somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জিসান সালীম
প্রবাসের ব্যস্ত সময় বয়ে যাচ্ছে সময়ের নিয়মে শ্যামল সবুজ বাংলার বহতা নদীর মত। সময়ের সাথে জীবনের অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, শুধু যার গেছে সেই জানে কিভাবে গেছে। আমি অন্তঃস্থল থেকে উপলব্ধি করি আমার আমিত্বকে, আমার জীবনে যাকে না পেলে পুরো জীবনটা অসমাপ্ত রয়ে যেত যা.

যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিলঃ

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিলঃ


--------------------
১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাসে আমাকে নিয়োগ
করা হলো জয়দেবপুরে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয়
ব্যাটেলিয়নে আমি ছিলাম সেখানে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড।
অফিসার কমান্ডিং লেঃ কর্নেল আবদুল কাইয়ুম ছিল একজন
সাহসী পাকিস্তানী। একদিন ময়মনসিংহের এক ভোজসভায়
ধমকের সুরে সে ঘোষণা করলো- বাংলাদেশের জনগণ
যদি সদাচরণ না করে তাহলে সামরিক আইনের সত্যিকার ও
নির্মম বিকাশ এখানে ঘটানো হবে। আর তাতে হবে প্রচুর
রক্তপাত। এই ভোজসভায় কয়েকজন বেসামরিক ভদ্রলোকও
উপস্থিত ছিলেন। তাদের মাঝে ছিলেন ময়মনসিংহের তদানীন্তন
ডেপুটি কমিশনার জনাব মোকাম্মেল।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাইয়ুমের এই দম্ভোক্তি আমাদের
বিস্মিত করলো। এর আগেও কাইয়ুম এক গুরুত্বপুর্ণ
পদে অধিষ্ঠিত ছিল। ইসলামাবাদে পাকিস্তানী নীতি নির্ধারকের
সাথে সংযোগ ছিল তার। তার মুখে পুরানো প্রভুদের মনের কথাই
ভাষা পেয়েছে কিন্তু, তাই আমি ভাবছিলাম। পরবর্তী সময়ে এ
ব্যাপারে আমি অনেকগুলো প্রশ্ন করি এবং এর
কোনো কথা থেকে আমার কাছে এটা স্পষ্ট
হয়ে উঠে যে সে যা বলেছে, তা জেনেশুনেই বলেছে। উপযুক্ত
সময়ে কার্যকরী করার জন্য সামরিক ব্যবস্থার এক
পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। আর কাইয়ুম
সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমি এতে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ি।
এই সময়ে আমি একদিন চতুর্দশ ডিভিশন সদর দফতরে যাই।
জিএসও-১ (গোয়েন্দা) লেঃ কর্নেল তাজ আমাদের রাজনৈতিক
নেতাদের কয়েকজন সম্পর্কে আমার কাছে অনেক কিছু
জানতে চায়। আমি তার এসব তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য
সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করি। সে আমাকে জানায় যে,
তারা বাঙালি নেতাদের জীবনী সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ
করছে। আমি বারবার তাকে জিজ্ঞেস করি- এসব খুঁটিনাটির
প্রয়োজন কি? এই প্রশ্নের জবাবে সে জানায়- ভবিষ্যৎ
রাজনৈতিক গতিধারায় এগুলো কাজে লাগবে। গতিক
যে বেশি সুবিধার নয়, তার সাথে আলোচনা করেই
আমি তা বুঝতে পারি। সেই বছরেই সেপ্টেম্বর মাসে চার মাসের
জন্য আমি পশ্চিম জার্মানী যাই। এ সময়ে বাংলাদেশের সর্বত্র
এক রাজনৈতিক বিক্ষোভ-ঝড় বয়ে যায়। পশ্চিম
জার্মানীতে অবস্থানকালে আমি একদিন দেখি, সামরিক
