হুমায়ূন আহমেদ প্রায় সকলের কাছেই একজন প্রিয় লেখক ছিলেন । ১৯৮০ সালে তার লেখা "নন্দিত নরকে" বইটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল । এমনকি গ্রামের ছেলে মেয়েদের হাতে হাতে বইটি দেখা গিয়েছে । মেট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেওয়ার পর রেজাল্টের অপেক্ষার অবসরে তরুন - তরুণীদের ভিতর গল্পের বই পড়া একটি প্রচলিত সংস্কৃতি ছিল । এছারা পাড়া মল্লার যুবক - যুবতীরা গল্পের বই আদান - প্রদান এর মাধ্যমে পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতো । ৯০'র দশকে হুমায়ূন আহমেদ যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তখন অনেক বড় বড় লেখকরা তাদের ড্রয়িং রুমে বসে তীব্র সমালোচনা করেছে । সেই সময়ের বাম রাজনীতির ধামা দোলে অনেকেই এই লেখককে অবজ্ঞা করেছেন ও করতে উৎসাহ যুগিয়েছেন কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ এর জনপ্রিয়াতাকে কেউ থামাতে পারেনি । এক চেটিয়া জনপ্রিয়তার করনে অনেক প্রতিষ্ঠিত লেকককে বলতে শুনা গিয়েছে সস্তা লেখা , ভালগার ইত্যাদি । কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠিত লেখকরা একটা বিষয় আমলে নেননি যে সাধারন মানুষ যাকে গ্রহন করে সে অবশ্যই অসাধারন । সাধারন মানুষের সম্মিলিত জ্ঞানকে যারা অবজ্ঞা করে তাদের জ্ঞানের পরিধি নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে । হুমায়ূন আহমেদ এর সৃষ্টিকে মানুষ গ্রহন করেছে হৃদয় দিয়ে , আবেগ দিয়ে । মানুষের হৃদয়কে জয় করা , মানুষের মধ্যে আবেগ তৈরি করা কোন সাধারন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় , সম্ভব কোন অসাধারন মানুষের পক্ষেই । হুমায়ূন আহমেদ এর টেলিফিল্ম , উপন্যাস মানুষ এর চিন্তা মনন কে নাড়া দিয়েছে । মানুষ একই সাথে হেসেছে , কেদেছে । আনন্দ বেদনায় আলোড়িত হয়েছে । এই কাজ গুলো কোন সাধারন মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয় । মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা বই , নাটক , টেলিফিল্ম নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আগ্রহী করেছে ।
বাংলা ভাষার আঞ্চলিক টানকে উনি সম্মান করেছেন , সংগ্রহ করেছেন । আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে সংরক্ষন করেছেন । গনমানুষ কথাটি সাধারনত রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রচলিত কিন্তু রাজনীতির বাইরের মানুষ যে গন মানুষ হতে পারে হুমায়ূন আহমেদ তা দেখিয়ে দিয়েছেন । সর্বপরি হুমায়ূন আহমেদ এর লেখার ধরন বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন ধারা তৈরি করেছে , লেখার এই ধারা মানুষ খুজে বেড়াবে অনেকদিন ।
হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর এই দিনে তাকে বার বার স্মরণ হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের নতুন ধারার প্রবক্তা , নতুন ভাষার প্রবক্তা, নতুন শব্দের ও আবেগের প্রবক্তা হুমায়ুন আহমেদ বেচে থাকবে ততদিন যতদিন আর একজন হুমায়ুন আহমেদ তৈরি না হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৪১