somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল নকশার অন্ধকার রাত

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা ছিল না। এটা ছিল একটা পরিকল্পিত নাটক, যার পেছনে লুকিয়ে ছিল অনেক বড় একটা ষড়যন্ত্র।

ঘটনাটা শুরু হয়েছিল আসলে কয়েকদিন আগে থেকেই। মিসরের একটা ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন, যারা দশকের পর দশক ধরে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে কাজ করে এসেছিল, তারা হঠাৎ করে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। ২০১১ সালের বিপ্লবের পর তারা প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিল। এবং এখন তাদের প্রভাব বিস্তৃত হচ্ছিল সরকারি প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র। তারা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত এবং সংগঠিত ছিল। তাদের সদস্যরা জানতো কীভাবে ব্যবস্থার ভেতরে ঢুকে প্রভাব বিস্তার করতে হয়। মূলধারার মানুষের কাছে তারা হয়তো খুব জনপ্রিয় ছিল না, কিন্তু যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—সেখানে তাদের উপস্থিতি ছিল প্রবল।

এদিকে ক্ষমতায় ছিল একটা অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু পর্দার আড়ালে সেনাবাহিনীই আসল ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছিল। আর তাদের পেছনে ছিল আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থার ছায়া। এই পুরো সেটআপটা ছিল আসলে একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবর্তন; দেখতে গণতান্ত্রিক, কিন্তু ভেতরে পুরোপুরি সামরিক নিয়ন্ত্রণ।

সেই ধর্মীয় সংগঠনের নেতা, একজন বয়স্ক কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তি, তিনি আসন্ন নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করবেন, বিশাল প্রবাসী সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলবেন, এবং তার সংগঠনকে একটা আধুনিক, গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করবেন। এটা তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ পশ্চিমা দেশগুলো এখনও তাদের সন্দেহের চোখে দেখতো। এই সফর সফল হলে, তার সংগঠন একটা নতুন মাত্রা পেতে পারতো। ঠিক এই সময়টাতেই ঘটলো সেই রাতের ঘটনা।

রাত সাড়ে এগারোটার দিকে, একদল যুবক আল-আহরামের অফিসের দিকে এগিয়ে গেল। তারা হাতে ছিল লাঠিসোটা, পেট্রোল বোমা। অফিসের বাইরে পুলিশ ছিল, কিন্তু তারা শুধু দাঁড়িয়ে দেখলো। সেনাবাহিনীর গাড়িও দূরে পার্ক করা ছিল, কিন্তু তারাও নড়লো না। যেন তাদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল কিছু না করার। ভিতরে আটকে পড়লো আটাশজন সাংবাদিক। ছাদে উঠে তারা চিৎকার করতে লাগলো সাহায্যের জন্য। কিন্তু কেউ এগিয়ে এলো না। অনেক পরে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের উদ্ধার করলো।

একই রাতে আল-মাসরি আল-ইয়াউমেও একই ধরনের হামলা হলো। ভাঙচুর, লুটপাট, আগুন। পরদিন সকালে দেখা গেল, দুইটা অফিসই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, একদিন পরেই দুইটা পত্রিকা আবার প্রকাশিত হলো। এত বড় ক্ষতির পর এত তাড়াতাড়ি কীভাবে সম্ভব? যারা সত্যিকারের সাংবাদিকতা বোঝে, তারা মাথা চুলকাতে লাগলো।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজে ফোন করলেন দুই পত্রিকার সম্পাদকদের। সমবেদনা জানালেন। আশ্বস্ত করলেন নিরাপত্তার। কিন্তু কোনো গ্রেপ্তার হলো না। একদিন গেল, দুইদিন গেল, তিনদিন গেল—একজনকেও ধরা হলো না। অথচ এর ঠিক এক সপ্তাহ আগে একজন তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশজনেরও বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়ে গিয়েছিল মাত্র দুই দিনের মধ্যে। তাহলে এখানে কেন কেউ ধরা পড়ছে না ?

