ঢাকার বাড়িওয়ালাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ।তারা বছর বছর,সময়-অসময়ে ইচ্ছে মতো বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে।মেইনগেট রাতে বন্ধ রাখে এবং মেইন গেটের চাবি কাউকে দেয় না।বাড়ির ছাদ ভাড়াটিয়াদের ব্যাবহার করতে দেয় না।আর সবচেয়ে বড় অভিযোগ বাড়ির মালিক ঘুষখোর,দুর্নীতিবাজ;তা না হলে ঢাকা শহরে বাড়ি বানালো কিভাবে?বাড়ির মালিক যেহেতু বাড়িটা উত্তরাধিকার সূত্রে পায় নি--ডাল মে একটু না অনেকটাই কালা আছে।
বাড়ির মালিক ঘুষখোর,দুর্নীতিবাজ-- যে বলছেন ;তা কোথা থেকে বলছেন?কচু ক্ষেত থেকে না গার্মেন্টসের লেবার কিউ থেকে?ঢাকার বাড়ির মালিকেরা অনেকেই তিন পুরুষের শিক্ষিত,তিন পুরুষের চাকুরিজীবি।যখন তাদের বাবা,দাদারা লেখা পড়া শিখে চাকুরি করে রোজগার করেছে,সম্পদ সৃষ্টি করেছে তখন আপনার বাবা,দাদারা তাদের বাবার জমি বর্গা দিয়ে জমিদারী স্টাইলে দিনযাপন করেছে। সেই জমি বংশধরদের ভেতর ভাগ হতে হতে আপনার ভাগে তেমন কিছু পড়েনি।আপনি এখন তাই প্রথম প্রজন্মের চাকুরিজীবি আর দোষ ধরে বেড়াচ্ছেন বাড়ি মালিকের।এই বাড়ি মালিকেরা অনেকেই দুই প্রজন্মের প্রকৌশলী,দুই প্রজন্মের ডাক্তার--সে খবর রাখেন?অনেকে মধ্য-প্রাচ্য থেকে সম্মানের সাথে অর্থ উপার্জন করে এনেছে--সেই খবর রাখেন?
রাতে বাড়ির মেইনগেটের চাবি ভাড়াটিয়াদের দেওয়া হয় না তাদের এবং বাড়ি মালিকের নিরাপত্তার স্বার্থেই।অনেকে বলবেন বাড়িতে আগুন লাগলে বিপদ হবে। বাড়িতে আগুন লাগলে একদিন বিপদ হবে কিন্তু বাড়ির চাবি সবার কাছে থাকলে এরকম বিপদ প্রতিদিন হবে।শুধুমাত্র মেইনগেট লক থাকার কারনে ভদ্রবেশী ভাড়াটের ফেনসিডিল ব্যাবসা ধরা পড়েছে এবং বাড়ি মালিক পুলিশি হাঙ্গামা থেকে রেহাই পেয়েছে--এমন ঘটনা নিজের চোখে দেখা।বাড়ি যখন ভাড়া দেওয়া হয় তখন ভাড়াটেকে বিশ্বাস করেই দেওয়া হয়;গোয়েন্দাগিরি করার কোন অপশন থাকে না।
বাড়ির ছাদ কেন ভাড়াটিয়াদের ব্যাবহার করতে দেওয়া হয় না এ ব্যাপারে নিজের অভিজ্ঞতাটা এবার বলি।একদিন মিরপুরে আমার এক আত্মিয়ের বাসায় একটা কাজে গিয়েছি ।তখন দুপুর চারটা।তারা টপ ফ্লোরে থাকে।আমি যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই সেই বাড়ির কেয়ারটেকারের বউ এসে আত্মিয়ের বউ এর সাথে তুমুল ঝগড়া লাগিয়ে দিল----
কেয়ারটেকার:আপনারা গতকাল ছাদে উঠেছিলেন?
বাড়ির কর্ত্রী: কেন কি হইছে?
কেয়ারটেকার:কয়েকদিন ধরে কয়েকটা ফ্লাটে পানি আইতাছে না।কেউ ছাদে গিয়ে চাবি ঘুরাইছে।
বাড়ির কর্ত্রী: না আমরা ছাদে যাই নাই।
কেয়ারটেকার:পাশের ফ্ল্যাট থেকে বলছে,আপনারা ছাদে গেছেন।
বাড়ির কর্ত্রী:তিন দিন আগে গিয়েছি,কাল যাই নাই।
কেয়ারটেকার:আপনারাই পানির পাইপের চাবি ঘুরিয়েছেন;আপনাদের ঘরে পোলাপাইন আছে।
বাড়ির কর্ত্রী:তুমি দেখছো আমরা চাবি ঘুরাইছি?আমারা ছাদে গেলে বাচ্চাদের দেখেশুনে রাখি।আর বাচ্চা তো অন্য ঘরেও আছে।
কেয়ারটেকার:আপনারাই চাবি ঘুরাইছেন।আপনারা ছাদের কাছের ফ্ল্যাটে থাকেন।
বাড়ির কর্ত্রী এ পর্যায়ে প্রচন্ড রেগে যান--“ হ্যা আমরাই ঘুরিয়েছি কলের চাবি। যাও বাড়ির মালিককে গিয়ে বলে এসো।”
এমন সময় কারেন্ট চলে গেল।ঘরে আপিএস নেই।গরম থেকে বাচতে আমরা ছাদে গিয়ে বসলাম--আমি,আত্মীয়,আত্মীয়ের স্ত্রী,তাদের দুই কন্যা শিশু।ছাদে গিয়েই বাচ্চা দুটো পানির পাইপের চাবিগুলো মহা উৎসাহে ঘোরাতে শুরু করলো।ব্যাপারটা আত্মীয়ের স্ত্রীও খেয়াল করলো।
আমি আত্মীয়ের স্ত্রীর দিকে তাকাতেই তিনি বললেন,“বিশ্বাস করো ওরা কখনও এমন করে না।সবসময় ওদের দেখে রাখি।আজকে তোমার সাথে কথা বলছি দেখে ওদের খেয়াল রাখতে পারিনি।”
এই হলো আমাদের “ভাড়াটে” বা “ভাড়াটিয়া“।
বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি সম্পর্কে নতুন কিছু বলার নেই।পক্ষে-বিপক্ষে দুই রকম মতই দেওয়া যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৪