের ছাত্র পিতা-মাতা হীন পরিবারে সন্তান রাজীবকে কয়েকদিন মৃত্যু সাথে যুদ্ধ অবশেষে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হতে হয়েছে রাজীবকে । ভেবেছিলাম রাজীবের মৃত্যু সাধারন মানুষের মানে যে ভাবে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে তার প্রভাব হয়তো আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মাঝে ও পরবে । আমরা হতভাগা জাতি আমাদের দুঃখ যন্ত্রনা কখনো ই মসনদে বসে থাকা ব্যক্তিরা অনুভব করতে পারে না । তার শেষ প্রমান গত ২৯ জুলাই রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মিম নামের শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় । প্রতিটি মৃত্যুই আমাদের কষ্ট ও যন্ত্রনাদের আর সেই মৃত্যু যদি হয় কোন অস্বাভাবিক ভাবে তা হয় আরো বেশি কষ্টের ও যন্ত্রনার । আর মৃত্যুকে কখনো ই সংখ্যায় নির্নয় করা সম্ভব নয় । মাঝে মাঝে আমাদের রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন মৃত্যুকে নানা সংখ্যায় নানান ভাবে নির্নয় করেন । ২৯ জুলাই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন,"ভারতে গতদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা গেছে, এগুলা নিয়ে তো ওরা এত কথা বলছে না, আপনারা এই ৩ জন মারা যাওয়া নিয়ে এত কথা বলছেন কেন ? " নৌ মন্ত্রী শাজাহান খানের হাস্যোজ্জ্বল এমন মন্তব্য জাতিকে এক দিকে যেমন ব্যথিত করেছে অন্য দিকে করেছে স্তম্ভিত । একজন দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী কিভাবে ২ বা ৩ জন কিশোর শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটনায় কিভাবে হাসতে পারে সেটাই একটা বড় প্রশ্ন ? একজন বিবেকবান মানুষের পক্ষে কখনো ই এমন আচরন সম্ভব নয় । এর আগেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানান আন্দোলনকে নিয়ে নানান ধরনের কুরুচিপুর্ন মন্তব্য করেছেন শাজাহান খান । এর আগেও সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের পর সারা দেশ যখন যন্ত্রনা রাগে ক্ষোভে উত্তাল তখন শাজাহান খানের নানান মন্তব্য জাতিকে স্তম্ভিত করেছিল তাই পরোক্ষ মদদে শহীদ মিনারের পাদদেশে পরিবহন শ্রমিকদের হাতে অপদস্ত হতে হয়েছিল দেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন সহ দেশের বেশ কয়েক জন বরেন্য ব্যক্তিকে ।
আমাদের দেশের পরিবহন শ্রমিক ও মালিকেরা যে কত টা ভয়ংকর এটা প্রমান মিলেছে গত ২১ জুলাই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল হত্যার মধ্যদিয়ে । পায়েল হানিফ পরিবহনের যাত্রী হয়ে মায়ের কোল থেকে ফিরছিলেন নিজ ক্যাম্পাসে । পায়েলের আর ফেরা হয়নি যানজটে আটকে থাকা গাড়ী থেকে পায়েল নেমেছিলেন যানজট ছুটে যাওয়ায় ড্রাইভার গাড়ী নিয়ে ভো টান পায়েল গাড়ীর পিছনে ছুটতে যায়ে আহত হলেন হানিফ পরিবহনের ড্রাইভার সুপার ভাইজার হেলপার আহত পায়েলকে হাসপাতালে নেয়ার পরিবর্তে নদীতে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করলো । এর চেয়ে ভয়ংকর আমানবিক কাজ আর কি হতে পারে ? আহত পায়েলকে হাসপাতালে নিলে হয়তো প্রানে বেঁচে যেত । আথচ ওরা পায়েল কে বাঁচতে দেননি । এটা ও কি দুর্ঘটনা ? রাজীব ও মিমের মৃত্যু নিয়ে কোমলমতি শিশুদের আন্দোলনে যখন সারাদেশ যখন উত্তাল তখন ও কিন্তু মোটেও চিন্তিত নয় আমাদের পরিবহনের চালকরা ৩১ জুলাই ২০১৭ ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার গোমতা এলাকায় ইসহাকিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী ফুটপাতে দাড়িয়ে থাকা আকলিমা আক্তারের উপর তুলে দেয়াহয় চলন্ত ট্রাক ঘটনা স্হলে মারা যায় আকলিমা আক্তার আহত হন তার বান্ধবী তামান্না ।
আমাদের সড়কের এমন চিত্র প্রতিদেনের সেন্টার ফর ইনজ্যুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)-এর জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৪ জন নিহত হয় তার মধ্যে ১৪ জন ই শিশু ।মৃত্যুকে কোন ভাবে সংখ্যায় নির্নয় করা কোন সভ্যসমাজে মানায় না প্রতিটি মৃত্যু একটি পরিবারের আজীবনের কান্না । কোন আলোচিত ঘটনার পর ই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা খুব ঝাকিদিয়ে নরেচরে বসেন এতে আমরা প্রত্যেকবার ই ভাবি হয়তো এবার একটা সুষ্ঠ সমাধান হবে । কিছুদিন পর যেই কপাল সেই মাথা । আমরা চাইনা সড়কে মৃত্যু মিছিল আর দীর্ঘ হউক । পরিবহন শ্রমিকদের দায়িত্ব ও সরকারে কর্তব্যই পারে সড়কে এই মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:২৭