আরও মজার ব্যাপার হলো, পত্রিকা দুইটা নিজেরাও তেমন কোনো চাপ দিচ্ছিল না। "কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না?"—এই প্রশ্ন নিয়ে তারা প্রতিদিন শিরোনাম করতে পারতো। কিন্তু তারা করলো না। একবার বললো, তারপর চুপ। যেন তারা নিজেরাই জানে যে কেউ ধরা পড়বে না। এর পেছনের গল্পটা আসলে অনেক গভীর। সেই ধর্মীয় সংগঠনটা গত কয়েক মাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং সরকারি অফিসগুলোতে নিজেদের লোকদের বসিয়ে দিয়েছিল। তারা ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং পরিকল্পিত। প্রতিটি পদক্ষেপ তারা ভেবেচিন্তে নিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনদের অফিসে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে, এমনকি বিচার বিভাগেও তাদের প্রভাব বাড়ছিল।

কিন্তু সাধারণ শহুরে মধ্যবিত্তদের কাছে তারা খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না। অনেকেই তাদের দেখতো সন্দেহের চোখে। "এরা অতীতে ফিরে যেতে চায়," এমন একটা ধারণা প্রচলিত ছিল। কিন্তু যেখানে আসল ক্ষমতা: প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, বিচার ব্যবস্থা—সেখানে তারা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। আর সবচেয়ে বড় কথা, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছিল।

এই পরিস্থিতিতে তিনটা পক্ষ খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। প্রথমত, আমেরিকান গোয়েন্দারা। তারা চাইছিল না মিসরে একটা শক্তিশালী ধর্মীয় সরকার ক্ষমতায় আসুক। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনী। তারা জানতো যে এই সংগঠন ক্ষমতায় এলে তাদের ইনটারনাল চেইনভেঙে পড়বে এবং রাজনৈতিক প্রভাব কমে যাবে। তৃতীয়ত, আরেকটা বড় রাজনৈতিক দল, যারা বিশ বছর আগে ক্ষমতা হারিয়েছিল এবং এখন আবার ফিরে আসতে চাইছিল। তারা জানতো যে আসন্ন নির্বাচনে এই ধর্মীয় সংগঠনই তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। জনসমর্থনে হয়তো তারা পিছিয়ে ছিল, কিন্তু প্রশাসনিক ক্ষমতায় ধর্মীয় সংগঠন অনেক এগিয়ে ছিল।

আর এই তিনটা পক্ষের মধ্যে ছিল দুইটা সংবাদপত্র। আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—এই দুইটা পত্রিকা ছিল মিসরের সবচেয়ে প্রভাবশালী মিডিয়া। তাদের সম্পাদকদের অবস্থান অবশ্য খুব মজার ছিল। বছরের পর বছর তারা সেই পুরনো বড় দলের বিরুদ্ধে লিখেছিল। তাদের নেতাকে দুর্নীতিবাজ বলে অভিযুক্ত করেছিল। এমনকি একটা জাল দলিল পর্যন্ত তৈরি করেছিল তাকে ফাঁসানোর জন্য। কিন্তু এখন, হঠাৎ করেই, তারা সেই দলের পক্ষে কথা বলতে শুরু করেছিল। এই পরিবর্তনটা এতই হঠাৎ এবং এতই স্পষ্ট ছিল যে, যে কেউ বুঝতে পারতো এখানে কোনো একটা ..... হয়েছে।

এখন সেই পুরনো দলের নেতা, যিনি বিশ বছর ধরে নির্বাসনে ছিলেন লন্ডনে, তিনি ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার ফেরার তারিখ ছিল পঁচিশে ডিসেম্বর। এবং এই হামলার ঘটনা ঘটলো আঠারো ডিসেম্বর। ঠিক তার আসার এক সপ্তাহ আগে। এটা কি কাকতালীয়? নাকি সবকিছুই পরিকল্পিত? সেই ধর্মীয় সংগঠনের নেতা যখন লন্ডনে ছিলেন, ঠিক তখনই এই হামলা হলো। সবাই বলাবলি শুরু করেছে "দেখো, তার লোকজন কী করছে! তারা সহিংস!" কিন্তু বাস্তবতা ছিল অনেক বেশি জটিল।

মিডিয়ায় হামলার কিছু সময় আগে, একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, যার নাম ছিল ইয়াহিয়া আমিন , তার ফেসবুক পেজে কিছু পোস্ট করেছিলেন। তার ফলোয়ার ছিল প্রায় বিশ লাখ। তিনি চরমপন্থী মানুষকে উত্তেজিত করে তুলেছিলেন। "এই পত্রিকাগুলো বন্ধ করতে হবে," তিনি লিখেছিলেন। "এগুলো দেশের শত্রু।" তার পোস্টের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হামলা হলো।