এ্যাটাচি কর্নেল জুলফিকার সে সময়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক
পরিস্থিতি নিয়ে কারিগরি এ্যাটাচির সাথে কথা বলছিল। এই
ব্যক্তিটি ছিল এক সরলমনা পাঠান অফিসার। তাদের সামনে ছিল
করাচীর দৈনিক পত্রিকা ডন-এর একটা সংখ্যা। এতে প্রকাশিত
হয়েছিল ইয়াহিয়ার ঘোষণা- ১৯৭০ সালেই নির্বাচন হবে।
সরলমনা পাঠান অফিসারটি বলছিল, “নির্বাচন
হলে আওয়ামী লীগ ব্যাপকভাবে নির্বাচনে জয়ী হবে, আর
সেখানেই পাকিস্তানের পরিসমাপ্তি।” এর জবাবে কর্নেল
জুলফিকার বললো, “আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের
সংখ্যাগিরষ্ঠতা লাভ করতে পারে কিন্তু
কেন্দ্রে সে ক্ষমতা পাবে না। কেননা অন্যান্য দল
মিলে কেন্দ্রে আওয়ামী লীগকে ছাড়িয়ে যাবে।
আমি এটা জেনে বলছি। এ সম্পর্কে আমার কাছে বিশেষ খবর
আছে।”

এরপর আমি বাংলাদেশে ফিরে এলাম। ১৯৭০ সালের
সেপ্টেম্বরে আমাকে নিয়োগ করা হলো চট্টগ্রামে। এবার ইস্ট
বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটেলিয়নের সেকেন্ড-ইন-
কমান্ড। এর কয়েকদিন পর আমাকে ঢাকা যেতে হয়। নির্বাচনের
সময়টা আমি ছিলাম ক্যান্টনমেন্টে। প্রথম থেকেই
পাকিস্তানী অফিসাররা মনে করতো চূড়ান্ত বিজয় তাদের হবে।
কিন্তু নির্বাচনের দ্বিতীয় দিনে তাদের মুখে আমি দেখলাম
হতাশার সুস্পষ্ট ছাপ। ঢাকায় অবস্থানকারী পাকিস্তানী সিনিয়র
অফিসারদের মুখে দেখলাম আমি আতংকের ছবি। তাদের এ
আতংকের কারণও আমার অজানা ছিল না। শিগগিরই জনগণ
গণতন্ত্র ফিরে পাবে, এই আশায়
আমরা বাঙালি অফিসাররা তখন আনন্দে উৎফুল্ল
হয়ে উঠেছিলাম।
চট্টগ্রামে আমরা ব্যস্ত ছিলাম অষ্টম
ব্যাটেলিয়নকে গড়ে তোলার কাজে। এটা ছিল রেজিমেন্টের
তরুণতম ব্যাটেলিয়ন। এটার ঘাঁটি ছিল ষোলশহর বাজারে। ১৯৭১
সালের এপ্রিল মাসে এই ব্যাটেলিয়নকে পাকিস্তানের
খারিয়ানে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমাদের
সেখানে পাঠাতে হয়েছিল দুশ’ জওয়ানের এক দ্রুতগামী দল।
অন্যরা ছিল একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের সৈনিক। আমাদের
তখন যেসব অস্ত্র-শস্ত্র দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ৩শ’
পুরানো ০০৩ রাইফেলস, চারটা এলএমজি ও দুটি তিন
ইঞ্চি মর্টার। গোলাবারুদের পরিমাণও ছিল নগণ্য। আমাদের
এন্টিট্যাঙ্ক বা ভারি মেশিনগান ছিল না। ফেব্রুয়ারির শেষ
দিকে বাংলাদেশের যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিস্ফোরণোন্মুখ
হয়ে উঠেছিল তখন আমি একদিন খবর পেলাম তৃতীয়
কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সৈনিকরা চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন
এলাকায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিহারীদের বাড়িতে বাস
করতে শুরু করেছে। খবর নিয়ে আমি আরো জানলাম
কমান্ডোরা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-শস্ত্র আর গোলাবারুদ
নিয়ে বিহারী বাড়িগুলোতে জমা করেছে এবং রাতের অকারে বিপুল
সংখ্যায় তরুণ বিহারীদের সামরিক ট্রেনিং দিচ্ছে, এসব
থেকে এরা যে ভয়ানক রকমের অশুভ একটা কিছু করবে তার
সুস্পষ্ট আভাসই আমি পেলাম।
