somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিকারা রাইড এন্ড সানসেট এট ব্যাকওয়াটার (কুমারাকোম - কেরালা) (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ১০)

২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পেরিয়ার লেক ওয়াইল্ড লাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি ভ্রমণ শেষে হোটেলে ফিরতে ফিরতে আমাদের বেলা দশটা বেজে গিয়েছিল। এমনিতে সকালের নাস্তার আয়োজন বেলা দশটা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্তু আমরা আগে থেকে বলে গিয়েছিলাম হোটেলের রিসিপশন এ, ফলে বেলা সাড়ে দশটার পর হোটেলে ফিরে নাস্তা সেরে নিয়ে ব্যাগপত্তর সমেত গাড়ীতে চড়ে বসতে বেলা এগারোটা গড়িয়ে গেল। এরপর আমাদের নিয়ে বিপিনের টয়োটা ইনোভা ছুটে চলল কেরালা প্রদেশের শহর থিক্কাদি থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরত্বের আরেক শহর কুমারাকোম এর উদ্দেশ্যে। আজকের শিডিউলে রয়েছে বিকেলের মধ্যে কুমারাকোম পৌঁছে কেরালার বিখ্যাত ব্যাকওয়াটার এ শিকারা করে সূর্যাস্ত উপভোগ করা। তাই আমাদের গাড়ী ছুটতে লাগলো যতদ্রুত সম্ভব।









কিন্তু সমস্যা হল, কেরালার প্রদেশের এক এক শহরে, রয়েছে একেকটি পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিটিরই রয়েছে আলাদা জনপ্রিয়তা ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে। এই একেকটি স্থান হতে অন্য স্থানে যেতে পাড়ি দিতে হয়ে একশত থেকে আড়াইশত কিলোমিটার পথ। কিন্তু সমস্যা হল অন্য জায়গায়, এই দূরত্বের মাঝে পড়বে প্রায় ১০-৩০টি পর্যন্ত ছোট বড় শহুরে জনপদ, যেখানে আপনাকে পড়তে হবে ট্রাফিক জ্যামে। ফলে আমাদের আজকের ১৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে প্রায় ঘন্টা পাঁচেক সময় লেগে গেল। এর সাথে পথিমধ্যে আমরা সেরে নিলাম আমাদের দুপুরের খাবার। সবমিলিয়ে কুমারাকোম পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বিকেল চারটা পেড়িয়ে গেল। সেখানে পৌঁছে আমরা আর হোটেলে চেক ইন করলাম না, সরাসরি চলে এলাম কুমারাকোম বোট জেটি এলাকায়। এখানে এসে দরদাম করে ১,৫০০ রুপী ভাড়ায় একটি বারো সিটারের শিকারা (বিশেষ ধরনের ভারতীয় নৌকা) ঠিক করা হল, চুক্তি হল সূর্যাস্ত পর্যন্ত বোট চলবে, এরপর ফিরে আসবে জেটিতে; এখানেই অপেক্ষা করবে আমাদের গাড়ী। বিপিন নির্ধারিতে সুরক্ষিত পার্কিং এরিয়ার গাড়ী পার্ক করে আমাদের সঙ্গী হল এই যাত্রায়। সরু খালের ন্যায় চ্যানেল ধরে এগিয়ে চলল আমাদের শিকারা। কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এর বুক চিরে মৃদুলয়ে এগিয়ে চললাম আমরা।











পথে এক গ্রামে থামানো হল, উদ্দেশ্য কেরালার ডাব খাওয়া। আজ তিন-চার’দিন হল কেরালা এসেছি আমরা, এখনো কেরালা ডাবের পানি পান করার সৌভাগ্য হয় নাই। দুইপাশে জলাধারের মাঝে কয়েকখানা কুঁড়েঘর নিয়ে ছোট্ট একটি পাড়া, সেখানে নৌকা থামানো হলে আমাদের নৌকার মাঝি আর বিপিন কেরালার স্থানীয় ভাষায় তাদের সাথে কথা বলে ডাবের অর্ডার করে দিল। আমাদের সামনেই বছরে এক যুবক তরতর করে গাছে উঠে গেল ডাব পাড়ার জন্য। বিশালাকার সেই ডাবের পানি পুরোটা আমার পক্ষে শেষ করা সম্ভব হয় নাই। :(













