somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খন্ডিত রুপকথা (৯ম অংশ)

০২ রা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢাকের শব্দে কানে তালা লেগে যাবার জোগাড়।তবুও ঢাকের শব্দ ছাপিয়ে শ্যামার উত্তেজিত গলা শুনতে পায় দীপ্ত। টেকেরহাটের শরনার্থী ক্যাম্পের দূর্গা পূজার মন্ডপ।দীপ্ত মন্ডপের ভেতরে ছিল।তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে।ততক্ষণে যা হবার হয়ে গিয়েছে।শ্যামাদার হাতে বাঁশ।সবাই তাকে ধরে সরিয়ে নিয়ে যায়।সামনে এক ভারতীয় জওয়ান মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।জওয়ানের মাথা ফেটে গিয়েছে।কপাল বেয়ে রক্ত ঝরছে।কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি থমথমে হয়ে যায়।ইউনিফর্ম পড়া অন ডিউটি ভারতীয় জওয়ানের মাথা ফাটিয়েছে শ্যামা।সাথে ইলিয়াছ ও আরও অনেকে আছে।সেনদা (সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত) ঘটনাস্থলে নেই।সবাই চরম বিপদের আশংখা করে।ভারতীয় জওয়ানরা এসে শ্যামাদের ধরে নিয়ে যায়।তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ভারতীয় শিবিরে।মেজর ভাট এর দপ্তরে কোর্ট মার্শালের দাবী জানায় ভারতীয় জওয়ানরা।

-জগতজ্যোতি তুমি জওয়ানের মাথা ফাটালে কেন?
মেজর ভাট প্রশ্ন করেন।
-পাকিস্থানী আর্মীর যে আচরণের জন্য আমরা অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হয়েছি,সেই আচরণ ভারতীয় বাহিনীর সৈনিকের কাছে পেয়েছি।তাই আঘাত করতে বাধ্য হয়েছি।
স্পষ্ট উচ্চারণে শ্যামা জানায়।
-কেন,আমাদের জওয়ান আবার কি করেছে?
-শরণার্থী শিবিরে আমাদের এক তরুণীর শ্লীতহানি করেছে।

মেজর ভাট শাস্তি লঘু করে দেন, তার প্রিয় গেরিলাদের দিয়ে কয়েকটি বাংকার খুঁড়িয়ে নেন।

রাজাকারদের একটি দল জগতজ্যোতির লাশ তন্নতন্ন করে খুঁজে।রাজাকাররা নিশ্চিত ছিল জগতজ্যোতি দাস মারা গিয়েছে।প্রথম দিন লাশ পাওয়া যায়না।পরদিন অর্থাৎ ঈদের দিন বিলের কাদাপানির মধ্যে থেকে জগতজ্যোতির লাশ ভেসে ওঠে।রাজাকাররা মহাউল্লাসে সেই লাশ নৌকার সাথে বেঁধে নেয়।পাকিস্থানী বাহিনী আর রাজাকারদের সাক্ষাত যম জগতজ্যোতির মৃতদেহ নিয়ে বীরত্ব প্রদর্শন শুরু করে।বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে শ্যামার মৃতদেহ, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের জন্য।