তারপর এলো ১ মার্চ। এই সময়ে আমার ব্যাটেলিয়নের
এনসিওরা আমাকে জানালো, “প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিংশতম বালুচ
রেজিমেন্টের জওয়ানরা বেসামরিক পোশাক
পরে ট্রাকে করে কোথায় যেন যায়। তারা ফিরে আসে আবার শেষ
রাতের দিকে।” আমি উৎসুক হলাম, লোক লাগালাম খবর নিতে।
খবর নিয়ে জানলাম প্রতি রাতেই তারা যায় কতগুলো নির্দিষ্ট
বাঙালি পাড়ায়, নির্বিচারে হত্যা করে সেখানে বাঙালিদের। এই
সময় প্রতিদিন ছুরিকাহত বাঙালিদের হাসপাতালে ভর্তি হতেও
শোনা যায়।
এই সময়ে আমাদের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল
জানজুয়া আমার গতিবিধির ওপর লক্ষ্য রাখার জন্যে লোক
লাগায়। মাঝে মাঝেই তার লোকেরা গিয়ে আমার সম্পর্কে খোঁজ-
খবর নিতে শুরু করে। আমরা তখন আশংকা করছিলাম, আমাদের
হয়তো নিরস্ত্র করা হবে। আমি আমার মনোভাব দমন করে কাজ
করে যাওয়ার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করি। বাঙালি হত্যা ও
বাঙালি দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
আমাদের নিরস্ত্র করার চেষ্টা হলে কি ব্যবস্থা গ্রহণ
করবো কর্নেল (তখন মেজর) শওকতও আমার
কাছে তা জানতে চান। ক্যাপ্টেন শমসের মবিন
এবং খালেকুজ্জামান আমাকে জানান যে, স্বাধীনতার জন্য
আমি যদি অস্ত্র তুলে নেই তাহলে তারাও দেশের মুক্তির জন্য
প্রাণ দিতে কুণ্ঠবোধ করবে না। ক্যাপ্টেন অলি আহমদ আমাদের
মাঝে খবর আদান-প্রদান করতেন। জেসিও এবং এনসিওরাও
দলে দলে বিভক্ত হয়ে আমার কাছে বিভিন্ন
স্থানে জমা হতে থাকলো। তারাও আমাকে জানায় যে, কিছু
একটা না হলে বাঙালি জাতি চিরদিনের জন্যে দাসে পরিণত হবে।
আমি নীরবে তাদের কথা শুনতাম। কিন্তু আমি ঠিক করেছিলাম
উপযুক্ত সময় এলেই আমি মুখ খুলবো। সম্ভবত ৪
মার্চে ক্যাপ্টেন অলি আহমদকে ডেকে নেই। আমাদের ছিল
সেটা প্রথম বৈঠক। আমি তাকে সোজাসুজি বললাম, সশস্ত্র
সংগ্রাম শুরু করার সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে। আমাদের সব সময়
সতর্ক থাকতে হবে। ক্যাপ্টেন আহমদও আমার সাথে একমত হন।
আমরা পরিকল্পনা করি এবং প্রতিদিন আলোচনা বৈঠকে মিলিত
হতে শুরু করি।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবের ঘোষণা আমাদের
কাছে গ্রীন সিগন্যাল বলে মনে হলো। আমাদের
পরিকল্পনাকে চূড়ান্ত রূপ দিলাম। কিন্তু তৃতীয়
কোনো ব্যক্তিকে তা জানালাম না। বাঙালি ও
পাকিস্তানী সৈনিকদের মাঝেও উত্তেজনা ক্রমেই চরমে উঠছিল।
১৩ মার্চ হলো শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ইয়াহিয়ার আলোচনা।
আমরা সবাই ক্ষণিকের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
আশা করলাম,
পাকিস্তানী নেতারা যুক্তি মানবে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানীদের সামরিক
প্রস্তুতি হ্রাস না পেয়ে দিনদিনই বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো।
প্রতিদিনই পাকিস্তান থেকে সৈন্য আমদানি করা হলো। বিভিন্ন
স্থানে জমা হতে থাকলো অস্ত্র-শস্ত্র আর গোলাবারুদ।
সিনিয়র পাকিস্তানী সামরিক
অফিসাররা সন্দেহজনকভাবে বিভিন্ন গ্যারিসনে আসা-যাওয়া শুরু
