স্কুল জীবনে নীহাররঞ্জন গুপ্ত'র বই'র প্রতি আমার একটা বিশেষ আকর্ষণ ছিল। হয়তো বয়সের কারণেই হবে। এস এস সি পর্যন্ত নীহাররঞ্জন গুপ্ত, ঠাকুরমার ঝুলি, লাল পাগড়ী পরা ছোটখাট চাচা চৌধুরী, ভিনগ্রহের এলিয়েন পালোয়ান-- সাবু। বিল্লু, পিংকী, চান্নি চাচী, রমন ও শ্রীমতিজী নামের কিছু চরিত্রের ভেতর ডুবে ছিলাম।
কলেজে ভর্তি হবার পর নটরডেমের লাইব্রেরি থেকে একদিন তুললাম শরৎচন্দ্রের "দত্তা"। দত্তা পড়ার পর শরৎ বাবুর নেশা ধরে গেল ভেতরে। তারপর একে একে শেষ করলাম, বড়দিদি, পরিণীতা, দেবদাস, চরিত্রহীন, গৃহদাহ, পথের দাবী, শ্রীকান্ত, পল্লীসমাজ, দেনা পাওনা, শেষ প্রশ্ন, বিপ্রদাস, শেষের পরিচয়সহ সব কটি উপন্যাস। আমার মস্তিষ্কে তখন শুধু শরৎচন্দ্র ঘুরপাক খাচ্ছেন। 'রামের সুমতি' পড়ে কেঁদে কেটে একাকার অবস্থা। শরৎবাবু বুকের ভেতর এক ধরণের কান্নাভেজা হাহাকার তৈরী করে দিলেন আমার। সেই হাহাকার আমাকে টেনে নিয়ে গেল রবীন্দ্রনাথ, তারাশঙ্কর, বঙ্কিমসহ অন্যান্যদের কাছে।
ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হবার পর প্রথম যে বইটি পড়লাম, তার নাম "দেবী" পড়ার পর থ হয়ে বসে রইলাম। মাথাটা ভন ভন করে ঘুরতে লাগলো। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী এক লেখার স্বাদ পেলাম। তারপর পড়লাম, নিশীথিনী, নিষাদ, অন্যভুবন, বৃহন্নলা, অনীশ, আমি এবং আমরা, তন্দ্রাবিলাস, ভয়, বিপদ ইত্যাদি বইগুলো। সন্ধান পেলাম, মিসির আলী নামক এক ভিন্ন ধর্মী চরিত্রের। ভেবে অবাক হলাম, মনোবিজ্ঞানকে কি দারুণভাবে সাহিত্যে উপস্থাপন করেছেন প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ!
এর ভেতর ফাঁকে ফাঁকে পড়ে ফেললাম হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা- নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, অন্যদিন, মন্দ্রসপ্তক, দূরে কোথাও, বহুব্রীহি, আশাবরি, নক্ষত্রের রাত, আমার ছেলেবেলা, হোটেল গ্রেভার ইন, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, ফেরা, বাসর, গৌরিপুর জংশন, দারুচিনি দ্বীপ, আমার আছে জল, কোথাও কেউ নেই, আকাশ ভরা মেঘ, মহাপুরুষ, আগুনের পরশমণি, অপেক্ষা, এপিটাফ, আয়নাঘর, একজন মায়াবতী, এই মেঘ রৌদ্র ছায়া, চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক, ছায়াবিথী, তেঁতুল বনে জোছনা, তিথীর নীল তোয়ালে, তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে, সেদিন চৈত্রমাস, আমাদের শাদা বাড়িসহ অন্যান্য বইগুলো।
"হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম" পড়ার পর "হিমু" নামক এক অদ্ভুত চরিত্রের সাথে পরিচয় ঘটলো। এটি পড়ার পর হিমুর প্রেমে পড়ে গেলাম।.....মিসির আলী পড়ার সময় মনে হতো যেন, আমিই মিসির আলী। আর হিমু পড়ার সময় মনে হতো- হিমু।
হিমু বিষয়ক দ্বিতীয় যে বইটি পড়লাম, তার নাম- পারাপর। তারপর পড়লাম, দরজার ওপাশে, হিমু, হিমুর রুপালী রাত্রি, ময়ূরাক্ষী, তোমাদের এই নগরে, সে আসে ধীরে, এবং হিমু, একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁঝিঁ পোকাসহ অন্যান্য বইগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী। তারপর একই বিভাগের জনপ্রিয় শিক্ষক প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ- এর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
স্যার জানি না আজ আপনি কোথায়, কিভাবে আছেন। আমরা আপনার ভক্তরা আপনাকে অনেক অনেক মিস করছি, করবো অনন্তকাল...
যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