ইয়াহিয়া কি সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করতেন যা তিনি লিখছিলেন ? নাকি তাকে ব্যবহার করা হয়েছিল? তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হামলার দুইদিন পরেই মেটা রিমুভ করে দিয়েছিল। সরকারের সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি নিশ্চিত করেছিল যে তারা অভিযোগ পাঠিয়েছিল। কিন্তু কোনো গ্রেপ্তার হলো না। কোনো এফআইআর হলো না। কোনো মামলা হলো না। শুধু অ্যাকাউন্ট রিমুভ। যেন এটাই যথেষ্ট।

আরও মজার ব্যাপার হলো, ইয়াহিয়া এর আগেও এই দুই পত্রিকার বিরুদ্ধে ভিডিও বানিয়েছিলেন ইউটিউবে। তখন কোনো সমস্যা হয়নি। পত্রিকাগুলো কোনো মামলা করেনি। কিন্তু এখন, যখন তার "প্ররোচনায়" একটা "হামলা" হলো, তখনও তারা মামলা করলো না। কেন? যদি সত্যিই তিনি দায়ী হন, তাহলে কেন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? এর একটাই উত্তর হতে পারে: কারণ ইয়াহিয়া একটা টুল ছিলেন। তাকে ব্যবহার করা হয়েছিল একটা নির্দিষ্ট সময়ে একটা নির্দিষ্ট কাজের জন্য।

সরকার বলেছিল যে তাদের কাছে আগে থেকেই গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল যে হামলা হতে পারে। পত্রিকাগুলোও নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেন? যদি সরকার জানতো, তাহলে কেন পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলো না? কেন সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে দেখলো? এর একটাই ব্যাখ্যা—তারা চেয়েছিল এটা ঘটুক।

হামলার তিনদিন পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পত্রিকার অফিস পরিদর্শন করতে এলেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন। "প্রেস ফ্রিডম" নিয়ে বক্তৃতা দিলেন। বললেন যে, "এটা গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ।" কিন্তু কূটনৈতিক পরিদর্শন সাধারণত এত তাড়াতাড়ি হয় না। দুই-তিন সপ্তাহ সময় লাগে সিডিউল করতে। কিন্তু তিনি মাত্র তিনদিনে এসে গেলেন। কীভাবে? একটাই উত্তর—এটা আগে থেকে পরিকল্পিত ছিল।

জরডানের পত্রিকাগুলো দাবি করলো যে তিনশো কোটি ইজিপসিয়ান পাউন্ডের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু কোনো বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো না। কোনো ইনশিওরেন্স ক্লেইমের কথা বলা হলো না। কোনো ফরেনসিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হলো না। শুধু একটা গোলমেলে সংখ্যা। এবং একদিন পরেই সবকিছু আবার স্বাভাবিক। যদি সত্যিই তিনশো মিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতি হয়, তাহলে চব্বিশ ঘণ্টায় কীভাবে আবার চালু করা সম্ভব? এই প্রশ্নগুলো করার মতো কেউ ছিল না। কারণ যারা প্রশ্ন করার কথা, তারাই এই খেলার অংশ।

চতুর্থ দিনে, সরকারের হেলথ এডভাইজার একটা বিবৃতি দিলেন। বললেন যে, "আমরা হামলাকারীদের শনাক্ত করেছি। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।" কিন্তু কোনো নাম বলা হলো না। কোনো গ্রেপ্তার হলো না। শুধু "ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।" এই ধরনের কথা সরকাররা তখনই বলে যখন তারা আসলে কিছুই করতে চায় না, কিন্তু দেখাতে চায় যে তারা কিছু করছে। আসল সত্যটা ছিল অনেক বেশি অন্ধকার।

সেই ধর্মীয় সংগঠনটা, যারা প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অসাধারণ প্রভাব বিস্তার করেছিল, তারা আসলে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছিল কিছু না বুঝে। তাদের তরুণ শাখার কিছু নেতা, যারা জিহাদে উৎসাহী ছিল, তারা প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিল পত্রিকাগুলোকে। "এগুলো বন্ধ করতে হবে," তারা বলেছিল এক জনসভায়। এই বক্তব্যগুলো রেকর্ড করা হয়েছিল। ভিডিও করা হয়েছিল। এবং পরে এগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছিল প্রমাণ হিসেবে। "দেখো, তারা নিজেরাই বলছে ! তারা সহিংস!"

