somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুন্নার টি মিউজিয়াম (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৫)

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের রাতে অনেক রাত অবধি হোটেল রুমের লাগোয়া বারান্দায় বসে গল্প করা, এরপরও বিছানায় এসে অনেকটা সময় নিদ্রাহীন কাটানোয়, ঘুম তেমন ভাল হয় নাই। আর আগের রাতে ঘুমটা ভাল না হওয়ায়, সকালে ঘুম থেকে উঠতে বড্ড খারাপ লাগছিল। তারপরও ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে শরীরটাকে একটু চাঙ্গা করে নিলাম। রুম থেকে বের হয়ে পাহাড়ের ঢালে তৈরি হোটেলের প্রতিটি ফ্লোরে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। সকালের নাস্তার আয়োজন, হোটেলের নীচের দিকের দ্বিতীয়তলায়, অর্থাৎ মাইনাস ফার্স্টফ্লোরে। সেখানে রুমের ভেতরে এবং বাইরের দিকে ভ্যালীভিউ বারান্দায় টেবিল সাজানো রয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে অনেকেই নাস্তা নিয়ে বসে গেছে। কোনার এক টেবিলে দেখি আমাদের ভ্রমণ সাথীদের একজনা বসে বসে ফলের জুসে চুমুক দিয়ে পাহাড় ঘেরা ভ্যালীর পাণে উদাসী চোখে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। একে একে দলের বাকী তিনজনও বসে পড়লাম সেই টেবিলে, বেচারার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে।

আগের পর্বগুলোঃ
যাত্রা শুরুর গল্প (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০১)
ট্রানজিট পয়েন্ট কলকাতা... অন্যরকম আতিথিয়তার অভিজ্ঞতা (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০২)
অবশেষে কোচিন - তৃতীয় রাতে যাত্রা শুরুর স্থানে (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৩)
ডেস্টিনেশন মুন্নার (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৪)







বেলা সাড়ে আটটা নাগাদ নাস্তা শেষ করে আমরা বের হলাম মুন্নার দর্শনে। আজকের প্রথম গন্তব্য মুন্নার টি মিউজিয়াম। হোটেল থেকে বের হয়ে মিনিট পাঁচেক গাড়ী চলতেই শুরু হয়ে গেল সবুজের সমারোহ আর চা বাগানের মেলা। সারি সারি চিরহরিৎ সাজানো ছবি দেখে মনে হচ্ছিল যেন শিল্পীর তুলিতে অংকিত কোন ক্যানভাসের মোহনীয় ছবি। একটি কথা বলে রাখি, মুন্নার এর প্রায় সকল চা-বাগানই “টাটা টি কোম্পানি”র কিনে নেয়া। তাই এখানে যত চা বাগান দেখছিলাম, প্রায় সবকয়টিতেই টাটা’র সাইনবোর্ড চোখে পড়ছিল। আমাদের হোটেল থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে বিখ্যাত “Munnar Tea Museum” অবস্থিত। পথে বেশ কয়েক জায়গায় গাড়ী থামালাম, চা-বাগানের ছবি তুলতে। আসলে, মুন্নার এমন একটা জায়গা, যার প্রতিটি ইঞ্চিরই ছবি ক্যামেরাবন্দী করতে মন চাইবে। আর এই করে করে আমরা প্রায় আধঘন্টা সময় পরে এসে পৌঁছলাম আমাদের প্রথম গন্তব্য মুন্নার চা-বাগানে।













পৌঁছতেই দেখি প্রচুর দর্শনার্থী ইতোমধ্যে জড়ো হয়েছে, যার বেশীর ভাগই সাদা চামড়ার ইউরোপীয়। এই মিউজিয়ামটি Nallathanni Estate of Tata Tea এ অবস্থিত, কোচিন এয়ারপোর্ট হতে প্রায় পঁচাশি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা অবধি খোলা থাকে এই মিউজিয়াম, সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ। টিকেট পঁচাত্তর/আশি রুপী’র মত, ক্যামেরার জন্য অতিরিক্ত ২০ রুপী ফি।







ভেতরে রয়েছে ভিজুয়াল প্রদর্শনী, ভারত উপমহাদেশের চা-বাগান এবং এর ইতিহাসের উপর। প্রায় পঞ্চাশজনের মত ক্যাপাসিটি হলের, ফলে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় প্রায় সময়ই পরবর্তী শো এর জন্য। রয়েছে ফটো গ্যালারী, সেই শুরুর দিক হতে ব্যবহৃত নানান যন্ত্রপাতি, অফিস ইকুইপমেন্ট, আসবাবপত্র ইত্যাদির প্রদর্শনী, রয়েছে চা ম্যানুফ্যাকচারিং এর ডামি প্রদর্শনী। এখানে এক ভদ্রলোক প্রায় মিনিট পনের’র একটি বক্তৃতা দেন, যা উপভোগ্য এবং তথ্যবহুল; যদিও অনেকের সেই প্যাচাল ;) শোনার ধৈর্য থাকে না। এখানে রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য চা পানের ব্যবস্থা (মূল্য পরিশোধ করে), রয়েছে একটি বিক্রয় কেন্দ্র, চা এবং ভেষজ পণ্যের। আসুন ছবিতে দেখি মুন্নার টি মিউজিয়ামঃ





উপরের ছবিতে পাঞ্চিং মেশিনযুক্ত একটি ঘড়ি, টু ইন ওয়ান... প্রায় শতবর্ষ পুরানো জিনিষ। আর নীচের ছবিতে দেখছেন যে হুইটি এটি একটি হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার হাউসের পেলটন হুইল। মুন্নার এর পুল্লিভাসাল টি এস্টেট এ সর্বপ্রথম ১৯০০ সালে হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার হাউস স্থাপিত হয়। ছবির হুইলটি কণ্যামালাই টি এস্টেট এর পাওয়ার হাউসে ব্যবহৃত একটি পেলটন হুইল।





১৯২০ এ তৈরী একটি রোট্রোভ্যান, যা চা-বাগানে ব্যবহৃত হত।







উপরের ছবিতে ১৯১১ সালে চালু হওয়া "কুন্দালি ভ্যালী লাইট রেলওয়ে"তে গ্রামবাসীদের সাথে সাহেবরা এবং চা বাগানের স্থানীয় কর্মচারীগণ। আর নীচের ছবিতে সেই রেললাইনে চলমান রেলগাড়ী'র ইঞ্জিনখানি।





উপরের ছবিতে ইংরেজ অফিসার G.A. Cole এবং C.A.V. Grant এবং বাগানের কর্মকর্তা-কর্মচারী'গণ। নীচের ছবিতে ১৯০০ সালে মুন্নার এর ব্লেয়ার হিলে ব্যবহৃত মনোরেল ট্রান্সপোর্ট কোম্পানীর পণ্য পরিবহণ এর চিত্র।





উপরের ছবিত ক্ষুদে আকৃতির চা তৈরীর মেশিন।









উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ১৯২৪ সালে মুন্নার হেড কোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগের জন্য স্থাপিত রেলওয়ে ব্রিজ যা বন্যায় ভেঙ্গে গিয়েছিল। সাথে নীচের ছবিতে সেই বন্যার আরও দুটি ছবি।









উপরের ছবিতে ১৯৫৩ সালে নির্মাণাধীন বিখ্যাত মাতুপাত্তি ড্যাম।























উপরের ছবিটি কেরালার মুন্নারে ১৯৪৭ সালে প্রথম ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের।























































সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৫৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×