somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুজাক্কির হত্যার দায় সবার।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির নোয়াখালীর স্হানীয় সাংবাদিক ২৫ বছর বয়সী বুরহানউদ্দিন মুজাক্কির দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তাবাজারের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি। বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির মারাযান ২০ ফেব্রুয়ারি রাত এগারোটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্হায়। মুজাক্কিরের মৃত্যু কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। মুজক্কির কে জীবন দিতে হয়েছে ক্ষমতালোভী ক্ষমতার দখলদার তথাকথিত কিছু রাজনৈতিকজীবিদের হাতে। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট বর্তমান সময়ে তথাকথিত রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি আলোচিত অধ্যায়। ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার কিছু বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড ই এই আলোচনার জন্মদাতা। হঠাৎ করেই কিছুদিন আগে নিজ দলের স্হানীয় সাংসদ ও নেতাকর্মীদের নিয়ে নানান মন্তব্য করে তিনি সতী সিদ্ধি হতে চেয়ে ছিলেন এমন কি বিগত নির্বাচনের সুষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অনেকেই তার ঐ বক্তব্যের পর তাকে বাহবা দিয়ে বীর পুরুষ বানিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্ত বাস্তবতায় তিনি হলেন চরম স্বার্থ পর কাপুরুষ একজন তথাকথিত রাজনীতিজীবি। কথায় আছে খুটার জোড়ে মেড়া নাঁচে। ঠিক তদ্রুপ কাদের মির্জার খুটা তারই বড় ভাই ওবায়দুল কাদের। যদি ওবায়দুল কাদের সাহেব তার ভাইকে পেছন থেকে শক্তির জোগান না দিতেন তা হলে এত দিনে বৃষ্টির পানির স্রোতেই হারিয়ে যেতেন কাদের মির্জা। কাদের মির্জা বা নোয়াখালীর স্হানীয় রাজনীতি নিয়েই নয় বরং বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের তথাকথিত রাজনীতি নিয়ে লিখতে ও মনের মাঝে কোন উপলব্ধি পাই না। তার পরে ও লেখি বা লেখার চেষ্টা করি। আজ আমার লেখার মুল বিষয় ই হলো বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির৷ টগবগে যুবক একজন উদিয়মান সাংবাদিক খুবই অল্প বয়সে জীবনের ইতি টানতে হলো স্হানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদলের হীন স্বার্থ আদায়ের তথাকথিত রাজনীতি।

গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টার দিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাসদর চরফকিরা ইউনিয়নের চাপরাশীরহাট বাজারে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির (২৫)। গত শনিবার রাতে তিনি রাজধানীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মুজাক্কিরের মৃত্যু দেশের মানুষের মন কতটুকু প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে জানিনা তবে তার মৃত্যু আমাকে ব্যথিত করেছে মানুষিক ভাবে আহত করেছে। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ক্ষমতার দখলের জন্য নয় নিজের কোন ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য নয় এমনকি এটা কোন নিছক দুর্ঘটনা ও নয়। মুজাক্কির গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন একটি রাজনৈতিক দলের দুই গ্রুপ কুকুরের আধিপত্য বিস্তার ও নিজেদের প্রভাবশালী প্রমানের যুদ্ধে। নিলজ্জ ক্ষমতা দখলের কাছে জীবন উৎসর্গ করতে হলো মুজাক্কিরকে। এর আগে ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুরের মনিরামপুরে তৎকালীন পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরুর বাড়ীর সামনে আওয়ামীলীগের ই দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনরত দৈনিক সমকালের তৎকালীন শাহাজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলে মেয়র ও আওয়ামী লীগের নেতা মিরু সহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয় পরে মিরু সহ অনেককে গ্রেফতার ও করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ মিরু সহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেলে ও সকলই আজ মুক্ত আকাশের নীচে হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছেন। বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন একটা মামুলি ব্যাপার কারো ব্যক্তি স্বার্থে আঘাত লাগলেই নির্যানের শিকার হতে হয় সাংবাদিকদের বিশেষ করে আমাদের মফস্বলের প্রান্তিক সাংবাদিকদের এমন কি জীবন পর্যন্ত দিতে হয়। এর আগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সাংবাদিকদের জন্য এক মৃত্যু পুরীতে পরিনত হয়েছিল। আজ সমগ্র বাংলাদেশ ই সাংবাদিকদের জন্য আতংক হত্যা নির্যাতনের সাথে নতুন মাত্রা পেয়েছে সাইবার সিকিউরিটি আইনের কালো অধ্যায় ৫৭ ধারা ৩২ ধারা।

