somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ২৪)

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুলক কেন তাঁকে এত অ্যাভয়েড করছে বুঝতে পারছে না প্রিয়াঙ্কা। সাথে সাথে এটাও বুঝতে পারছে না যে পুলক অ্যাভয়েড করাতে সে এত বোদারড-ই বা হচ্ছে কেন!! তাঁর পিছনে ছেলেদের লাইন লেগে থাকে। আর কোথাকার কোন পুলক!! এসব ভাবতে ভাবতেই প্রিয়াঙ্কার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে নিজের মনে ভেবে যাচ্ছে, “ পুলকের মত ছেলেদের আমি আমার জুতাও পরিষ্কার করাই না। ওঁদের সেই যোগ্যতাও নাই। How dare he avoids me!!! Son of a bitch!!! ও কি মনে করসে! ওঁর জন্য আমি পাগল হয়ে গেসি। ওঁর মত ফালতু আন-কালচারড ছেলের জন্যে!! হাহ!! প্রিয়াঙ্কা এখনো রাস্তায় হেঁটে গেলে হাজার হাজার ছেলে জিহ্বা বের করে থাকবে।“

কিন্তু এ ধরনের রাগ শুধু অসহায়তা বাড়ায়। আর কিছু বাড়ায় না। অহংকারী মানুষেরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করে যে তাঁদের অহংকার যা এতদিন কত উপরে ছিল তা মুহূর্তের মধ্যেই কিভাবে মাটিতে মিশে যায়। কোন একজনের কাছে গিয়ে তা কিভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়।

রাগে গজ গজ করতে করতে প্রিয়াঙ্কা ঠিক করে সে পুলককে আর কখনো ফোন দিবে না। পুলক যদি ওর পা ধরেও বসে থাকে, তাহলেও সে তাঁকে কখনো forgive করবে না। এসব ভাবতে ভাবতে সে নিজেকে সাজায়। একমাত্র ঠিকমত সাজগোজ করলেই প্রিয়াঙ্কার মনটা ভালো হয়ে যায়। ভালো করে সে নিজেকে এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে দেখে। পুলকের শাড়ি পছন্দ। এখন একবার শাড়ি পড়ে ওঁর সাথে দেখা করে আসলে কেমন হয়? যদিও প্রিয়াঙ্কা শাড়ি পড়তে পারে না। শাড়ি খুবই ঝামেলার জিনিস। মা-কে আবার বলতে হবে শাড়ি পরায়ে দেয়ার জন্যে। এত্ত ঝামেলা কে করবে!! একটু আগেই প্রিয়াঙ্কা পুলকের সাথে জীবনে দেখা করবে না বলে ঠিক করেছে। কিন্তু সে একটু পরেই পুলককে ফোন দিল।
-হেল্লো
-হ্যালো!! কি খবর প্রিয়াঙ্কা?
-কি করছ পুল?
-এই তো!! কাজ কর্ম!! অফিসে যা করে আর কি!!
-হুম!! তুমি কখন ফ্রী আজকে পুল?
-আমি তো আজকে ফ্রী নেই প্রিয়াঙ্কা।
-কালকে?
-হুমমমমমমম!!!! আমি বরং sure হয়ে কালকে তোমাকে কল দেই? ওকে??
-থাক!! তোমার আমাকে কল দেয়া লাগবে না। আমিও তোমাকে আর কল দিব না।
প্রিয়াঙ্কা ফোন কেটে দিল।
ফোন রেখে প্রিয়াঙ্কা ফুঁসতে ফুঁসতে আবারো সিদ্ধান্ত নিল যে আর না!! যথেষ্ট হয়েছে। পুলক চ্যাপ্টার ক্লোজ।


পার্কে ভোরবেলায় সাধারণত মানুষ হাঁটাহাটি, ব্যায়াম আর মুক্ত বায়ু সেবন করতে বের হয়। এ সময় সাধারনত প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলদের দেখা যায় না। কিন্তু আজকে এক যুগল এসেছে। কোন এক কারণে তাঁদের মধ্যে কোন মতবিরোধ হয়েছে। এতে তাঁদের ঘিরে উৎসাহী লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। ভোরবেলার নিয়মিত দৌড়বিদেরা অবশ্য এই জটলাকে এড়িয়ে ঠিকই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এরা প্রায় সবাই-ই চাকরিজীবী। রাস্তাঘাটের এসব সমস্যা দেখে তাঁদের লাভ নেই।

ইতি-ও এই জটলাটাকে এড়িয়ে সামনে দৌড়াতে লাগল। জীবনের একটা পর্যায়ে তাঁকে সবসময় ঝগড়াঝাঁটি নিয়ে থাকতে হয়েছে। তাই অন্যের ঝগড়াঝাঁটি তাঁকে আর আকর্ষণ করে না।

ওই দিনের সেই ছেলেটি বসে আছে আগের জায়গাতেই। কি রকম উদ্ভ্রান্তের মত দৌড়াচ্ছিল ওইদিন ছেলেটি। পার্কে বহু মানুষ বহুভাবে দৌড়ায়। প্রথম প্রথম এসব দেখে মনে মনে হাসত ইতি। মানুষগুলোর এই কসরত হাসার মতই। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষগুলোর প্রাণান্তকর চেষ্টা দেখলে হাসিও লাগে, মায়াও লাগে। ইতিও প্রতিদিন এক রাউন্ড দৌড়ের পর ওখানে বসে। এ মনে হয় নতুন।