করলো। চট্টগ্রামে নৌ-বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা হলো।
১৭ মার্চ স্টেডিয়াম ই বি আর সি’র লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ
আর চৌধুরী, আমি চূড়ান্ত যুক্ত-পরিকল্পনা গ্রহণ করলাম।
লেঃ কর্নেল চৌধুরীকে অনুরোধ করলাম নেতৃত্ব দিতে।
দু’দিন পর ইপিআর-এর ক্যাপ্টেন (এখন মেজর) রফিক আমার
বাসায় গেলেন এবং ইপিআর বাহিনীকে সঙ্গে নেবার প্রস্তাব
দিলেন। আমরা ইপিআর বাহিনীকে আমাদের পরিকল্পনাভুক্ত
করলাম।
এর মধ্যে পাকিস্তানী বাহিনীও সামরিক তৎপরতা শুরু করার
চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করলো। ২১ মার্চ জেনারেল আবদুল
হামিদ খান গেল চট্টগ্রাম ক্যান্টমেন্টে। চট্টগ্রামে সামরিক
ব্যবস্থা গ্রহণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা প্রণয়নই তার এই সফরের
উদ্দেশ্য। সেদিন রেজিমেন্ট সেন্টারে ভোজসভায় জেনারেল
হামিদ ২০তম বালুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাতেমীকে বললো, “ফাতেমী, সংক্ষেপে,
ক্ষিপ্রগতিতে আর যত কম সম্ভব লোকক্ষয় করে কাজ
করতে হবে।” আমি এ কথাগুলো শুনেছিলাম।
২৪ মার্চ ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ঢাকা চলে এলেন। সন্ধ্যায়
পাকিস্তানী বাহিনী শক্তি প্রয়োগে চট্টগ্রাম বন্দরে যাওয়ার
পথ করে নিল। জাহাজ ‘সোয়াত’ থেকে অস্ত্র নামানোর জন্যেই
বন্দরের দিকে ছিল তাদের এই অভিযান। পথে জনতার
সাথে ঘটলো তাদের কয়েক দফা সংঘাত। এতে নিহত হলো বিপুল
সংখ্যক বাঙালি। সশস্ত্র সংগ্রাম যে কোন মুহূর্তেই শুরু
হতে পারে, এ আমরা ধরেই নিয়েছিলাম। মানসিক দিক
দিয়ে আমরা ছিলাম প্রস্তুত। পরদিন আমরা পথের ব্যারিকেড
অপসারণের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তারপর এলো সেই কালোরাত
২৫ ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী কালো রাত। রাত ১ টায় আমার
কমান্ডিং অফিসার আমাকে নির্দেশ দিলো নৌবাহিনীর
ট্রাকে করে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে জেনারেল আনসারির
কাছে রিপোর্ট করতে। আমার সাথে নৌবাহিনীর (পাকিস্তানী)
প্রহরী থাকবে তাও জানানো হলো। আমি ইচ্ছা করলে আমার
সাথে তিনজন অফিসারও থাকবে। অবশ্য কমান্ডিং অফিসাররের
মতে, সে যাবে আমাকে গার্ড দিতে।
এ আদেশ পালন করা আমার পক্ষে ছিল অসম্ভব।
আমি বন্দরে যাচ্ছি কি না তা দেখার জন্য লোক ছিল। আর
বন্দরের (সশরীর) প্রতীক্ষায় ছিল জেনারেল আনসারি।
হয়তো বা আমাকে চিরকালের মতোই স্বাগত জানাতে।
আমরা বন্দরের পথে বেরুলাম। আগ্রাবাদে আমাদের
থামতে হলো। পথে ছিল ব্যারিকেড। সেই
সময়ে সেখানে এলো মেজর খালেকুজ্জামান চৌধুরী, ক্যাপ্টেন
অলি আহমদের কাছ থেকে এক বার্তা নিয়ে এসেছে।
আমি রাস্তায় হাঁটছিলাম।। খালেক আমাকে একটু দূরে নিয়ে গেল।
কানে কানে বললো ‘তারা ক্যান্টনমেন্ট ও শহরে সামরিক
তৎপরতা শুরু করেছে। বহু বাঙালিকে ওরা হত্যা করেছে।”
এটা ছিল একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত সময়। কয়েক
সেকেন্ডের মধ্যেই আমি বললাম, “আমরা বিদ্রোহ করলাম।
