somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কন্যাকুমারী দর্শন (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১২)

১৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোভালাম এর এত সুন্দর সমুদ্র সৈকত দেখে মন খারাপ হয়ে গেল, মাত্র আধঘন্টা সময় দেয়া হল এখানে। অথচ আমার মন চাচ্ছিল, এখানে দুটো দিন থেকে যাই। এরপর কেরালা ট্যুর দিলে, আলিপ্পে গিয়ে হাউসবোটে না থেকে কোভালাম এ দু’দিন থাকবো এবং কোভালাম হতে যে হাউজবোট ট্রিপ হয়, তার ব্যাকওয়াটার ভিউ নাকি আরও অনেক বেশী মনোমুগ্ধকর; আমার কথা নয়, আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড কাম ফ্রেন্ড মিঃ বিনয় পি. জোশ এর কথা। যাই হোক কোভালাম সৈকত থেকে বের হয়ে আমাদের গাড়ী ছুটল কন্যাকুমারী’র দিকে। হাতে সময় মাত্র তিন ঘন্টা।



পথিমধ্যে একটি খুবই জনপ্রিয় এবং ব্যস্ত বিশাল রেস্টুরেন্ট এ গাড়ী থামানো হল, আমাদের ঢাকা’র “স্টার কাবাব” এর মত। কিন্তু খাবারের স্বাদ এর সাথে দামের আশ্চর্যরকম অমিল। কলাপাতা’য় বাইরে নরমাল ভেজ থালি মাত্র ষাট রুপী!!! প্রায় আট-দশ পদের ব্যাঞ্জন এর সাথে যত খুশী ভাত, রুটি আর পাপড়। আরে ভেতরের দিকে এসি রুমে স্পেশাল থালি, একশত রুপী!!! খাবারও কিছুটা স্পেশাল। কেরালার প্রায় চল্লিশ ডিগ্রী’র উপর তাপমাত্রা’র কারনে এসি রুমের স্পেশাল থালি বেছে নিলাম আমরা। আমার সঙ্গী সাথীরা যথারীতি তেমন খেতে পারলো না, কেরালা খাবারের স্বতন্ত্র স্বাদের কারনে। আমি কিন্তু চেটেপুটে খেলাম মিঃ বিনয় এর সাথে। এখান হতে খেয়ে বিনয় পথিমধ্য হতে কন্যাকুমারীর জন্য স্পেশাল পারমিট নিয়ে নিল। ওর গাড়ীটি ছিল কেরালা’র; অল ইন্ডিয়া পারমিট নেয়া নয়। কন্যাকুমারী পড়েছে তামিলনাড়ু প্রদেশে, কেরালার বাইরে।

যাই হোক, আমরা বেলা আড়াইটার কিছু পরে পৌঁছে গেলাম কন্যাকুমারী। হোটেল “Hotel Sea View - Beach Hotel at Kanyakumari”তে চেকইন করে ব্যাগপত্তর রেখে দ্রুত বের হয়ে এলাম, হোটেল হতে পায়ে হাটা দূরত্বের ফেরী’র জেটিতে এসে হাজির হলাম। বিশাল লম্বা লাইন, সরু গলির মত টানেল ধরে। বিশ রুপী জনপ্রতি টিকেট কেটে ফেরীতে উঠে বসলাম, তার আগে সেখানে স্থুপ করে রাখা লাইফ জ্যাকেট হতে নিজের সাইজমত বেছে নিয়ে লাইফ জ্যাকেট পড়ে নিলাম। মাত্র ৫০-৬০ মিটার দূরের বিবেকানন্দ রক এবং কৃষ্ণ মন্দির যাওয়ার জন্য এত আয়োজন। বিশাল বিশাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পাথুরে দেয়ালে। এই তীরবর্তী জায়গায়ও দেখলাম বিশাল সব ঢেউ, ঢেউয়ের তালে আমাদের ফেরী দুলছিল খেলনার মত। যাই হোক, সেখানে পৌঁছে আবার জুতো খুলে কাউন্টারে রাখতে হল। এরপর ঘুরে বেড়ালাম চারিধারে।











এখান হতে দেখলাম “ত্রিবেণী সঙ্গম”; বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর আর আরব সাগর এর ভিন্ন রঙের তিনটি জলরাশির মিলন স্থল। যদিও অনেক দূরে, কিন্তু স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল। শীতল নোনা হাওয়ার মাঝে রৌদ্রের তীব্রতা অন্যরকম এক মিশ্র অনুভূতি দিচ্ছিল।











