কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই। তবে এমন কিছু জিনিস মানুষের একান্তই নিজের থাকা দরকার যা কোন ভাবেই অন্যের হাতে তুলে দেওয়া দেওয়া উচিৎ না। এমন একটা ব্যাপার হচ্ছে পাসওয়ার্ড । সেটা আপনার এটিএম কার্ডের, সোশিয়্যাল মিডিয়া একাউন্ট কিংবা সামুর নিকের পাসওয়ার্ড ।
কোন এক কালে আমার এক প্রেমিকা ছিল । তবে খুব বেশি দিন টিকে নাই সেই প্রেম । তার প্রধান কারণ ছিল এই পাসওয়ার্ড । প্রেম শুরু হওয়ার কদিন পরে একদিন সে আমার কাছে আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চেয়ে বসল। আমি কেবল আকাশ থেকেই না, সাত আসমানের উপর থেকে পড়লাম । বললাম, আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড তোমাকে কেন দিব ? এটা তো একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার !
সে তখন জানাল যে এখন নাকি এই নিয়ম । বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে নাকি এই পাসওয়ার্ড আদান প্রদান করতে হয়। আমি মাফ চাইলাম । বললাম আমার ফেসবুক আমার একান্তই আমার নিজের । আর যদি আমি তোমার সাথে চিট করতে চাই তাহলে তোমার চৌদ্দগুষ্ঠীর ক্ষমতা নেই সেটা ধরার । তাই পাসওয়ার্ড দেওয়া যাবে না ।
বলাই বাহুল্য যে সেই প্রেম টিকে নাই খুব বেশি দিন ।
এই পাসওয়ার্ড নিয়েই এক মজার গল্প বলি। গল্পটা কাছের একজনের । এক মেয়ের সাথে প্রেম চলছিল । দুইজনেই একে অন্যের ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানত । এবার একদিন সে মেয়ে নতুন কাউকে ধরল । কিন্তু এই আমার পরিচিত মানুষের সাথে তো তার তখনও প্রেম চলছে । সে কী করল ছেলের ফেসবুকে ঢুকে নিজেই নিজের সব চ্যাট একেবারে ডিলিট করে দিল । যাতে ছেলের হাতে কোন প্রমানই না থাকে যে কোন কালে প্রেম ছিল। তারপর নিজের আইডি থেকে ছেলেকে ব্লক করে দিল । ব্যাস প্রেম একেবারে শেষ ।
আরও কত রকম গল্প আছে নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দেওয়ার । অনলাইন এমন একটা জায়গা যেখানে কাউকে বিশ্বাস করা উচিৎ না । বিশেষ করে নিজের একান্ত গোপন বিষয়গুলো একেবারেই নিজের কাছেই রাখা উচিৎ । তবে আমাদের আশে পাশেই এমন অনেক মানুষ এই সাধারণ কথাটা বুঝে না । নিজের গোপন জিনিস অন্যের হাতে তুলে দেয় ।
ধরেন এই সামুর কথাই । আপনার নিকের পাসওয়ার্ড অন্য একজনের কাছে আছে । আজকে তার সাথে আপনার সম্পর্ক ভাল । কালকেই দেখা যাবে সেই কোন বিষয় নিয়ে আপনার সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেল । তখন?
আপনার পাসওয়ার্ড সে জানে মানে হচ্ছে আপনার হয়ে সে পোস্ট লিখতে পারবে কিংবা মন্তব্য করতে পারবে। তখন সে যাই করুক না কেন তার দায় ভার আপনার উপরেই এসে পড়বে। অথবা ধরে নিলাম যে সম্পর্ক ভালই থাকবে সারা জীবন । কিন্তু তারপরেও অন্য জন যখন আপনার নিক দিয়ে মন্তব্য করবে তখন সেটার দায় ভার আপনার । সে তো মন্তব্য করে পার পেয়ে যাবে, আপনার তখন কী হবে? ঐ মন্তব্যের বিপরীতেই যদি কেউ একশন নেয় তাহলে আপনার অবস্থা কী হবে ভেবে দেখেছেন?
এই জন্য বলি যে নিজের নিজের পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রাখুন । অন্য কাউকে দিবেন না, তা সে যতই কাছের মানুষ আর যতই মহান মানুষই হোক না কেন । জামানা বড় খারাপ !
পোস্টের ছবিটি পিক্সেল থেকে নেওয়া । লেখার সাথে ছবির কোন সম্পর্ক নাই।