somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ত্রিভুজের কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি যেমন জানি

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুপ্রিয় ব্লগার ত্রিভুজ তার একটি পোস্টে
তার প্রতিপক্ষদের চ্যালেঞ্জ করে কিছু প্রশ্ন রেখেছেন সেখানে আমি কিছু উত্তর দিয়েছি। আলোচনার সুবিধার্থে এখানে আবার তুলে দিলাম।


আসলে অনেক ব্যাপারেই মনে হয় আপনার ধারণা অস্পষ্ট। আপনি যাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তাদেরই উচিত আপনার প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়া। তবে বাংলাদেশের একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে ইতিহাস যেটুকু জেনেছি তাতে আপনার কিছু প্রশ্নের জবাব হয়তো আমি দিতে পারব। আমার মতো সাধারণ ব্লগার অনেকেই দিতে পারবেন। কিন্তু সেটা আপনি গ্রহন করবেন কিনা।

প্রশ্ন ১, ২ এবং ৩ মোটামুটি একই প্রশ্ন ঘুরেফিরে করা হয়েছে।

ওসমানী ভারত বিদ্বেষী ছিলেন না। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে একজন বাঙালী বলে চরম বঞ্চনার শিকার হয়েছিলেন, তাকে আগাম অবসরও দেওয়া হয়েছিল শুধু কর্ণেল পদোন্নতি দিয়ে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় তার সমপর্যায়ের অনেকেই লে. জেনারেল পর্যন্ত পৌছে গেছেন। একটা স্বাভাবিক যুক্তি দিচ্ছি আপনাকে। ঠাণ্ডা মাথায় পড়বেন দয়া করে। ১৯৭১ সালে যে যুদ্ধটা হয়েছিল তা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের কাছ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীন হওয়ার যুদ্ধ। দু দেশের মাঝখানে ভারত। যুদ্ধে তারা একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল। পূর্ব পাকিস্তান যেটাকে বলে স্বাধীনতা যুদ্ধ, পশ্চিম পাকিস্তান সেটাকেই ১৯৭১ সালে বলেছে আভ্যন্তরিন গোলযোগ, গৃহযুদ্ধ ইত্যাদি। পূর্ব পাকিস্তান ভারতকে ব্যবহার করেছে এই যুদ্ধে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার অবস্থান করেছে ভারতে, সাধারণ মানুষ প্রাণ বাচাতে আশ্রয় নিয়েছে সে দেশে (এক পর্যায়ে শরণার্থী প্রায় এক কোটি হয়েছে যাদের থাকা খাওয়ার ব্যয় বহন করেছে ভারত)। মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে ট্রেনিঙ নিয়ে তাদের অস্ত্র দিয়েই যুদ্ধ করেছে। আপনাকে এটা বুঝতে হবে মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু তখনও অখন্ড পাকিস্তান সরকারের কাছে দুষ্কৃতিকারি, আভ্যন্তরীন গোলোযোগ সৃষ্টিকারী। এই মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সেনা বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন (যা তখন মুক্তিফৌজ বলে পরিচিত ছিল)। কর্ণেল ওসমানীকে জেনারেল পদোন্নতি দিয়ে বাংলাদেশ সরকার এই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ভার দেয়। তার অধীনেই বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন। আবারও বলি এই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিন্তু পাকিস্তান সরকারের কাছে তখনও দুষ্কৃতিকারী এবঙ বিদ্রোহী। পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক প্রশাসক তাদের (সেক্টর কমান্ডার ও সিনিয়র সেনাকর্তাদের) বারবার নোটিশ পাঠিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বলেছে তখন।
ভারত পরোক্ষ ভাবে এই যুদ্ধে থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ছিল না। তাই তখন পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার ভারতকে ইচ্ছেমতো অভিযুক্ত করলেও কিছু করতে পারছিল না। এখানে জেনে রাখুন যে এর আগে ১৯৬৭ সালেও পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল এবং পশ্চিম রণাঙ্গনে পাঞ্জাবের অনেকখানিসহ একটা বড় অংশ হারিয়েছিল ভারত। সেই জমি উদ্ধারের জন্য মরিয়া ছিল তারা।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারত আক্রমন করে পাকিস্তান। তখনই শুরু হয়ে যায় পাক-ভারত যুদ্ধ। শুধু বাংলাদেশ নিয়ে নয় সব সীমান্তেই। পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ করেছে ভারত ও বাংলাদেশের মিত্র বাহিনী। এদের অধিনায়ক ছিলেন ভারতীয়। গোটা যুদ্ধে তো বটেই। পূর্ব রণাঙ্গনে পাকিস্তান যখন আত্মসমর্পণ করে, সেটা আনুষ্ঠানিকভাবেই তারা করতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় অধিনায়কের কাছে। কারণ তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। পশ্চিম রণাঙ্গনে আরো কিছুদিন যুদ্ধ চলেছে, ততদিনে ভারত তাদের পুরো জমি উদ্ধার করে ফেলেছে।