ইচ্ছে ছিল অনেকটা সময় এখানে থাকার, কিন্তু সমুদ্র উত্তাল থাকায়, শেষ ফেরী বিকেল সাড়ে পাঁচটা’র স্থলে বিকেল চারটা’র দিকেই ফিরিয়ে নিয়ে আসলো সকল ভ্রমণার্থীদের।













এখান হতে হোটেলে ফিরে গিয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে শেষ বিকেলে আমরা চলে গেলাম প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের কন্যাকুমারী সমুদ্র সৈকত এলাকায়। পাথুরে সৈকতে গোধূলি লগণে তখন পর্যটকের দলের ভীড়। আমরা এখানে কিছু ভাজা পোড়া আর চা পাণ করে পাথরের উপর বসে বসে সাগরের নোনাজলের ছটা গায়ে মেখে উপভোগ করলাম রক্তিম সূর্যটার আরব সাগরের নীল জলে হারিয়ে যাওয়া। সন্ধ্যের পর ঘুরে বেড়ালাম কন্যাকুমারীর লোকাল মার্কেট এলাকায়। দক্ষিণ ভারতের অন্যতম একটা বিষয় হল প্রতিটি জায়গায় জায়গায় বেলী ফুলের মালা বিক্রি হয়, এবং এখানকার মেয়েদের অন্যতম সজ্জা অনুষঙ্গ হল চুলের খোঁপা বা বেণীতে সেই মালা গুঁজে দেয়া। তা তামিলনাড়ু, কেরালা বা কর্ণাটক; যেখানেই হোক না কেন।







রাতের বেলাও দেখলাম সারি সারি দোকান সাজানো। রয়েছে নানান সুভ্যেনিয়র এর দোকান। এখানে ঘোরাঘুরি শেষে রাত আটটা নাগাদ হোটেলে চলে এলাম কিছু শুকনো খাবার আর ফল কিনে, এগুলোই আজ রাতের আহার।



















কিন্তু রাত দশটা নাগাদ আমরা আবার বের হয়ে এলাম, অনেকটা পথ ফাঁকা রাস্তায় হেঁটে একজায়গায় দেখি অনেকগুলো টঙ্গের দোকান টাইপ দোকানে স্থানীয় মহিলারা কাঁচা মাছ সাজিয়ে বসে আছে, পাশে উনুন জ্বলছে আর তার উপর ফুটছে গরম তেল। মাছ পছন্দ করে দিলে তাৎক্ষণিক কেটেকুটে দক্ষিণের বিখ্যাত মসলা মাখিয়ে ডিপ ফ্রাই করে দিচ্ছে। আমরা দরদাম করে পঞ্চাশ রুপী পার পিস করে তিনটে মাছ তিনজনে পছন্দ করে ভাঁজতে দিলাম। ও হ্যাঁ, আমাদের চতুর্থ সাথী, মিতা রয়, সে আসেনি আমাদের এই রাত্রি’র খাদ্যাভিযানে। যাই হোক চমৎকার সেই সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই ভক্ষণ শেষে আমরা ফিরে এলাম হোটেলে। দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে হবে; কারণ ভোর চারটায় উঠতে হবে। পাঁচটার আগে এখান হতে রওনা দিয়ে চলে যেতে হবে আলিপ্পে, হাউজবোট ধরার জন্য। আমাদের শিডিউল বেলা এগারোটা হতে। এই ছয় ঘন্টায় প্রায় আড়াই’শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে; আগের দিনের মতই...









































আগের পর্বগুলোঃ
যাত্রা শুরুর গল্প (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০১)
ট্রানজিট পয়েন্ট কলকাতা... অন্যরকম আতিথিয়তার অভিজ্ঞতা (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০২)
অবশেষে কোচিন - তৃতীয় রাতে যাত্রা শুরুর স্থানে (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৩)
ডেস্টিনেশন মুন্নার (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৪)
মুন্নার টি মিউজিয়াম (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৫)
মুন্নার ভ্রমণ - মাতুপত্তি ড্যাম এবং ব্লোসম পার্ক (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৬)
ইকো পয়েন্ট এবং টপ ষ্টেশন অফ মুন্নার (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৭)
ট্রিপ টু কুলুক্কুমালাই... (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৮)
পেরিয়ার লেক - ওয়াইল্ড লাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি (থিক্কাদি - কেরালা) (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৯)
শিকারা রাইড এন্ড সানসেট এট ব্যাকওয়াটার (কুমারাকোম - কেরালা) (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১০)
কোভালাম সী বিচ (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১১)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১:০১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×