somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি ও পাঠক || সংক্ষেপে ছন্দ সম্পর্কে সামান্য ধারণা ও ছন্দ-বিশ্লেষণ

২১ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবিদের কাজ কবিরা করেন
কবিতা লেখেন তাই
ভেতরে হয়ত মানিক রতন
কিবা ধুলোবালিছাই

জহু্রি চেনেন জহর, তেমনি
সোনার পাঠক হলে
ধুলোবালিছাই ছড়ানো পথেও
মাটি ফুঁড়ে সোনা ফলে।

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

***

স্বরচিত কবিতাটির ছন্দ-বিশ্লেষণ

শুরুতেই সংক্ষেপে ছন্দের প্রকারভেদ জেনে নিই। ছন্দ মূলত ৩ প্রকার। এই ৩ প্রকার ছন্দের নাম ও মাত্রাসংখ্যা নিম্নরূপ :

১। স্বরবৃত্ত ছন্দ। এ ছন্দটি ছড়ায় খুব বেশি ব্যবহৃত হয় বলে এটাকে ছড়ার ছন্দও বলা হয়। এতে সবসময় ৪ মাত্রার মূল পর্ব থাকে। বদ্ধস্বর ও মুক্তস্বর উভয়েই ১ মাত্রা হিসাবে গোনা হয়।

স্বর বা অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে তা বদ্ধস্বর, যেমন বন (বন্‌), মান (মান্‌), এবং অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে তা মুক্তস্বর, যেমন বাধা= ব্+আ=বা, ধ্+আ=ধা; পড়ো=প্+অ=প, ড়্+ও=ড়ো

স্বর বা অক্ষর হলো সহজ ভাষায় ইংরেজির সিলেবল (Syllable), যেমন, Yes-ter-day. এখানে তিনটা সিলেবল আছে, বাংলায় তিনটা স্বর বা অক্ষর বলা হয়।

২। মাত্রাবৃত্ত ছন্দ। মূল পর্ব ৪, ৫, ৬ বা ৭ মাত্রার হয়। এই ছন্দে বদ্ধস্বর ২ মাত্রা এবং মুক্তস্বর ১ মাত্রা হিসাবে গণনা করা হয়। অর্থাৎ, অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা, আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে, এমনকি ‘য়’ থাকলেও, ২ মাত্রা ধরা হয়।

৩। অক্ষরবৃত্ত ছন্দ। মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়। মুক্তস্বর, অর্থাৎ, অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা ধরা হয়। অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জন ধ্বনি আছে, এমন অক্ষর শব্দের শেষে থাকলে ২ মাত্রা, আর শব্দের শুরুতে বা মাঝে থাকলে ১ মাত্রা গোনা হয়।

সারাংশ

ক। স্বরবৃত্ত=মূল পর্ব ৪ মাত্রা।
খ। মাত্রাবৃত্ত=মূল পর্ব ৪, ৫, ৬ বা ৭ মাত্রা।
গ। অক্ষরবৃত্ত=মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রা।

***

আমার উপরের কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। মূল পর্ব ৬ মাত্রার। ৩টা মূল পর্ব আছে, ২ মাত্রার একটা অতি-পর্ব আছে।

কবিদের কাজ
কবিরা করেন
কবিতা লেখেন
তাই

ক-বি-দের কাজ
ক-বি-রা ক-রেন
ক-বি-তা লে-খেন
তা-ই

ক-মুক্তস্বর-১ মাত্রা
বি-মুক্তস্বর-১ মাত্রা
দের-বদ্ধস্বর-২ মাত্রা
কাজ-বদ্ধস্বর-২ মাত্রা

রেন/খেন/লেন-বদ্ধস্বর-২ মাত্রা

উপরের কবিতায় ৬-৬-৬-২ মাত্রা করে আছে প্রতি চরণে।

ছন্দ সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে পড়তে পারেন : বাংলা কবিতার ছন্দ - প্রাথমিক ধারণা

বিশেষ নোট :

ছন্দ বলতে অনেকেই আগের লাইনের শেষ শব্দের সাথে নীচের লাইনের শেষ শব্দের মিলকে বুঝে থাকেন। এটা ছন্দের মূল বৈশিষ্ট্য না; এটাকে অন্ত্যমিল বা অন্তানুপ্রাস বলা হয়। কবিতামাত্রেই ছন্দ থাকবে, হোক তা পদ্য কবিতা, কিংবা গদ্য কবিতা।

স্বাধীনতা তুমি
রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল, ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ।