দীপ্ত আর জগতজ্যোতি নৌকায় বসে আছে।দীপ্ত পা দিয়ে জল নাড়ে।জ্যোস্নার আলো চিক চিক করে ওঠে ছোট ছোট ঢেউয়ের মাথায়। জগত তাকিয়ে আছে অন্ধকারে।কিছু একটা খুঁজছে।
-জগতদা তোমার ডাক নাম শ্যামা?
দীপ্তর প্রশ্ন শুনে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে জগতজ্যোতি দাস।
-দাদা,তোমারে এভাবে বিসৃত হলো কেন বাংলাদেশ?
দীপ্ত প্রশ্ন করে জগতকে।জগত উত্তর করেনা।চুপচাপ চেয়ে থাকে আঁধারের মধ্যে।
-তোমরা কি ভেবেছিলে দেশ স্বাধীনের পড় সমাজতন্ত্র কায়েম করতে পারবে? তুমি তো আউয়ুব বিরোধী আন্দোলন করেছিলে ছাত্র ইউনিয়নের হয়ে?
-হ্যাঁ করেছিলাম।
-তুমি মারা যাওয়ার পর ভারতীয় বেতার হতে তোমার যুদ্ধদিনের বীরত্বগাঁথা প্রচার করেছে।স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে বারবার প্রচার করা হয়েছে তোমাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হবে। আর আফসোস দেখো তোমাকে,তোমার গেরিলা দলকে বেমালুম ভুলে ছিল বাংলাদেশ!
-আমি যখন ট্রেনিং করার জন্য মেঘালয়ে গিয়েছি,ইকো-১ এ ট্রেনিং করেছি,একাত্তরের রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছি প্রাণপণ তখনতো পুরুস্কারের কথা মনে হয়নি।আজ তোমার কাছে শুনছি উপাধির কথা।উপাধি পেলে আমার লাভ কি?উপাধি না পেলে আমার কি ক্ষতি? যখন যুদ্ধে গিয়েছি তখন আমার বয়স ২১ বছর ছিল।পুরস্কার বা লাভের আশায় মুক্তিযুদ্ধ করিনি।শুধু জানতাম আমার দেশমাতা আমাকে ডাকছে।সেই ডাক কিভাবে উপেক্ষা করতাম?তুমি পাড়তে?
শ্যামার কথায় বিব্রতবোধ করে দীপ্ত।চুপ হয়ে যায়।পা দিয়ে জল নাড়ে আর জ্যোৎস্নার আলোর সরে যাওয়া দেখে।
-তোমরা যারা একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম তারা বিষয়টিকে দেখছো ঘটনার বাহিরে দাঁড়িয়ে।তোমরা জানতে চাও পূর্বপুরুষের বীরত্ব,কষ্ট আর দুঃখাঁথা।আসলে আমরা যারা যুদ্ধ করেছি একাত্তরের রণাঙ্গনে,তাদের মূল লক্ষ্যই ছিল দেশমাতাকে পাকিস্থানী বর্বরতার হাত হতে রক্ষা করা।আমদের উপর পাকিস্থানী সামরিক জান্তা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল।ধর্মীয় কোন ইস্যু ছিলনা এতে।পাকিস্থানী সামরিকজান্তা আর এদেশীয় তাদের দোসররা প্রোপাগান্ডা হিসাবে ধর্মটাকে সামনে এনেছিল।তুমি যদি মেজর শালিকের এ উইটন্যাস টু সারেন্ডার বইটি পড় তবে দেখবে সেখানে লিখা আছে এক সাধারণ সৈনিকের নির্মম অভিজ্ঞতার কথা।সেই সৈনিকের ভাষ্য মতে,একদিন রাজাকারদের কাছ হতে তারা তথ্য পায় একদল মুক্তিযোদ্ধা গ্রামে ঘাঁটি গেড়েছে।সৈনিকেরা খুব ভোরে গ্রামটি ঘিরে ফেলে।যখন তারা গ্রামটি ঘেরাও করছিল তখন গ্রামের অনেক বাড়িতে কোরান তেলওয়াত হচ্ছিল।আর কোরান তেলওয়াতের মধুর সুর সৈনিকরা শুনতে পাচ্ছিল।অপারেশন যখন শেষ হয় তখন অনেক বেলা হয়েছে আর গ্রামটি কোন প্রাণী জীবিত ছিলনা।অপারেশন শেষ করে আমরা জানতে পারি ওই গ্রামে কোন বিদ্রোহী বা মুক্তি ছিলনা আর সবাই ছিল মুসলিম।আমাদের ভুল সংবাদ দেওয়া হয়েছিল।
-জ্যোতিদা তোমার যুদ্ধদিনের গল্প শোনাবে?
দীপ্ত জ্যোতির কাছে জানতে চায়।
-চল আমরা ডা.যোগেনন্দ্র চন্দ্র দেবের কাছে যাই। তার আরোগ্য ভবনে যাই।আজমেরীগঞ্জের বাজারের মধ্যে উনার দোকান।একাত্তরে আমরা রাত্রে উনার কাছে যেতাম, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্যে।তিনি চিকিৎসা দিতেন আর ডেবিস কোম্পানীর ভিটামিন বি ক্যাপস্যুল দিতেন।

জগতজ্যোতি আর দীপ্ত জলসুখায় আসে।ডাক্তার চেম্বারে একা একা বসে আছেন।জগতজ্যোতিকে দেখে একগাল হেসে উঠেন।
-আরে শ্যামা,সাথে কে? ডাক্তার প্রশ্ন করেন।
-ও হলো দীপ্ত।একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম।যুদ্ধদিনের গল্প শুনতে চায়।
-বাবা দীপ্ত তুমি সঠিক লোককেই পেয়েছো।মুক্তিযুদ্ধের ভয়ংকরতম গেরিলাদল “দাস পার্টির” কমান্ডারকে পেয়েছো।
ডাক্তার যোগেনন্দ্র স্টেথো ঠিক করতে করতে বলেন।
-আপনাদের এই দিকে রাজাকার ছিলনা?
দীপ্ত জানতে চায়।
-ছিলনা আবার?রাজাকার সিরাজ মিয়া আর আলী রেজা।সিরাজ মিয়া মারা গিয়েছে।আলী রেজা ঢাকার কোথাও থাকে।এরা দুইজন একাত্তরে বহুমানুষের বাড়ি ঘর পুড়িয়েছে।বহুমানুষের ঘরবাড়ি লুটপাট করেছে।
ডাক্তার যোগেন্দ্র বলেন।
-শ্যামাদা,আপনার যুদ্ধের গল্প এবার করুন।
দীপ্ত বলে।
শ্যামা নড়েচড়ে বসে।বলা শুরু করে।

(চলবে)

১ম অংশ (Click This Link)
২য় অংশ (Click This Link)
৩য় অংশ (Click This Link)
৪র্থ অংশ (Click This Link)
৫ম অংশ (Click This Link)
৬ষ্ঠ অংশ (Click This Link)
৭ম অংশ (Click This Link)
৮ম অংশ (Click This Link)


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×