somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ২২)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিসে পুলকের জার্মানি যাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছে। এখনো কিছুই ফাইনাল হয়নি। পুলকের মা পুলকের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। ছেলে বাইরে চলে যাবে। বাইরে যাওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। পরে দেখা যাবে ক্যাথরিন ম্যাথ্রিন বিয়ে করে নিয়ে আসছে। তাঁর চেয়ে বিয়ে করায়ে রাখলে শান্তি। রীতা নামের মেয়েটার সাথে ছেলেটার ভালো সম্পর্ক ছিল। বিয়েটা হলে ভালোই হত। একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে। বিয়ে হয়ে অশান্তি হওয়ার চেয়ে বিয়ের আগেই অশান্তি হয়ে গেছে। এটাকে আফরোজা শাপে বর হিসেবেই দেখেন।

পুলক বাইরে যেতে চাইছে না। না, রীতা কোন কারণ নয়।

খুব বেশীদিন চাইলেও মানুষ কষ্ট আঁকড়ে ধরে থাকতে পারে না। কষ্টগুলোকে মনের এক কোণে ফেলে রাখতে হয়। এগিয়ে যেতে হয় জীবনে। কষ্টগুলো মনের কোণে পড়ে থাকে। জীবনের ব্যস্ততার মাঝে মাঝে মানুষ খেয়াল করে দেখে যে কষ্টগুলো ঠিকঠাকমত আছে কিনা!! কারণ এই কষ্টগুলোই তো তাঁর সঙ্গী। অনেক প্রিয় সঙ্গী।

পুলক বাইরে যেতে চাইছে না তাঁর মায়ের জন্য। তাঁর মায়ের বয়স হয়েছে। এই সময় মাকে ফেলে যাওয়াটা ঠিক মনে হচ্ছে না তাঁর। আর তাছাড়া তাঁর মায়ের সাথে যদি কোন সঙ্গী সাথী থাকত তাহলে একটা কথা ছিল। একা মাকে ফেলে কিভাবে যায়!! আর যেতেও যে খুব ইচ্ছা করছে তাও না। এখন আর ওইভাবে কেন জানি জীবনে কোন কিছু নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করে না। জীবন কেটে যাচ্ছে। চলে যাচ্ছে। যাক!! আর কী!!! বয়ে চলাই তো। অথচ ছাত্রজীবনে দুনিয়াটাকে কত রঙ্গীন মনে হত। আসলে তখন চোখে ছিল রঙ্গীন চশমা। এখন মনে হয় বাকি জীবনটা ঝামেলা ছাড়া কেটে গেলেই হয়। ব্যস!! যেমন চলছে চলতে থাকুক।

প্রিয়াঙ্কা কল দিচ্ছে। পুলক রিসিভ করলো না। মেয়েটা ইদানীং বেশ জ্বালাচ্ছে। আসলে মেয়েটার দোষ নেই। পুলকের আজকাল একই মানুষের সঙ্গ বেশীদিন ভাল লাগে না। আসলে অবচেতনভাবে এক ধরনের ভয় কাজ করে। আবার নতুন করে একজনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার মত বোকামি পুলকের অবচেতন মন পুলককে করতে দিতে চায় না। এই জন্যই পুলক খুব বেশীদিন কোনকিছু নিয়ে পড়ে থাকে না। সিগারেট খাওয়া আপাতত বাদ।

আরেকটা কারনেও জার্মানি যেতে চাচ্ছে না পুলক। আজকাল কোনকিছুতেই সেভাবে মনোযোগ দিতে পারছে না সে। মাঝে মাঝে মনে হয় চাকরীটা ছেড়ে দিতে। কিন্তু তা তো আর করা যায় না। এখনো এত অস্থির সে হয়নি।

প্রিয়াঙ্কার এসএমএস। ‘পুল!!! তুমি আমার ফোন ধরছ না কেন?’। পুলকের ভুরু কুঁচকে গেল। সে রিপ্লাই দিল না। এসএমএস এর লিস্টে এখনো রীতার এসএমএস টা আছে। “কেমন আছ পুলক?”। কিছুক্ষণ মোবাইলের স্ক্রীনটায় হাত বুলাল সে। ভালোই আছে রীতা। নিশ্চয়ই ভালো আছে।