পুলক এক রাউন্ড দৌড় দিয়ে বসে একটু জিরোচ্ছিল। তাকিয়ে দেখল আগের দিন ‘anything wrong!!’ জিজ্ঞেস করা মেয়েটি আসছে। কাছাকাছি আসতেই পুলক মেয়েটিকে দেখে বলল, ‘হেলো!!’ মেয়েটি তাঁর দিকে তাকাল কিন্তু জবাব না দিয়ে দৌড়িয়ে চলে গেল। পুলক একটু বেকুব হয়ে বসে রইল। এটা কি ওইদিনের মেয়েটা না? হ্যাঁ, সেই মেয়েটাই তো।

এই সময় পুলকের ফোন আসল। এত সকালে কে ফোন দিল!!! মেয়েটার দৌড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে সে ফোন বের করল পকেট থেকে। প্রিয়াঙ্কার ফোন!!! এত সকালে!!! ও তো ঘুম থেকেই এত আগে উঠে না। ওঁর বাসা পার্কের কাছেই। পুলক ওকে বলেনি যে ওঁদের বাসার কাছেই পার্কে সে রোজ সকালে দৌড়াতে আসে। মেয়েটা আজকাল কেমন জানি বিরক্তিকর আচরণ করে।

-হেলো!!
-পুল!! (প্রিয়াঙ্কার গলা কাঁপা) আমি একটু তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
-কি হয়েছে প্রিয়াঙ্কা?
-কিছু না। এমনিই। তুমি কোথায় এখন?
-আমি এই তো একটু পার্কে হাঁটতে আসছি।
- আমাদের বাসার কাছের পার্কে?
-হুম!
-ওকে!! আমি এখনই আসি?
-হুমম!! ওকে but don’t be late। অফিস যেতে হবে।
-ওকে!!

৫ মিনিটের মধ্যেই প্রিয়াঙ্কা চলে আসল। আলুথালু বেশে মেয়েটাকে এই প্রথম দেখল পুলক। একটু অগোছালোভাবে থাকলেও যে মেয়েদের দেখতে সুন্দর লাগে এটা মনে হয় অনেক মেয়েই জানে না। প্রিয়াঙ্কাও জানে বলে মনে হয় না। সময় পেলে এখনো পাঙ্কু সেজে আসত।
-এখন বল তো কী হইসে প্রিয়াঙ্কা? রাতে ঘুম হয় নাই নাকি?
-হুম! ঘুম হয় নাই।
-কেন? আমি তো জানি তোমার রাতের ঘুম কোনোভাবেই ডিস্টারবড হয় না।
-হ্যাঁ, এই কয়েকদিন ধরে হচ্ছে না।
-কারণ কী?
-আমি জানি না।

পুলক দেখল ওই দিনের ওই মেয়েটি আরেক রাউন্ড দিয়ে আসছে। ওঁর দিকেই তাকিয়ে আছে। প্রিয়াঙ্কাকেও দেখল। পুলক হঠাৎ প্রিয়াঙ্কা সাথে থাকাতে খুব খুশি হয়ে উঠল। মনে মনে বলল, “হাহ!!! শুধু তুমিই হ্যান্ডসাম হাঙ্ক নিয়ে ঘুরতে পারবা!! আমিও সুন্দরী নিয়ে ঘুরতে পারি!!” আজকাল চ্যাটিং, ফেসবুক এ মানুষজন জিহ্বা বের করা emoticon দেয় ভেঙ্গানো বুঝানোর জন্যে। তাঁর ইচ্ছা করছে সেও মেয়েটিকে একটু জিহ্বা বের করে ভেঙ্গায়। কিন্তু সে তো আর বাচ্চা না। বড়দের দুনিয়ায় যা মন চায় তা করা যায় না। মুখোশ পড়ে থাকতে হয়।

-পুল!!!
পুলক আড়চোখে মেয়েটার দিকে চোখ রাখছিল। প্রিয়াঙ্কার ডাকে ফিরে তাকালো।
-হ্যাঁ, বল।
-I think I am in love।
-বাঃ!!! That’s really good। এই জন্য তুমি রাতে ঘুম টুম বাদ দিয়ে বসে আছ। ধুর!! এটা কিছু হল!!

পুলক আসলে একটু অবাক হয়েছে। প্রিয়াঙ্কার মত মেয়ের প্রেমে ছেলেরা পড়বে। কোন ছেলের প্রেমে ও পড়বে এটা ভাবা যায় না। আর ওঁর কাছে তো সবাই wanna be। LOVE যে ঠিক কাকে বলে তা এখন আর ঠিক বুঝতে পারে না পুলক। মাঝে মাঝে মনে হয় এসবই একটা লুকোচুরি খেলা। অনুভূতির লুকোচুরি খেলা। প্রেম তো আসলে মনেরই একটা খেলা। অদ্ভুত খেলা। শুধু কি খেলাই?

প্রিয়াঙ্কা কাউকে পছন্দ করেছে। এটা আসলে খুবই ভালো খবর। এখন ওঁর বিরক্তিকর আচরণ ওই ছেলে সহ্য করবে। এই উসিলায় দেখা করাও বন্ধ করে দিবে পুলক। কেন জানি আর এসব ভালো লাগছে না। অন্য কোন কিছু চেষ্টা করতে হবে নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য।
প্রিয়াঙ্কা অনেকক্ষণ চুপ করে আছে। পুলক খেয়াল করে জিজ্ঞেস করল।
- তো!!! Who is the lucky guy?
প্রিয়াঙ্কা পুলকের দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। দৃষ্টি নামিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।
- YOU।
একই দিনে দ্বিতীয়বারের মত বেকুব হয়ে পুলক তাকিয়ে রইল।

পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পর্ব-২১ Click This Link পর্ব-২২ Click This Link পর্ব- ২৩ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১১
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×