somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরব ডায়েরি -১১ (অপারেশন ফিফা টাউন, রেড সি ও মান্দি কথন)

১২ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শম্পা ভাবী বেশ কিছুদিন ধরেই কোথাও ঘুরতে যেতে চাচ্ছিলেন। আমাদেরকে জানানোর সাথে সাথেই রাজী হয়ে গেলাম। এসব ব্যাপারে আমার আবার “না” নেই। প্রথমে রেড সি’র একটা বীচ ঠিক করা হলো, যেখানে তাবুতে রাতে থাকবো, মাছ ধরবো আর সারারাত ধরে পূর্নিমা উপভোগ করব। ১৯শে মার্চ (২০১১) চাঁদ পৃথিবীর খুব নিকটবর্তি ছিল, সে রাতটিই আমরা ঠিক করেছিলাম। পুরো প্রোগামটি কোর্ডিনেট করার কথা ছিল ইশরাতের। কিন্তু সময় গেলে দেখা গেল কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। ... কি আর করা প্রোগ্রাম বাতিল। ঘরের বারান্দায় বসেই ১৯ শে মার্চের পূর্নিমা উপভোগ করলাম।

১৯শে মার্চের (২০১১) চাঁদ

... ভাবী কিন্তু থেমে নেই। ঠিক করলেন সেমিস্টার ব্রেকে তায়েফ ঘুরে আসব। মহানবী (সাঃ) এর স্মৃতিবিজরিত অনেক চিহ্নই সেখানে আছে। কিন্তু আমাদের এখান হতে অনেক দূরত্বের করনে এবারের মতো তা বাদ দেয়া হলো। গাড়িতে আসা যাওয়া একটু কষ্টের হয়ে যাবে।

একদিন বিকেলে ভাবী ফোন করে জানালেন আমরা Fifa/Faifa Town ঘুরতে যেতে পারি। আদিল ভাইয়ের এক স্টুডেন্ট নাকি ফিফা টাউনের কথা বলেছে- চমৎকার টুরিস্ট স্পট। আদিল ভাই নেটে সার্চ দিলেন, দারুণ সব ছবি পাওয়া গেল। সিদ্ধান্ত নিলাম বৃহঃবার সকালে রওনা হব।


Faifa Town

গাড়ী ঠিক করা হলো। একসাথে ৯ জন যাওয়া যাবে। এর মাঝে শাহরিয়ার ও হাবিব ভাই কিভাবে যেন জেনে গেল আমরা উইকেন্ডে ঘুরতে যাচ্ছি। তারাও আমাদের সাথে যেতে চাইলো। রাতে আমি ও মিলন একসাথে হলাম। কি করা যায় ... মনির ও জুঁই মাহাইল থাকলেও আমরা তাদেরকে ছাড়া ফিফা টাউনে যাবার কথা ভাবতেও পারিনা। মনির থাকা মানেই আনন্দ বহুগুনে বেড়ে যাওয়া। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেল... আমি, মনির, মিলন ও আদিল ভাই’র ফ্যামিলিতে ৮জন, শাহরিয়ার ও হাবিব ভাই সহ ১০ জন। ১জনকে নেয়া যাবেনা। ... অনেক চিন্তা’র পর মোটামুটি ধারনা করলাম শাহরিয়ার ভাই নিশ্চিত ভাবেই যাবেনা। সে বিভিন্ন জনকে প্রায়ই ঘুরতে যাবার কথা বলে রাখে, হয়ত একসাথে ৩ জনকে- তারপর সুবিধাজনক অপশনটি বেছে নেয়।... তাই হলো- পরেরদিন (বুধবার) জানতে পারলাম উনি যাবেননা, আরেক জায়গায় প্রোগ্রাম আছে। শেষ দিন না বলে উনি এ কথাটি আরো আগেই বলতে পারতেন, আমাদের ঝামেলা কম হতো, টেনশনও করতে হতো না। ... অবশ্য আমরা কিন্তু খুশিই হলাম। সাথে সাথে মনিরকে ফোন করলাম- “তাড়াতাড়ি আসো”। ... আর ওরাও সন্ধা’র মধ্যে হাজির। শুরু হলো ম্যারাথন আড্ডা। রাত ১০টার দিকে আদিল ভাই এসে ওয়ার্নিং দিলেন- ১১টার মধ্যে ঘুমোতে যাও, সকাল ৬টায় গাড়ীতে উঠতে হবে। আড্ডা ভাঙ্গতে হলো – সকালের জন্য অপেক্ষা।


