somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরব ডায়েরি – ২৩ (জাবাল আল সুদা- The Black Mountain)

০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
অনেকদিন ঘুরতে যাওয়া হয়নি। তাই সবাই চাচ্ছিলাম কোথাও বেড়িয়ে আসতে। সবাই একসাথে হয়ে ঠিক করলাম আমরা আল সুদা যেতে পারি। আমাদের টিমের অনেকেই আগে ঘুরে এসেছে, তবুও তারা আবার যেতে চায়। লিজা, ইশরাত, ইশরাতের হাজবেন্ড শফিক ভাই ও আমার জন্য হবে এটা প্রথম সুদা ভ্রমন।

আল সুদা হচ্ছে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ চূড়া। ২৯৯৫ মিটার (১০,৮৪৮ ফিট) উচ্চতার আল সুদা সৌদি আরবের সবচেয়ে ঠান্ডা স্থানও বটে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ, চমৎকার আবহাওয়া আর নয়নজুড়ানো সৌন্দর্যের কারনে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে।আবহা’য় যে দুমাস সাফিয়া (গ্রীষ্মকালীন মেলা) থাকে তখন সুদা থাকে অনেক জমজমাট।

সুদা’র সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।

২৯ সেপ্টম্বর (বৃহঃবার), আমরা সবাই তৈরি । আগের দিন ইশরাতের হাজবেন্ড শফিক ভাই জিজান হতে চলে এসেছেন। দু’জন দুই জায়গায় চাকুরী করে। তাই প্রতি উইকেন্ডেই শফিক ভাই আবহা চলে আসেন। আনোয়ার ভাই টোয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার নিয়ে এসেছে (এটা নিয়েই আমরা ফিফা ভ্রমন করেছিলাম) । আমরা ৪ ফ্যমিলি (আদিল ভাই, শফিক, মিলন ও আমি)খাবার দাবার সহ দুপুর ১ টার দিকে রওনা হলাম সুদা’র পথে। এই দুপুর বেলাতেও সবাই গরম কাপড় পড়ে নিয়েছিলাম, ওখানে অনেক ঠান্ডা। তবে সামার সিজনে আরামদায়ক আবহাওয়া থাকে। আমাদের বাসা থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের ড্রাইভ। পাহাড়ে উঠার পথে দু’পাশে সবুজের সমারোহ- জুনিপার গাছের বিস্তির্ণ অরণ্য। পাহাড়ের গা ধাপে ধাপে কেটে বিভিন্ন ফসল চাষ করতে দেখলাম, অনেকটা আমাদের জুম চাষের মতোই।

পাহাড়ের উপর অনেক হোটেল আর কটেজ। এখন অবশ্য তেমন ভীড় নেই। এদের ব্যবসা সাফিয়া’র সময় ২ মাস। যেতে যেতে সবাই আশা প্রকাশ করলাম এখানে একটা রাত কটেজে কাটাতে হবে।

জুনিপার গাছ

পাহাড়ের গায়ে চাষ হচ্ছে

রাস্তার পাশে গ্রাম্য সৌদি (বদু) মধু বিক্রী করছে

আমাদের গাড়ী রাস্তার একপাশে থামলো। চারপাশে সাদা মেঘের ভেলা। পাহাড়ের নীচে তাকাতেই অবিশ্বাস্য দৃশ্য- নীচে “রেজাল আলমা” নামে একটি ছোট গ্রাম আছে, সেখানে নামার জন্য পাহাড়ের গায়ে রাস্তা করা হয়েছে। ভয়ংকর সেই রাস্তা উপর থেকে সাপের মতোই লাগলো। অনেক ঝানু ড্রাইভার ও এই রাস্তা বেয়ে নামতে চায় না, আমাদের ড্রাইভারতো না-ই। অল্প একটু প্রসস্ত রাস্তাটা এমন একবার নামলে ফেরত আসার উপায় নেই, গ্রাম হতে ঘুরে আসতে হবে। এই রেজাল আলমা গ্রামে আমাদের ইউনি’র একটি ক্যাম্পাস আছে। অনেকে প্রতিদিন এ পথে যাতায়াত করে, ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠে। কেউ কেউ গ্রামে থেকেই চাকরি করে। গ্রামে সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। একটা গ্যাস স্টেশন, মসজিদ, ২/৩টা গ্রোসারি শপ এই যা অবলম্বন।



রোড টু “রেজাল আলমা”