খাল হতে বের হয়ে একসময় আমাদের নৌকা ব্যাকওয়াটার এর লেক, ভেম্বানাদ (Vembanad Lake) এ প্রবেশ করল। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে লালবর্ণ ধারণ তার ক্লান্তি জানান দিচ্ছে, টুপ করে ডুব দিবে রাতের আঁধার সাগরে... আমরা সবাই গা এলিয়ে উপভোগ করছিলাম প্রতিটি মুহুর্ত, সাথে প্রত্যেকের ক্যামেরার সাটার চলছিল অবিরাম। একসময় দিগন্ত রেখায় সূর্য হারিয়ে গেলে আমাদের নৌকা ঘুরিয়ে যাত্রারম্ভ স্থানে ফিরে এলাম। এরপর জেটি হতে প্রায় পাঁচ/ছয় কিলোমিটার দূরে “রেনাই” গ্রুপের চেইন হোটেল রেনাই গ্রীনফিল্ড, কুমারাকোম এর উদ্দেশ্যে আমরা ছুটে চললাম। পথে রাতের খাবার কিনে নিয়ে চলে এলাম চমৎকার এই হোটেলে। আমাদের এবারের প্রায় ষোল দিনের ট্যুরের সবচেয়ে সুন্দর এবং ব্যয়বহুল হোটেলে থাকা হল সবচেয়ে কম সময়। রাত দশটায় চেকইন করে ভোররাত পৌনে পাঁচটার দিকে চেকআউট করে রওনা হতে হয়েছিল আলিপ্পের উদ্দেশ্যে। সেই গল্প আগামী পর্বে হবে।















হোটেলে চেকইন করা মানে, কিছু ফরমালিটিস মেইন্টেইন করতে হয়। প্রতিটি হোটেলে এই গুরুদায়িত্ব ছিল আমার, সকলের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে হোটেলের রিসিপশনে জমা দিয়ে অপেক্ষা করা, ফেরত নেয়া, ফর্ম ফিলআপ করা ইত্যাদি কাজ শেষ করে রুমে গেলাম যখন, তখন ঘড়িতে রাত দশটা। এরপর ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলের লনে নেমে এলাম আমরা। দারুণ হোটেলটিতে দিনের বেলা চেকইন কেন করা হল না, এই নিয়ে একটু হাপিত্যেশ করা হল কিছুক্ষণ। এরপর আর কি? নিজেদের রুমে গিয়ে ঘুমানোর আয়োজন, সেই ভোর চারটায় উঠতে হবে যে... আমি সবাইকে পরামর্শ দিলাম, ব্যাগেজ হতে খুব প্রয়োজন না হলে বেশী জামাকাপড় বের না করতে; ফলে ভোরবেলা ব্যাগ গোছানোর কোন ঝামেলা থাকবে না। আমি ভোররাত সাড়ে চারটা’র এলার্ম দিয়ে ঘুমাতে গেলাম যখন তখন ঘড়িতে রাত বারোটা। তখন মনে হল, সারাদিনের তথ্য সব নোট নেয়া হয় নাই। মোবাইলের নোটপ্যাড ওপেন করে সব লিখে ঘুমাতে গেলাম সাড়ে বারোটারও পর। চার ঘন্টায় যতদূর পারি, ঘুমিয়ে নিতে হবে। অবশ্য সমস্যা নেই, আগামীকাল আমাদের শিডিউলে রয়েছে কেরালার বিখ্যাত ‘হাউজবোট’ করে ব্যাকওয়াটার ঘুরে বেড়ানো। ফলে শারীরিক ধকলের পরিমান একেবারেই কম। নিজেকে এই সান্ত্বনা দিয়ে আঁখি পল্লব মুদিলাম...















আগের পর্বগুলোঃ
যাত্রা শুরুর গল্প (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০১)
ট্রানজিট পয়েন্ট কলকাতা... অন্যরকম আতিথিয়তার অভিজ্ঞতা (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০২)
অবশেষে কোচিন - তৃতীয় রাতে যাত্রা শুরুর স্থানে (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৩)
ডেস্টিনেশন মুন্নার (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৪)
মুন্নার টি মিউজিয়াম (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৫)
মুন্নার ভ্রমণ - মাতুপত্তি ড্যাম এবং ব্লোসম পার্ক (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৬)
ইকো পয়েন্ট এবং টপ ষ্টেশন অফ মুন্নার (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৭)
ট্রিপ টু কুলুক্কুমালাই... (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৮)
পেরিয়ার লেক - ওয়াইল্ড লাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি (থিক্কাদি - কেরালা) (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৯)



















সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৪৭
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×