২০০০ সালে ১৬ জুলাই যশোহরে নিজ অফিসে দিনের আলোয়ে নিজ অফিসে খুন হয়েছিলন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার স্হানীয় সাংবাদিক শামসুর রহমান। এর পরেরদিন ১৭ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম যশোর টাউন হলে এক সমাবেশে বলেছিলেন , শামসুর রহমানের খুনিদের সাত হাত মাটির নিচ থেকে বের করে তাদের বিচার করবো। এর পর ধারনা করেছিলাম হয়তো আর কেউই সাংবাদিকদের দিকে কালো নজর দিতে পারবে না। তার পর একে একে খুন হন মানিক সাহা, আবদুল লতিফ পাপ্পু, হুমায়ূন কবির বালু, দীপাংকর চক্রবর্তী, বেলাল হোসেন, গৌতম দাস সহ অনেক মফস্বল সাংবাদিক। তবে আজো দেশে সবচেয়ে আলোচিত প্রখ্যাত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি। তাদের পেশাগত দৃঢ় কর্মকাণ্ডের কারণে ই ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় নিজ বাসভবনে অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত কর্তৃক ছুরিকাঘাতে নিহত হন। সাগর রুনি হত্যার পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন মাত্র ৪৮ ঘন্টায় খুনিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার কথা ৪৮ ঘন্টা ৪৮ দিন ৪৮ মাস বহু আগেই পার হয়ে গেলেও সাগর রুনির হত্যাকারীরা আজো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যায় তার বাবা মাওলানা নুরুল হুদা ওরফে নোয়াব আলী মাস্টার বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করতে চাই এখানে আসামীরা অজ্ঞাতনামা হবে কেন? যেহেতু এখানে ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের দুই স্হানীয় নেতার সন্ত্রাসীরা নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে এই সংর্ঘষ তাই অন্তত স্হানীয় আওয়ামীলীগের ঐ দুই নেতা আবদুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাদল আসামী করা ও গ্রেফতার করাই ছিল যুক্তি যুক্ত। আমরা দেখি বিরোধী দলের ডাকা কোন রাজনৈতিক আন্দোলনে পঞ্চগড় কিংবা টেকনাফে কোন গাড়ী পোড়ানো বা অপ্রীতিকর কোন ঘটনার জন্য ঢাকায় থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় তাদের গ্রেফতার করা হয়। অথচ এক জন সাংবাদিককে হত্যার পর ও এর কোন প্রতিক্রিয়া আমাদের নজরে আসছে না। তার জন্য সাংবাদিকদের একটি বড় অংশের ও দায় কম না। আজ সংবাদ মাধ্যম কার্যত ব্যবসায়ী ও কালোটাকার মালিকদের কাছে জিম্মি। প্রায় বড় বড় প্রতিটি সাংবাদ মাধ্যমের মালিকানা কোন না কোন বড় শিল্পপতি বা ভুমিদ্যসুর নিয়ন্ত্রণে। তাদের অর্থ ও ক্ষমতার কাছে বিক্রি হচ্ছেন সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ। আর একটি অংশ সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিতে সরকারের বিশেষ চাটুকারিতায় ব্যস্ত। এতের দেশের সাধারন সাংবাদিকদের স্বার্থ পুরোটাই জলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে। আজ প্রতি পদে পদে লাঞ্চনা বঞ্চনা শিকার সাধারন সাংবাদিকরা। তাই আজ সগর-রুনি শিমুল মুজাক্কিরা খুন হলে ও ন্যায় বিচার পায় না তাদের পরিবার। মুজাক্কির হত্যার মামলায় আসামীদের মামলার চোখে অজ্ঞাতনামা রাখলেও জাতির কাছে কিন্তু অজ্ঞাত নয়। সবাই খুবই ভাল ভাবে জ্ঞাত মুজাক্কিরের খুনি কারা। বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ যতই চেস্টা করুক না কেন মুজাক্কির হত্যা মামলার দায় এড়াতে কিন্তু কোন ভাবে ই এই দায় তাদের এড়ানো কি সম্ভব? আজ যারা বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন নামে সাংবাদিকদের নেতা সেজে বসে আছেন তারা ও কিন্তু মুজাক্কির হত্যার দায় এড়াতে পারবেন না। সর্বোপরি সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার দায় সমগ্র জাতিকে ই আজ নিতে হবে।


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×