somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খন্ডিত রুপকথা (৭ম অংশ)

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ড্রয়িং রুমে চুপ করে বসেছিল রাজু।রাস্তার দিকের জানালা হাট করে খোলা।কুহুক ডেকে ওঠে।রাজু আড়মোড়া ভাঙে।মনে মনে ভাবে,না আজ বোধহয় তেনারা আসবেন না।ডায়েরী বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়।এমন সময় অনেকগুলি পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়।দরজার দিকে তাকায় রাজু।
-কেমন আছেন রাজু সাব?
-আরে নিয়াজী সাব? আসেন আসেন।আপনার জন্যই বসে আছি।
-রাজু সাব আজ আরও তিনজন মেহমান এনেছি।আপনার চায়ের হাত এতো ভালো যে উনাদেরও দাওয়াত দিয়ে আনলাম।
রাজু তিনজনকে দেখে।কাউকেই চিনতে পারেনা।নিয়াজী চেয়ারে বসেন।বাঁকী তিনজন দাঁড়িয়েই থাকে।
-মেজর শালিক,আপ বসিয়ে।নিয়াজী তিনজনের মধ্যে একজনকে বলেন।
রাজু আরও দুটি চেয়ার আনতে যেতে চায়।কিন্তু নিয়াজী সাব নিষেধ করেন।তিনি বলেন,ওরা ইয়াংম্যান আছে ওরা বসবেনা।রাজু চা বানিয়ে আনে।সবাই চায়ে চুমুক দেয়।
-তো,মেজর কেমন লাগছে রাজুর হাতের চা?
-বহুত খুব।
রাজু চুপ করে থাকে।কিছু বলেনা।
-রাজু সাব, আপনি হয়তো মেজর সাবকে চিনতে পারছেন না।
রাজু মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানায়।
-মেজর সাব খুব ভালো লেখক।আমরা যখন পরাজিত হয়ে দেশে ফিরে গিয়ে হতাশ সময় কাটাচ্ছিলাম,উনি তখন বই লিখেছেন।
-কি বই?
-আ উইটন্যাস টু সারেন্ডার।আপনি পড়েছেন জানি।
-না পড়ার সুযোগ হয়নি।
এমন সময় জানালা দিয়ে দমকা বাতাস ঢুকে পড়ে।টেবিলে রাখা কয়েকটি পাতা নিয়াজী সাহেবের দিকে উড়ে যায়।রাজু উঠে গিয়ে জানালা বন্ধ করে দেয়।
-ঝড় আসবে দেখছি।আমি মোমবাতি রেডি করি।বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে।
এই কথা বলে রাজু রান্না ঘরের দিকে যায়।আর ঠিক এই সময় বিদ্যু চলে যায়।বাইরে বাজ পড়ে কোথাও।রাজু মোমবাতি ধরিয়ে বসার ঘরে আসে।মোমবাতি টেবিলের উপর রাখে।রাজুর গা ছমছম করে উঠে।মোমবাতির আলোয় সবগুলিকে প্রেতাত্মার মত মনে হচ্ছে।
-রাজু সাব,এখানে কয়েকটি পাতা উড়ে এসেছে।মনে হয় আপনার ডায়েরীর।কয়েকজনের বাসার ঠিকানাসহ নাম লিখা আছে।নামগুলি আমি পড়েছি।সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।উনাদের তো হত্যা করা হয়েছে।আপনি আবার আপনার ডায়েরীতে উনাদের নাম লিখেছেন কেন?
-ওগুলি আমার ডায়েরীর পাতা নয়।ওগুলি ৩৫০ নাখাল পাড়ায় একজনের বাসায় পাওয়া গিয়েছে।
পিছনে দাঁড়ানো যুবকদ্বয়ের একজন নড়ে উঠে।আর একজন মুচকী হাসে।
-তুমি হাসছো কেন?যুবকের দিকে তাকিয়ে মেজর শালিক ধমকে উঠে।
-হাসছি স্যার এই কারণে,বেটা একটা গর্দভ আছে।প্রমাণ রেখেই পালিয়েছিল।তাইতো আমার মত জোর গলায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেনা।দেখুন স্বাধীনের পর আমি আল-বদর হেড কোয়ার্টার হতে টাকা আর সব প্রমাণ সাথে নিয়ে পালিয়েছিলাম।তাইতো আমি এখন লন্ডনে ইসলামিক চিন্তাবিদ হিসাবে পরিচিত।মসজিদের ইমামতি করি।আর সাপ্তাহিক দাওয়াত সম্পাদনা করি।
-হ বেটা,তোরে যেন কেউ চিনেনা।বেটা খবিশ।তুই পালানোর সময় ড্রাইভার মফিজউদ্দিন দেখে ফেলেছিল।নুরানী দাঁড়ি রাখলেই ইবলিশ কখনও ফেরেস্তা হয়না।শালা তুই বেটা মিরপুরে কি করতিস মনে নেই?ওই যে তোর শিক্ষক,গুলি খাওয়ার পরও যখন মরলোনা,তুই এগিয়ে গিয়ে জবাই করিসনি?
-আর তুই কি করেছিলি,আমি মনে হয় ভুলে গিয়েছি?
নিয়াজী ধমকে উঠেন।দু’জন থেমে যায়।
-মেজর সাব,রাজু ভাই মন্দ লোক নয়।গতকাল আমার সাথে তার দেখা হয়।সে আর আমি ’৭১ এর স্মৃতিচারণ করি।গতকাল গল্প শেষ হয়নি।যেহেতু রাজাকার,আল-বদর,আল-শামস নিয়ে কথা,তাই আপনাদের আনলাম।
রাজু কোন কথা বলেনা।উনারা বলা শুরু করেন।

