somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খন্ডিত রুপকথা (১ম অংশ)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)
ভ্লাদিমির কিছু বলতে চাইলো।মিগ-২৯ এর বিস্ফোরণের শব্দে রাজু শুনতে পেলোনা।শুধু ককপিঠে আগুনের ফুলকির মধ্যে ভ্লাদিমিরের হাসিমাখা মুখ দেখা যায়।মুহূর্তের মধ্যে মিগ বিস্ফোরিত হয়।বাঁকি দুটি মিগ ডগ ফাইট শেষ করে ঘাঁটিতে ফিরে যায়।রাজু খেয়াল করে বঙ্গোপসাগর গ্রাস করে নেয় মিগের ধ্বংসাবশেষ।রাজুর ঘুম ভেঙ্গে যায়।বিবেক বিছানার কিনারে বসে আছে।পা দোলাচ্ছে সমানে।
-তোমার জানতে ইচ্ছা করছেনা।হঠাৎ মিগ এলো কোথা হতে?
-স্বপ্ন দেখাচ্ছিলে?তবে শেষ হলোনা কেন?
-তোমার বাহির হওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে তাই।

২০১৩ সাল।দীপ্ত এস এস রোডে হাঁটছে।কানে ভেসে আসে কচি কন্ঠের চিৎকার¬-জয় বাংলা।মনে মনে ভাবে শাহবাগ আন্দোলন বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও বদলে দিতে সমর্থ হয়েছে।
-তুমি ভাবছো গুণগত পরিবর্তন?
বিবেকের কথায় দীপ্তর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
-আমি রাজনীতিবিদ নই।
বেশ ঝাঁঝ নিয়ে বলে।দীপ্ত সম্ভবত বেশ জোরেই বলেছিল।পাশের লোকটি অবাক চোখে তাকায় দীপ্তের দিকে।

-দীপ্ত বাবু।ও দীপ্ত বাবু,দোকানে আসেন গল্প করি।
দীপ্ত ডাক শুনে চৌধুরী মেডিকেলের দিকে এগিয়ে যায়।সিরাজগঞ্জের অনেক পুরানো ঔষধের দোকান এই চৌধুরী মেডিকেল।
-কেমন আছেন সানু মামা?আপনার চোখের কি অবস্থা?
-আপনার সাথে দেখাই হয়না।এখন বেশ ভালো আছি।
-মুক্তিযোদ্ধা বিল্ডিংটা খুব সুন্দর হয়েছে মামা।
-হ্যাঁ এই সরকার বেশ খরচ করছে।
-সানু মামা,সিরাজগঞ্জে কতজন মুক্তিযোদ্ধা আছে?
-আগে যা জানতাম তার চেয়ে দ্বিগুণ।
দু’জনেই একসাথে হেঁসে উঠে।সানু জানে দীপ্ত ওর কাছে আসেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে।কোন ভানিতা না রেখেই সানু গল্প বলতে শুরু করে।

আমরা রাতের বেলা নৌকা চালিয়ে ভারতের বর্ডারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম।দিনের বেলা নৌকা বাইলে পাকিস্থানী বিমানের চোখে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকতো।মোট চারটি নৌকা ছিল আমাদের বহরে।এক হিন্দু পরিবার ছিল আমাদের সাথে।সেই পরিবারে সুন্দর একটি মেয়ে ছিল।সাবধানতা সত্বেও পাকিস্থানী বিমান আমাদের নৌকার বহর দেখে ফেললো।আমরা তখন এক চড়ে নৌকা ভিড়িয়ে ছিলাম।বোমায় একটি নৌকা নষ্ট হয়ে যায়।জান দীপ্ত বাবু ওই মেয়েটির কথা এখনও মনে পড়ে।যদি হিন্দু না হতো তবে অবশ্যই বিয়ে করতাম।হ্যাঁ,বাবু তোমার মনে প্রশ্ন আসতে পারে,আমি তো জোর করেই বিয়ে করতে পারতাম।জোর করে ধর্মান্তরিত করতে পারতাম।অবশ্যই পারতাম।আর এমন ঘটনা তখন অনেক ঘটেছে।তবে জানকি ওই সময়টাতে দেশের প্রতি এতো তীব্র টান ছিল যে,সবাইকে আগলে নিয়ে সীমান্ত পার হওয়াটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।সীমান্ত পার হওয়ার পর আমরা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য নাম লিখাই।আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় আসামের দুর্গম অঞ্চলে।দীপ্ত বাবু,ট্রেনিং আসলেই কঠিন।মাঝে মাঝে পালিয়ে আসতে ইচ্ছা করতো।ট্রেনিং এর শেষের দিকে আমাদের সত্যিকার বুলেট ব্যবহার করতে দেওয়া হতো।হ্যাঁ, এ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল।আমাদের সাথের একজন মারা গিয়েছিল।তবে যখন দু’দল মুখোমুখি হতাম,অর্থাৎ একদল মুক্তযোদ্ধা আর অন্যদল পাকিস্থানী সেনাবাহিনী সাজতাম।এ সময় সত্যিকার বুলেট দেওয়া হতোনা।একদিন এই যুদ্ধের তীব্রতা এত ব্যপকতা পেয়েছিল যে হাতাহাতি-ঘুঁষাঘুঁষি শুরু করে দিয়েছিলাম।একজনতো ঘুঁষি মেরে অন্যজনের দাঁতই ভেঙ্গে ফেললো।শেষে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য এসে আমাদের থামায়।