সৌদি আরবের দক্ষিণ পশ্চিমে “জিজান” প্রদেশ। ফিফা সেখানেই। আবহা/আভা হতে জিজান সিটি প্রায় ১৫০ কিমি., আর ফিফা জিজান হতে ৭০ কিমি. দূরে অবস্থিত। ফিফা ইয়েমেন বর্ডারের কাছের একটি শহর। পাহাড় চূড়ায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো ২০টি গ্রামে প্রায় ৭০,০০০ লোকের বসবাস। এখানকার অধিবাসীরা কোমরে বিশেষ ধরনের ড্যাগার রাখে যা জাম্বিয়া (Jambyia) নামে পরিচিত। এ ড্যাগারটি মূলত তাদের পোশাক পরিচ্ছদের অংশ। সৌদি আরবের বাদশাহদেরকেও বিভিন্ন ছবিতে এ ধরনের ড্যাগারসহ দেখা যায়। ১৯৪০ সালে ফিফা’য় বেশ বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় যা এখনো অনেকে স্মরণ করে থাকে।

Jambyia

ফিফা পাহাড় চূড়া’র শহর। তবে আবহা’র সাথে পার্থক্য হলো যে, ফিফা’র পাহাড় চূড়া’য় সমতল ভূমি কম। বিভিন্ন ঢালে বিক্ষিপ্তভাবে গ্রামগুলো গড়ে উঠেছে। চারদিক গাছ গাছালিতে ভরা, এপ্রিলে ফুলে ফুলে ভরে যায়। বৃষ্টি এলে পাহাড়গুলো ঝর্ণা হয়ে উঠে।


আমরা সকাল ৬.১৫ তে রওনা দিলাম। হাবিব ভাইয়ের আসার কথা থাকলেও আসেননি। জিজান সমুদ্র সমতলে অবস্থিত। আবহা’র পাহাড় বেয়ে যখন নামছিলাম- গা ছমছম করে উঠে। তখনও বুঝিনি এর চেয়েও বিপদজনক জায়গায় আমরা যাচ্ছি।

পাহাড়ের ঢালে তৈরি রাস্তা

৭.৩০ এ মোসাল্লেসে থেমে নাস্তা করে নিলাম। ব্রেড, পাস্তা, চিকেন ফ্রাংক, আপেল, জুস ছিল নাস্তার আয়োজন। সবাই মিলেই ব্যবস্থা করেছিলাম। তবে যেখানে থেমেছিলাম সেখানকার চা ছিল অসাধারণ।

জিজান যেতে যেতে পথের ধারে অনেক আম বাগান আর কলা বাগান চোখে পড়ল। রাস্তার ধারে কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছিল। ...আহা! কাঁচা আমের মুসুর ডাল কতই না মজার !!! ফেরার পথে সবাই কাঁচা আম কিনব ভেবেছিলাম, তা আর হয়ে উঠেনি।

... ড্রাইভার ফিফা চেনেনা। আমরাও জানিনা কোনদিকে যাচ্ছি। ভরসা শুধুমাত্র গুগুল ম্যাপ আর রাস্তার পাশের ইন্ডিকেটর বোর্ড। কাউকে জিঙ্গেস করেও লাভ নেই, আরবী ছাড়া কিছু বুঝে না।আদিল ভাই গুগুল থেকে ম্যাপ প্রিন্ট করে এনেছেন, আর আমি মাঝে মাঝে আমার মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটে গুগুল ম্যাপ দেখছি।

... যাচ্ছি তো যাচ্ছিই, রাস্তাতো শেষ হয়না। আমি, মিলন আর মনির গাড়ীর পেছনে বসেছিলাম। এমন একটা অবস্থা পা ঠিকমতো সোজা করা যায় না। পা ব্যথা হয়ে গেল ... অবশেষে ১১.০০ এর দিকে Thwayei Mountain দেখা গেল। পাহাড়ের গায়ে বাড়িগুলো দেখতে ভালোই লাগছিল। প্রায় ৪০০০ ফিট উচু Thwayei Mountain। আমদের গাড়ী উঠতে থাকলো। কিছুদূর যাবার পর আমারা ভয় পেতে শুরূ করলাম।


পাহাড়ের গায়ে চিকন রাস্তা, কোনমতে ২ টি গাড়ী আসা যাওয়া করতে পারে। রাস্তাটি প্রায় ৪৫ ডিগ্রি খাড়া। মাঝে মাঝেই বাক নিয়েছে। ২বার গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল, ড্রাইভার তাড়াতাড়ি সামলে নিল। কিছু হলেই সোজা নীচে গড়িয়ে পড়তে হবে। বাক নিতেই দেখা যায় সামনে হতে গাড়ী আসছে... আত্মা বের হয়ে যাবার মতো অবস্থা।




ভেবেছিলাম অনেক ছবি তুলব, এখন ফেরত যেতে পারলেই বাঁচি। আধাঘন্টা চলার পরেও চূড়ায় উঠতে পারলাম না, এদিকে গাড়ীর উপরে উঠতেও সমস্যা হচ্ছিল। টায়ার পোড়া গন্ধ বের হলো, আমরা কেউই আর সামনে যেতে চাইলাম না। আল্লাহ আল্লাহ করে নীচে নেমে আসলাম। ড্রাইভার পরে স্বীকার করেছে যে সেও প্রচন্ড ভয় পেয়েছিল। অথচ লোকাল লোকগুলো কত সহজেই গাড়ী চালিয়ে উপরে উঠছে ... (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:০০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×