এখন ভারতীয় এই আগ্রাসনকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তারা তিনদিক থেকে আমাদের ঘিরে আছে। আমাদের রাষ্ট্রনীতি এবং ব্যবসাবানিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছুতেই তাদের দাদাগিরি আমাদের সহ্য করতে হয়। কারনটা আর কিছু নয়, আমরা ভারতকে মোকাবেলার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নই। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে হয়তো ভারতীয় নেতাদের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে মিছিল করা যায়, পত্রিকায় গরম গরম লেখা যায়, বক্তৃতা দেয়া যায়। কিন্তু সরকারে গেলে ভারতকে তোষন করতেই হবে। কারণ আমাদের চালটা থেকে চিনিটা পর্যন্ত তাদের থেকে আনতে হয়। এমনকি কোরবানীর গরুটাও। পেটে খেলে পিঠে তো সইতে হবেই।


৪. শামসুর রাহমানকে নিয়েও আপনি ভুল জানেন। উনি দেশ ছেড়ে যাননি, কিন্তু যুদ্ধের সমযটা পালিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনিমজলুম আদিব (নির্যাতিত কবি) ছদ্মনামে কবিতা লিখেছেন যা সে সময় ভারতীয় দেশ পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কবিতাগুলো নিয়ে তার একটি বই আছে বন্দিশিবির থেকে। আর বেশ্যার সঙ্গে আজানের তুলনা নিয়ে যা বলছেন সেটাও আসলে অজ্ঞতাপ্রসূত। এমন চান্দিপসর রাইতে... দিয়ে শুরু কবিতাটা এক মাতালের প্রলাপ। সে যা তা বলছে। কবিতার চরিত্র, গল্পের চরিত্র কিংবা উপন্যাসের চরিত্র সবসময়ই ফিকশন বলে বিবেচিত হয়। মাতালের প্রলাপ হিসেবে কবিতাটা অসাধারণ। এখন যদি সেই প্রলাপ ধরে কবিকে আক্রমণ করতে হয়, তাহলে সবার আগে ধরতে হবে কবিতার লোকটা মদ কেন খেল? মদ খাওয়া তো হারাম।


আপনার ৫ ও ৬ নম্বর নিয়ে আমার কিছু জানা নেই।

৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলবো আবারও আপনার ভুল হচ্ছে। বঙ্গভঙ্গ বিষয়টাই আপনি বোধহয় বুঝতে পারেননি। এনিয়ে নাস্তিকের ধর্মকথা নামের একজন ব্লগার বেশ ভালো একটা পোস্ট দিয়েছেন। যদি খোলামন নিয়ে পড়েন তাহলে নিশ্চয় আপনার অনেক ভ্রান্তি কেটে যাবে।

এখন কথা হচ্ছে মানুষ তার প্রচলিত বিশ্বাসকে অস্বীকার করতে চায় না কখনই। সেটা দোষের নয়। দোষ হচ্ছে অন্ধের মতো তা আকড়ে থাকা, প্রতিপক্ষের যুক্তি শুনতে না চাওয়া। কিছু মনে করবেন না, আপনার মধ্যে সেটা অনেকখানিই প্রকট।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:৩১
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×