১৯৭১ সালের একটি দিন।দীপ্ত কি করবে ভেবে পাচ্ছিলনা।বিবেক দীপ্তকে বলে,আজ(সোমবার) বায়তুল মোকারমে যেতে হবে।সংগঠনের মিছিল আছে,বদর দিবস উপলক্ষে।সভাপতি আলি আহসান মুজাহিদ মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন।দীপ্ত দু’বছর ধরে ইসলামী ছাত্র সংঘে যোগ দিয়েছে।মুজাহিদ ভাইকে দীপ্তর খুব ভাল লাগে।কি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব মুজাহিদ ভাইয়ের।সঠিক সময় দীপ্ত মিছিলে যোগ দেয়।মিছিলে শ্লোগান ছিল-“ভারতকে ধ্বংস কর।পাকিস্থান রক্ষা কর।ভারতের দালালরা হুঁশিয়ার সাবধান।পাকিস্থানের মাটি ইসলামের ঘাঁটি”।মিছিল বায়তুল মোকারমে এসে শেষ হয়।আর সংক্ষিপ্ত জমায়েত হয়।বিভিন্ন বক্তারা এসে বদর দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরেন।আর বলেন,ভারত পাকিস্থানকে ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র করছে।সবশেষে সভাপতি মুজাহিদ বক্তব্য দিতে আসেন।শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয় চারপাশ।দীপ্ত শ্লোগানে গলা মেলায় জোর গলায়।নেতা বলা শুরু করেন,-আপনারা জানেন ইসলামের জন্য পাকিস্থানে আমরা লড়ছি।শুধু আমরা নই সমগ্র পৃথিবীতে আজ মুসলমানেরা ইসলামের জন্য লড়ছে।ভাইয়েরা আপনারা শপথ নিন আজ হতে কোন হিন্দুর লেখা বই কোন লাইব্রেরীতে থাকবেনা।আমাদের স্বেচ্ছাসেবীগণ আপনারা যে লাইব্রেরীতে হিন্দুর লেখা বই পাবেন পুড়িয়ে ফেলবেন।কি পুড়াবেন তো?সবাই সমস্বরে গর্জে ওঠে।আপনারা জানেন,সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী গোলাবর্ষণ করছে।আর নিরীহ পাকিস্থানী ভাইয়েরা মারা যাচ্ছে।আপনারা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন।ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের হত্যা করুন।বিজয় আমাদের আসবেই।দীপ্ত বেশ চনমনে ভাব নিয়ে হাঁটা শুরু করে।হাঁটতে হাঁটতে বুঝতেই পারেনা কত সময় পেরিয়ে গিয়েছে।খেয়াল করে সে শাহবাগে।আর সেখানে শ্লোগান হচ্ছে-“ম তে মুজাহিদ।তুই রাজাকার।তুই রাজাকার।ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই।রাজাকারের ফাঁসি চাই”।দীপ্ত প্রচন্ড অবাক হয়ে চারপাশে তাকায়।খেয়াল করে দূরে ভিড়ের মধ্যে বিবেক দাঁড়িয়ে আছে।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৫৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×