আমরা যখন রাজাকার গঠন শুরু করি,তখন জামাত-ই ইসলামই সব চাইতে বেশী লোকবল নিয়োগ করে।এতে অন্যান্য ডানপন্থী দলগুলির মধ্যে অসোন্তষ দেখা দেয়।মেজর শালিক দায়িত্ব পায় বিষয়টি দেখ-ভাল করার জন্য।মেজর শালিক উল্লেখ করেন যে,রাজাকার,আল-বদর,আল-শামস এই তিনটি আলাদা আলাদা নাম দিয়ে দল গঠন করা হয়,যেন মনে হয় সব লোক একদল থেকে আসেনি।আল-শামসকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রীজ-কালভার্ট পাহারা দেওয়ার জন্যে।আল-বদরকে স্পেশাল এসাইন্টমেন্ট দেওয়া হয়েছিল।আল-বদর মূলত গড়ে উঠেছিল জামাত-ই ইসলামের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ইসলামিক ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে যে সদস্যরা মূলত ছিল স্কুল,মাদ্রাসা,কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র।রাজু কিছু বলার চেষ্টা করে।নিয়াজী সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে যান।উনাকে কথা বলার নেশায় পেয়ে বসেছে।রাজাকারদের মূলত সেখানেই বেশী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল,যেখানে আমাদের আর্মীদের কন্রোবিল ছিল।রাজাকাররা মূলত মুক্তিদের চিনিয়ে দিত।চিনিয়ে দিত হিন্দুদের।আমাদের জন্যে বাঙালী রমনী ধরে আনতো।লুটপাট আর ধর্ষণেও অংশ নিত।অর্থাৎ রাজাকাররা মূলত ছিল আমাদের তৈরি মিলিশিয়া।আল-বদরকে আমরা গুপ্ত ঘাতক হিসাবে ব্যবহার করতাম।বাঙালীদের মধ্যে যারা ছিল অগ্রগামী-জ্ঞান,বিদ্যায় পারদর্শী তাদেরকে ধরে এনে হত্যা করা।

চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×