রেজাল আলমা গ্রাম

একসময় ঘন মেঘ আমাদের ঢেকে ফেলল। নীচে তাকিয়ে আর রোডটি দেখতে পেলাম না। ... আশেপাশে অনেক বেবুন ছিল। এক সৌদি গাড়ী করে এসে খাবার দিল, বেবুনরা সব তার গাড়ী’র দিকে হামলে পড়লো। ব্যপারটা বিপদজনক, তবে অনেক সৌদি এভাবে বেবুনদেরকে খাবার দেয়। এক বেবুনকে দেখলাম আমার প্রিয় একটি সৌদি খাবার “আল ফাহাম” মজা করে খাচ্ছে। তার খাওয়ার স্টাইল একেবারে মানুষের মতো। হয়তো আমার মনোভাব বুঝতে পেরে সে খাবার নিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। বেবুনদেরকে নাকি সফট ড্রিংকসের ক্যান দিলে তা মানুষের মতোই খুলে আয়েশ করে খায়।

খাবার দিচ্ছে নাকি?

খাবারের আশায়

আমার প্রিয় “আল ফাহাম” বেবুন কতৃক ভক্ষন

সুদা’র আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে এর কেবল কার। সৌদি’র ৪ টি কেবলকারের মাঝে ৩টি আবহায়। আগে যারা সুদা’য় এসেছিল তারা কেউই কেবল কারে চড়েনি। তাই সবাই কেবলকারে চড়লাম। আমরা ৮ জন, একটি বগিতেই হয়ে গেল। যাওয়া আসার জন্য ৪০০ রিয়াল গুনতে হলো। কেবল কারটি চূড়া থেকে নীচ পর্যন্ত চলে গেছে। ৩ কিলো দীর্ঘ পথ নামতে ১০ মিনিট লাগে। মেঘের ভেতর দিয়ে নামতে নামতে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। আমরা সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলাম। মনির আর জুইয়ের কথা মনে পড়লো, হাবালা কেবল কার ভ্রমনে আমাদের সাথে ছিল। জুঁইতো কেবল কারে নামার সময় চোখ বন্ধ করে রেখেছিল।...

কেবল কার



উপর থেকে

নীচে সব কিছু সাজানো গোছানো। নীচ থেকে মেঘের কারনে উপরের চূড়া দেখা যাচ্ছিল না। আমরা জায়গাটা ঘুরে দেখলাম, প্রচুর ছবি তুললাম। এখান থেকে রেজাল আলমা গ্রাম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু চারপাশে বেড়া থাকার কারনে গ্রামে যেতে পারিনি। রেজাল আলমা গ্রামে ৬০০ বছরের পুরনো একটা বাড়ীকে মিউজিয়াম বানানো হয়েছে। ওখানে আগেরদিনের পোশাক, কৃষি যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও নানা কিছু আছে। না দেখতে পারার আফসোসটা রয়েই আছে। মিউজিয়ামটি দেখতে হলে ভয়ংকর রাস্তা দিয়ে নামতে হবে।



রেজাল আলমা গ্রাম

রেজাল আলমা মিউজিয়ামের সাইনবোর্ড

রেজাল আলমা মিউজিয়াম- ইন্টারনেট হতে



নীচ থেকে সর্পিল রাস্তাটি

পাহাড়ের পাদদেশে “শাহাব পার্ক”—এখানেও যেতে পারিনি, ভয়ংকর রাস্তা দিয়ে নামতে হতো

ঘন্টা খানেকের মতো থেকে আমরা উপরে উঠে এলাম। পাশের একটা পার্কে খাবার নিয়ে ঢুকলাম। দুটি গ্রুপকে দেখলাম বারবিকিউ করছে। ক্যাক্টাস গাছে লাল লাল ফল ধরেছে। এই ফলগুলো বাজারে অনেক দামে বিক্রী হয়। এগুলো খাওয়া হয়, স্বাদ নাকি অনেক মজাদার। কিন্তু সবাই ফল নিতে পারেনা, হাতে হুল ফোটে। তাই রাস্তায় অথবা মরুভূমিতে এমনিতে হওয়া গাছে শুধু শোভাই বর্ধণ করে।

ক্যাকটাস ফল

খাওয়া দাওয়া আর আড্ডা শেষে রওনা হলাম বাসার পথে। আবার হয়তো একদিন আসবো, রূপালী জ্যোস্নায় কোন এক পাহাড়ী কটেজে রাত কাটাবো।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×