ধরা যাক, রহিম বা রাম কিম্বা তারা উভয়েই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তারা মেনে নিয়েছে তাদের পিতৃপুরুষের ধর্ম।
আবার ধরা যাক,একজনের কাছে আছে বাসী পচা ভাত, আমি জানি তা খেলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমি জানি তা তার জন্য স্বাস্থসম্মত নয়। তবু তাকে পোলাও কোর্মা না দিতে পারি, সেই পচা ভাতের চেয়ে ভালো কোন খাবার না দিতে পারলে আমার কোন অধিকার নেই তার কাছ থেকে তার সেই খাবার ছিনিয়ে নেবার। তার কাছে সেই ভাত তার ক্ষুধা নিবৃত্তির শেষ ভরসা। এই উদাহরনের যুক্তি মানতে নিশ্চয়ই কারও আপত্তি থাকবে না।
আমার চতুর্পাশে দেখছি ধর্মে অবিশ্বাস ধারন করা কিছু মানুষ যারা মনে করেন একই প্রসঙ্গের বিশ্বাস সমাজের-ব্যাক্তির কলুষতার মূল কারন। তারা সমাজের-ব্যাক্তির বৃহত্তর কল্যাণের জন্য ধর্মের বিনাশ অনিবার্য মনে করেন (একই ভাবে যদিও ধর্মে বিশ্বাসীরাও এর উল্টোটা ধারন করেন)। আমার ব্যাক্তিগত মতও এই যে, প্রথমত, স্রস্টা ধারণা শুধুই ধর্ম প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকতার আদেশকারী নয়, বরং এক সমৃদ্ধ আশ্রয় যা বিশ্বাসী মানুষকে চুড়ান্ত বিপর্যয়েও স্বস্তি দেয়। দ্বিতীয়ত, অন্তত কিছু মানুষ নেতিবাচক মানবিকতার প্রশ্নে স্রস্টার ভয়ে নৈতিকতার দায় নেন এবং নেতিবাচক মানবিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকেন। অবশ্যই ধর্মের এই উপযোগিতা প্রিমিটিভ। তার মানে হচ্ছে ব্যাক্তিগত দর্শনবোধ থেকে নৈতিকতা প্রভাবিত না হয়ে অন্ধ বিশ্বাস দ্বারা ব্যাক্তি মানুষ শুধু প্রভাবিত নয়, এমনকি পরিচালিত হওয়া। যাতে কোন যুক্তি নেই, বিবেচনার সুযোগ নেই এবং প্রায়শই যা বিপদজনক। এর উপযোগিতাকে তাই আমি যুক্তির প্রশ্নে অবান্তর লক্ষন বিবেচনা করি।
এই যখন অবস্থা, তখন ধর্মীয় বিশ্বাস বিশ্বাসী ব্যাক্তির কাছে এমন একটি বিষয় যার কোন বিকল্প তার কাছে নেই, এক চুড়ান্ত সেটিসফেকশন। এই অবস্থায় আমি তার এই উপযোগিতাকে সম্পুর্ন অস্বীকার করে তার কাছ থেকে তার ধর্ম ছিনিয়ে নিতে পারি না। যদি করি, তবে তা ইতিবাচক মানবিকতার ক্যাটাগরী হারায়। আমি ধার্মিকের কাছে ধর্মের সীমাবদ্ধতা, অস্বাভাবিকতা এবং এর বাইরে সহস্র দর্শনের প্রস্তাব রাখতে পারি। কিন্তু তাকে বাধ্য করতে পারি না ধর্ম থেকে বের করে সেই সেটিসফেকশনের বিকল্প দিতে বা তার ধর্ম ছিনিয়ে নেবার।
একজন আস্তিক কখনো ঈশ্বর দর্শন করে নি , কিন্তু তবু সে ঈশ্বরে বিশ্বাসী ।আবার একজন নাস্তিকও কখনো ঈশ্বর দর্শন করে নি , তবুও সে বিশ্বাস করে ঈশ্বর বলতে কোন সত্ত্বা নেই। তবু যেহেতু ঈশ্বর ধারণা নিয়ে এসেছে আস্তিকেরা তাই তার বিশ্বাসে নাস্তিকের কোন দায় নেই। ঈশ্বরে বিশ্বাস, ঈশ্বরের কর্মকান্ড, এমনকি ঈশ্বরের অস্তিত্বের ও অসতীত্বের দায়ভার বা প্রমান করার চেস্টা নিতে হবে আস্তিককেই। এ কি প্যারাডক্স যে, কোনটি গ্রহনযোগ্য, অভিযোগকারীর নিজেকে নিরপরাধ প্রমান করা, নাকি অভিযুক্তের। অবশ্য, দিন শেষে ব্যাক্তি মানুষের ব্যাক্তিসুখই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হয়ে দাঁড়ায়। আর আমরা তা কখনই অস্বীকার করতে পারি না।