তুমি ষোলশহর বাজারে যাও। পাকিস্তানী অফিসারদের গ্রেফতার
করো। অলি আহমদকে বলো ব্যাটেলিয়ন তৈরি রাখতে,
আমি আসছি।”
আমি নৌবাহিনীর ট্রাকের কাছে ফিরে এলাম।
পাকিস্তানী অফিসার, নৌবাহিনীর চীফ অফিসার ও
ড্রাইভারকে জানালাম যে আমাদের আর বন্দরে যাওয়ার দরকার
নেই। আমি নৌবাহিনীর ট্রাকের কাছে ফিরে এলাম। এতে তাদের
মনে কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না দেখে আমি পাঞ্জাবী
ড্রাইভারকে ট্রাক ঘুরাতে বলালম। ভাগ্য ভালো বলব,
সে আমার আদেশ মানলো। আমরা আবার ফিরে চললাম।
ষোলশহর বাজারে পৌঁছেই
আমি গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে একটা রাইফেল তুলে নিলাম।
পাকিস্তানী অফিসারটির দিকে তাক করে তাকে বলালম, “হাত
তোল। আমি তোমাকে গ্রেফতার করলাম।”
সে আমার কথা মানলো। নৌবাহিনীর লোকেরা এতে বিভ্রান্ত
হয়ে পড়লো, পর মুহূর্তেই আমি নৌবাহিনীর অফিসারদের
দিকে রাইফেল তাক করলাম। তারা ছিল আটজন। সবাই আমার
নির্দেশ মানলো এবং অস্ত্র ফেলে দিল।
আমি কমান্ডিং অফিসারের জীপ নিয়ে তার বাসার
দিকে রওয়ানা দিলাম। আর বাসায় পৌঁছে হাত রাখলাম
কলিং বেলে। কমান্ডিং অফিসার পাজামা পরেই বেরিয়ে এলো,
খুলে দিল দরজা। ক্ষিপ্রগতিতে আমি ঘরে ঢুকে পড়লাম
এবং গলা শুদ্ধ তার কলার টেনে ধরলাম।
দ্রুত গতিতে আবার
দরজা খুলে কর্নেলকে আমি বাইরে আনলাম। বললাম,
“বন্দরে পাঠিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিলে?
আমি তোমাকে গ্রেফতার করলাম। এখন লক্ষ্মী সোনার
মতো আমার সঙ্গে এস।” সে আমার কথা মানলো,
আমি তাকে ব্যাটেলিয়নে নিয়ে এলাম। অফিসারদের মেসে যাওয়ার
পথে আমি কর্নেল শওকতকে (তখন মেজর) ডাকলাম। জানালাম,
সমস্ত পাকিস্তানী অফিসারকে কী করে রাখা হয়েছে।
আমি অফিসে গেলাম। সবচেষ্টা ব্যর্থ হলো। তারপর রিং করলাম
বেসামরিক বিভাগে টেলিফোন অপারেটরকে। তাকে অনুরোধ
জানালাম- ‘ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট, কমিশনার,
ডিআইজি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের জানাতে যে, ইস্ট বেঙ্গল
রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটেলিয়ন বিদ্রোহ করেছে। বাংলাদেশের
স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করবে তারা। এদের সাথে আমি টেলিফোন
যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কাউকে পাইনি।
তারা অনুরোধ রক্ষা করতে রাজী হলো। সময় ছিল অতি মূল্যবান।
আমি ব্যাটেলিয়নের অফিসার, জেসিও আর জোয়ানদের ডাকলাম
এবং তাদের নির্দেশ দিলাম সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে।
তারা সর্বসম্মতিক্রমে হৃষ্টচিত্তে এ আদেশ মেনে নিলো।
আমি তাদের একটা সামরিক পরিকল্পনা দিলাম।
তখন রাত ২টা বেজে ১৫ মিনিট, ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সাল। রক্তের
আঁখরে বাঙালির হৃদয়ে লেখা একটি ক্ষণ। বাংলাদেশের জনগণ
চিরদিন স্মরণ রাখতে ভালোবাসবে। এই ক্ষণটিকে তারা কোনদিন
ভুলবে না, কোন দিন না। ((শহীদ জিয়ার নিজের লেখা ))
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৭
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×