somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যানিমে রিভিউ- মুশিশি

১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আচ্ছা, আপনাদের কি সেই বজ্রাহত অভিমানী ছেলেটার সাথে পরিচয় আছে? সেই ছেলেটা, যে অভিমান করে বজ্রপাতের আওয়াজ পেলেই ছুটে গিয়ে বাড়ির সামনের লম্বা গাছটাতে উঠে বসে থাকে? অথবা সেই হতভাগ্য সন্তানের সাথে, নিতান্তই কৌতুহলের বশে রাতের বেলা শিস বাজিয়ে পাখি ডাকতে গিয়ে যে দুর্ভাগ্য টেনে আনে নিজ পরিবারের ওপর। অথবা সেই পরিশ্রমী লোকটির কথা কি জানেন, যে শীত-গ্রীস্ম কোন কিছুর পরোয়া না করে পাহাড়ের ঢালে কাজ করে যেত দিনরাত, যে কারণে তুষার ঝড়ের মাঝেও সেই পাহাড়ে দেখা যেত সোনালি ফসলের হাসি। কিংবা সেই অদ্ভুত পাহাড়ের কথাই ধরুন। বসন্তের ছোঁয়া লাগতে মাসখানেক দেরি হয়ে যায় যে পাহাড়ে, শীতকাল চলে যেতে যেতেও বারবার ফিরে আসে সেখানে, এখনও কাজ শেষ হয়নি যে তার এখানে!!

মুশিশি অ্যানিমেটির ব্যাপারে কেউ আমাকে প্রশ্ন করলে বিপদে পড়ে যাই। ছোট ছোট এমন অসংখ্য কাহিনী একসাথে মনের আয়নাতে যেন ভেসে ওঠে। আর উঠবেই বা না কেন, মুশিশির কাহিনীটাই যে অমন! কোন ধারাবাহিকতা নেই এই অ্যানিমেটির, আপনি যেকোন পর্ব থেকে অ্যানিমেটি দেখা শুরু করতে পারেন, কাহিনীর তাতে কোনই ক্ষতি হবে না। একেকটি পর্ব একেকটি পরিপূর্ণ ছোট গল্প। এই অসংখ্য ছোটগল্পগুলোর মাঝে যোগসূত্র একটিই, আর তা হল এক আত্মিক ফেরিওয়ালা, যার নাম গিনকো।

গিনকোর ব্যাপারে সবচেয়ে সুন্দর বর্ণনাটা বোধহয় মুশিশির প্রথম ওপেনিং এই বলা হয়েছে। "I walk a thousand miles to see you." না, প্রেয়সীকে দেখার জন্য সহস্র মাইল দূরত্ব পাড়ি দেয়না গিনকো। গিনকো এক যাযাবর, যে দেশ-বিদেশে ঘুরে ঘুরে মুশি দেখে, মুশির ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে, তার নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সাহায্য করে পীড়িত মানুষদেরকে।

কিন্তু এই মুশি জিনিসটা কি? সোজা বাংলায় বলতে গেলে, মুশির শাব্দিক অর্থ পোকা। কিন্তু অ্যানিমেতে মুশি জিনিসটা সাধারণ পোকার চেয়ে একটু আলাদা। সবাই তাদের দেখতে পায় না, কিন্তু তারা বাস করে মানুষের আশেপাশেই। কিছু মুশি মানুষের উপকার করে। কিছু আবার ডেকে আনে ভয়ানক দুর্ভাগ্য। গিনকো এই সমস্ত মুশি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করে বেড়ায় ঘুরে ঘুরে।

মুশিশি অ্যানিমেটা আমি দেখা শুরু করি ৩৬০ পি ফাইলে, বন-জঙ্গল আর মানুষ মিলেমিশে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হয়েছিল, কিছুই আলাদা করে চেনার উপায় ছিল না। তার ওপর প্রথম পর্বে বেশ গা শিরশির করা একটা মুশির কাহিনী বর্ণনা করা হয়, যেটা দেখে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছিলাম। তাই ১০ পর্ব দেখে অনেকদিন ফেলে রেখেছিলাম। কিন্তু মাথায় সবসময় এর ওএসটিগুলো ঘুরত। তাই একদিন আবার মুশিশি দেখা শুরু করি, এবার ভাল কোয়ালিটির ফাইলে। এবং একটা পর্ব দেখেই আমি চমকে যাই! সম্ভবত আমার দেখা সেরা বন-জঙ্গলের আর্ট আছে মুশিশিতে- এবং
কথাটা মোটেই বাড়িয়ে বলা নয়।

এতকিছু বলার কারণ হল, প্রথম কথা, মুশিশি দেখতে গেলে অবশ্যই ভাল কোয়ালিটির ফাইল জোগাড় করবেন। তা না হলে এর সৌন্দর্য আপনি ধরতেই পারবেন না। দ্বিতীয়ত, মুশিগুলোকে দেখে প্রথম প্রথম ক্রিপি লাগতে পারে অনেকের। কিন্তু কয়েক পর্ব দেখে ফেলুন, এরপর আবিষ্কার করবেন, কেমন যেন একটা নেশার মত ধরে গেছে, একের পর এক এপিসোড দেখেই যাচ্ছেন অন্যকিছু চিন্তা না করে। মনে হবে যেন গিনকোর সাথে সাথে আপনিও হেটে চলেছেন পাহাড়ি রাস্তা ধরে, মাথায় খড়ের হ্যাট আর পিঠে জীর্ণ বোঝাটা নিয়ে!

মুশিশি আপনাকে মানব জীবনের মূল্য নতুন করে বুঝতে শেখাবে, আশেপাশের পরিচিত জগৎটাকে নতুন করে চিনতে শেখাবে। সেই সাথে আপনার সারাদিনের ক্লান্তিকে দূর করে দেবে এক নিমিষেই। তাই মনকে প্রশান্তি দেয়া কোন অ্যানিমে দেখতে চাইলে দেখা শুরু করুন মুশিশি। পুরো ফ্র্যাঞ্চাইজ দেখার সিক্যুয়াল হল-

Mushishi
Mushishi Special: Hihamukage
Mushishi Zoku Shou
Mushishi Zoku Shou: Odoro no Michi
Mushishi Zoku Shou: 2nd Season
Mushishi Zoku Shou: Suzu no Shizuku

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×