কিন্তু সেই সংগঠনের প্রধান নেতা, যিনি লন্ডনে ছিলেন, তিনি হামলার পরদিন একটা বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি হামলার নিন্দা করেছিলেন। বলেছিলেন, "এটা আমাদের অবস্থান নয়।" কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শিরোনাম হয়ে গেছে। "ধর্মীয় চরমপন্থীরা সাংবাদিকদের আক্রমণ করেছে।" লন্ডনে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, সেগুলোতে এখন একটা সংশয় তৈরি হয়ে গেছে। "তাদের সাথে কি আমরা সত্যিই কথা বলতে পারি?"

ইয়াহিয়ার ভূমিকাটা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি একজন প্রভাবশালী ভয়েস ছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার ফলোয়াররা তাকে বিশ্বাস করতো। কিন্তু তিনি কি জানতেন যে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে? নাকি তিনি নিজেও একজন এজেন্ট ছিলেন? এটা পরিষ্কার না। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার—তার পোস্টগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। এবং সেই উদ্দেশ্যটা ছিল সেই ধর্মীয় সংগঠনকে দুর্বল করা।

পুরনো সেই বড় দলটা, বিশ বছর আগে ক্ষমতা হারিয়েছিল এবং আবার ক্ষমতায় ফিরতে চাইছিল, তারা জানতো যে এই ধর্মীয় সংগঠনই তাদের সবচেয়ে বড় বাধা। জনগণের সরাসরি সমর্থন হয়তো তাদের ছিল না, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অফিস, বিচার বিভাগ—এসব জায়গায় তাদের ছিল শক্ত নেটওয়ার্ক। নির্বাচনে জিততে হলে এদের দুর্বল করতে হবে। এবং সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তাদের সহিংস হিসেবে চিত্রিত করা। পত্রিকাগুলো, যারা এতদিন সেই দলের বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন একটা চুক্তিতে এসেছিল। "আমরা তোমাদের সমর্থন করবো। বিনিময়ে তোমরা আমাদের নিরাপত্তা দেবে।" এবং এই হামলা ছিল সেই চুক্তির একটা অংশ। একটা মঞ্চায়িত নাটক, যেখানে সবাই নিজেদের ভূমিকা পালন করছিল।

সেনাবাহিনী এবং আমেরিকান গোয়েন্দারাও এই খেলায় ছিল। তারা চাইছিল না কোনো শক্তিশালী চরমপন্থী ধর্মীয় সরকার ক্ষমতায় আসুক। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। হামলার এক সপ্তাহ পর, সেই পুরনো দলের নেতা কায়রোতে ফিরে এলেন। বিমানবন্দরে হাজার হাজার সমর্থক তাকে অভ্যর্থনা জানালো। পত্রিকাগুলো তার ছবি ছাপালো প্রথম পাতায়। "মিসরের ভবিষ্যৎ নেতা।" বিশ বছর আগে যাকে তারা দুর্নীতিবাজ বলেছিল, এখন তাকেই তারা ত্রাণকর্তা বলছিল। এটাই রাজনীতির নিয়ম। কোনো স্থায়ী শত্রু নেই, শুধু স্থায়ী স্বার্থ আছে।

সেই ধর্মীয় সংগঠনটা এখন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। তাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের কিছু সমর্থক সরে যেতে শুরু করেছে। "আমরা চাই না এমন সংগঠনকে সমর্থন করতে যারা সহিংসতায় বিশ্বাস করে," তারা বলছিল। অথচ এই সংগঠন কখনোই প্রকৃতপক্ষে এই হামলার নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু ততক্ষণে মানুষের মনে একটা বিশ্বাস তৈরি হয়ে গেছে। এবং বিশ্বাস তৈরি করাই ছিল এই পুরো অপারেশনের উদ্দেশ্য।

আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউমের অফিসগুলো সংস্কার করা হলো। নতুন কম্পিউটার কেনা হলো। সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল। সেই রাতের ঘটনা ধীরে ধীরে মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যেতে লাগলো। কিন্তু যারা সত্যিই বুঝতে চেষ্টা করেছিল, তারা জানতো যে এটা কোনো সাধারণ হামলা ছিল না। এটা ছিল একটা মিথ্যা পতাকার অপারেশন। একটা সাজানো নাটক। যেখানে শিকার এবং শিকারি—সবাই আসলে একই দলের খেলোয়াড় ছিল। আর আসল শিকার ছিল সেই চরমপন্থী ধর্মীয় সংগঠন, যারা নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছিল, কিন্তু কুড়ালটা ধরিয়ে দিয়েছিল অন্য কেউ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:০৪
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×