এখানে কোনো অন্ত্যমিল নাই। কিন্তু এখানে অসাধারণ একটা ছন্দ রয়েছে, যেখানে প্রতিটি পর্বে রয়েছে ৬টি করে মাত্রা। তবে, এ ছন্দ বোঝার জন্য ছন্দ পড়া আবশ্যিক নয়, কিন্তু কবিতা পড়া ও কবিতা বোঝা আবশ্যিক। আহমেদ জী এস ভাইয়ের একটু প্রশংসা করে নিই। তিনি ছন্দ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখেন না বলে কোনো এক কবিতা পোস্টে তার কবিতাটির আমি ছন্দ-বিশ্লেষণ করার পর জানিয়েছিলেন। অথচ, তার সবগুলো কবিতাই নিখুঁত ও নিপুণ ছন্দে রচিত, সর্বাধুনিক গঠনশৈলীতে ঋদ্ধ। আমিও যে ছন্দ সম্পর্কে কবিতা লেখার শুরু থেকেই জ্ঞান রাখতাম, তা না। তবে, আমি প্রচুর কবিতা পড়তাম। তা থেকেই আমার ছন্দ সম্পর্কে ধারণা হয়। অনেকে একটা কথা বলে থাকেন, সৃজনশীল লেখায় কোনো বাঁধাধরা নিয়ম থাকা ঠিক নয়। এটা খুবই অপ্রয়োজনীয় এবং ফালতু একটা কথা। আপনি যাই লিখতে যান না কেন, নিজের অজান্তেই আপনি একটা ছন্দের নিয়মের ভেতর ঢুকে যাবেন। আপনি যদি জীবনে কোনো কবিতা না পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি জানবেনই না আপনি কবিতা লিখলেন, নাকি সবিতা আঁকলেন, যেমন, জীবনে কোনোদিন কাক না দেখে থাকলে বা কাকের বর্ণনা না পড়ে থাকলে কাক চেনা বা কাক আঁকা সম্ভব না। আর যদি কবিতা পড়েই থাকেন, তাহলে যা লিখলেন, ঠিক আগে পড়া কবিতাগুলোর ছন্দেই কবিতাটি লিখেছেন, যাতে কিছু সংবিধিবদ্ধ নিয়মও রয়েছে। আপনার ছন্দ সম্পর্কে পুঁথিগত জ্ঞান না থাকলেও চলবে, যদি আপনি বোঝেন প্রখ্যাত ও প্রতিষ্ঠিত কবিদের কবিতাগুলোর গঠন বা বুনন কীরকম। আপনি ঐ বুনন ভালোমতো বুঝে থাকলে আপনার লিখিত কবিতা বা ছড়াগুলোর ছন্দও সুন্দর এবং নিখুঁত হবে। তবে, ছন্দ সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকলে আপনি খুব সহজেই নিজের কবিতার ছন্দ-দুর্বলতাগুলো বুঝতে পারবেন, তা কাটিয়েও উঠতে পারবেন। নিয়ম জানা থাকলেই নিয়ম ভাঙা যায়, নিয়ম না জানা থাকলে তা ভাঙবার প্রশ্নই অবান্তর।

অর্থাৎ, আমার ছন্দ জানার কোনো দরকার নাই, বা আমি কোনো বাঁধাধরা নিয়মকানুন মেনে কবিতা লিখি না - এটা হলো চরম বেহুদা একটা কথা। আপনি ছন্দ সম্পর্কে কোনো পড়াশুনা না করে থাকলেও নিশ্চয়ই কোনো ছড়া কিংবা কবিতা পড়েছেন, আর তা থেকেই ছন্দের উপর একটা ধারণা আপনার মগজে ঢুকে গেছে, এখন কবিতা বা ছড়া লিখতে গেলেই আপনি ঐ কবিতা বা ছড়ার অনুকরণে লিখে থাকেন। একটা সুন্দর ও সাবলীল গাঁথুনির কবিতা বা ছড়া লিখতে হলে ছড়ার উপর ভালো জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়, নইলে আপনি অনেক সময়ই বুঝতে পারবেন না আপনার কবিতা বা ছড়াটির দুর্বলতা কোথায়, এবং কীজন্য।

ঘুরে আসতে পারেন নীচের লিংকগুলোও :

আমার আগে লেখা কিছু পোস্টের লিংক

১। বাংলা কবিতার ছন্দ - প্রাথমিক ধারণা

২। নবীন কবিদের কবিতা : ‘কঠিন’ শব্দ ও ‘কঠিন’ কবিতা; ‘কাঁচা’ হাত ও ‘কাঁচা’ কবিতা বনাম ‘পরিণত’ হাত ও ‘পরিণত’ কবিতা

৩। নবীন কবিদের কঠিন কবিতা

৪। কবিতার প্যাটার্ন

৫। সনেটের অন্ত্যমিল ও পঙ্‌ক্তি-বৈচিত্র্য : প্রথম পর্ব

৬। সনেটের অন্ত্যমিল ও পঙ্‌ক্তি-বৈচিত্র্য : দ্বিতীয় পর্ব

৭। শব্দকবিতা - শব্দেই দৃশ্যানুভূতি

৮। আমার কবিতা ভাবনা

৯। আপনাদের জন্য কিছু উপকারী পোস্ট

ছন্দ সম্পর্কে আমার গুরু বলেন : কবিতা লেখার জন্য ছন্দ জানার বা শেখার মোটেও দরকার নাই, যেটা দরকার তা হলো কবিতা কী তা জানা ও বোঝা।

জয় গুরু। পোস্টটি উৎসর্গ করলাম আমার গুরুকেই, যিনি বহুদিন ধরে এখানে নিদ্রাযাপন করছেন।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৮
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×