আবার প্রিয়াঙ্কার কল।
-সরি প্রিয়াঙ্কা!! একটু ব্যস্ত ছিলাম। বল!!!
-তুমি কি আজকাল আমাকে এভয়েড করছ পুল?
-এটা কী ধরনের কোয়েসচেন!! Why should I avoid you?
- I don’t know but I am having this feeling that you are avoiding me.
-দেখ প্রিয়াঙ্কা!! এই ধরনের কথাবার্তায় আমি খুব বিরক্ত হই। আমার মনে হয় তুমি কিছু নিয়ে ডিসটারবড। আমরা বরং পরে কথা বলি।
-Sorry to disturb you.
প্রিয়াঙ্কা ফোন কেটে দিল।
নাঃ। এই জন্যই একটা মেয়ের সাথে বেশীদিন কথা বলা ঠিক না। এরা পেয়ে বসে। দম বন্ধ করা একটা পরিবেশ সৃষ্টি না করা পর্যন্ত শান্তি নেই। খুব রাগ হচ্ছে পুলকের। রাগ হলেই পুলকের রীতার কথা মনে পড়ে। একমাত্র রীতা পারত তাঁর রাগ ঠাণ্ডা করতে। শুধু রাগ না। খুব অপমান হলেও রীতার কথা তাঁর খুব মনে পড়ে।

অফিস থেকে বের হওয়ার সময় মা ফোন দিল।
-পুলক জলদি বাসায় আয়।
-কেন?
-আমার এক জায়গায় যেতে হবে। পাইকপাড়া। আমি চিনি না। তুই নিয়ে যাবি।
-ওখানে কে থাকে? কার বাসা?
-আছে। তুই চিনবি না। জলদি আয়।
-আচ্ছা।
আফরোজা আক্তার ছেলের জন্য মেয়ে দেখে রাখছে। একটা মেয়ে তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে। মেয়েটা মাত্র অনার্স পড়া শুরু করেছে। ওই মেয়ের বাসায়ই যাবে। পুলককে আগে থেকে বললে পুলক জীবনেও যাবে না। ছোট মেয়ে বলেও খুব চিল্লা পাল্লা করবে। কিন্তু আফরোজা বউ হিসেবে কেন যেন ছোট মেয়েই খুঁজছেন। ছোট মেয়ে হলে তাঁর সাথে একটু থাকবে। চাকরিজীবী মেয়ে তো অনেক ব্যস্ত হয়। তাঁর সাথে কথা বলার সময়ই পাবে না। জীবনের এই শেষদিকে এসে মাঝে মাঝেই আফরোজা আক্তার এর খুব একা লাগে। মাঝে মাঝে খুব বিষণ্ণতা পেয়ে বসে। এতবড় জীবনটা কিভাবে শেষ হয়ে গেল। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব করে ফেলেন মাঝে মাঝে মনে মনে। জীবন সায়াহ্নে এসে অপ্রাপ্তির ঝোলাটাকেই কেন যেন ভারী মনে হয়।

কলিং বেল বাজল। পুলক এসেছে। ছেলে বাসায় ফিরলেই তাঁর মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। প্রাপ্তির ঝোলার প্রায় অনেকটা অংশ জুড়ে তো শুধু ছেলেই।

মা ছেলে বের হয়ে গেল তড়িঘড়ি করে।

পর্ব-১ Click This Link পর্ব-২ Click This Link পর্ব-৩ Click This Link পর্ব-৪ Click This Link পর্ব-৫ Click This Link পর্ব-৬ Click This Link পর্ব-৭ Click This Link পর্ব-৮ Click This Link পর্ব-৯ Click This Link পর্ব-১০ Click This Link পর্ব-১১ Click This Link পর্ব-১২ Click This Link পর্ব-১৩ Click This Link পর্ব-১৪ Click This Link পর্ব-১৫ Click This Link পর্ব-১৬ Click This Link পর্ব-১৭ Click This Link পর্ব-১৮ Click This Link পর্ব-১৯ Click This Link পর্ব-২০ Click This Link পরব-২১ Click This Link
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×