somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজী নজরুলের যে কষ্ট কেউ বুঝেনি, যে চিত্র কেউ দেখেনি......

২৫ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি নজরুলের জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্ট কী ছিল?

তার জীবনী পড়লে দেখা যায়, এত তেজোদ্দীপ্ত ও বিদ্রোহী কবি কিন্তু তার পরিবারের কাছে নিতান্ত অসহায় ছিলেন। একজন মুসলিম কবি হয়েও তিনি বিয়ে করেছিলেন একজন হিন্দু নারীকে। যদিও তার প্রথম বিয়ে হয়েছিল নার্গিস নামের এক তরুণীর সাথে।

কবি তার এই হিন্দু স্ত্রী ও শ্বাশুড়ীর কাছে অসহায় ছিলেন। বাড়ীতে তিনি তাদের সামনে ভগবান ও জল বলতেন আর বাইরে এসে বলতেন পানি ও আল্লাহ। যদিও কবি হিন্দুদের জন্য শ্যামাসঙ্গীত লিখেছেন, কিন্তু ইসলামের জন্য তিনি প্রচুর গজল ও লেখা রচনা করেছেন।

কিন্তু মুসলমান হয়ে তিনি ইসলামের জন্য হামদ নাত লিখবেন, এটা সহ্য হতো না তার শ্বশুরগোষ্ঠীর। ইসলামী লেখার জন্য তারা কবিকে নির্মম কথা শোনাতো, উপহাস করতো, কবির শ্বাশুড়ী এ বিষয়ে দারুণ ক্ষ্যাপাটে ছিলেন।

তবু কবি নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে লিখতেন আল্লাহ ও রাসুলের নামে। এখানেই শেষ নয়, কবি তার দুই ছেলেকে খৎনা করার কথা বলারও সাহস পেতেন না তার পরিবারের কাছে।

মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করেছে’ এই অভিযোগে যারা কবির স্ত্রী ও শ্বশুর পরিবারকে দূর দূর বলে তাড়িয়ে দিয়েছিল, কবির নাম যশ প্রচার হলে এরাই আবার দলে দলে এসে কবির বাড়ীতে দীর্ঘদিন ধরে থাকতো, খেতো, আমোদ ফূর্তিতে মত্ত থাকতো।

এমনও হয়েছে কবির শ্বাশুড়ী পরিবারকে গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য কবি নজরুল বাধ্য হয়ে ট্রেনের দু বগি রিজার্ভ করতেন, সেইসাথে সামানপত্র নেয়ার জন্য ওয়াগন ভাড়া করতেন। এসবের খরচ মেটাতে গিয়ে কবি যে কত মানুষের কাছে হাত পেতে ধার করেছেন, তার হিসেব নেই।

কবির খুব কাছের বন্ধুদের স্মৃতিকথায় দেখা যায়, এজন্য কবি কয়েকবার নীরবে লাঞ্চিত অপমানিত হয়েছিলেন। এতো করেও কবির তার স্ত্রীর পরিবারের মন ভরাতে পারতেন না। মুন্সী জুলফিকারের কাছে একসময় কবি বলেই ফেললেন কথা প্রসঙ্গে, তুমি তো আমার শ্বাশুড়ীকে চেন না। ওরা হচ্ছেন যেন রাঘব বোয়াল, কিছুতেই আমি ওদের পেট ভরাতে পারলাম না।’’

জুলফিকার হায়দার তার প্রত্যক্ষ বর্ণনায় লিখেছেন, কবির শ্বাশুড়ী যেন তার প্রতি আরোপিত অপবাদ ও ঘৃণার জবাব দিতে তার বাড়ী থেকে আগত অতিথিদেরকে দু হাত ঢেলে আপ্যায়ন করতেন। কখনো কখনো দু একজনের খাবার ব্যবস্থা করতে গিয়ে তিনি কবির পকেট থেকে তৎকালের দশ বিশ নয়, একেবারে চল্লিশ টাকা পর্যন্ত খরচ করাতেন। নিজেদের আত্মঅহমিকা আর ভাব দেখানোর এতসব আয়োজনের সব দায় মেটাতে হতো একা কবি নজরুলের। ফলে অর্থ অভাব আর টানাটানি লেগেই থাকতো তার সংসারে।

হিন্দু সাহিত্যিকদের একটি বিশেষ গোষ্ঠী ছিল যারা সর্বক্ষণ কবিকে নির্দয় ভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিত, গোঁড়া হিন্দু স¤প্রদায় তাকে পরিহাস করত।
এই ছিল একদিকের দৃশ্য।

অন্যদিকে এক হিন্দু নারীকে বিয়ে করায় তৎকালের মুসলিম সমাজও কবিকে তিরস্কৃত করত, এমনকি তারা তাকে কাফের ফতোয়া দিয়েছিল। সারাদেশের জাগরণে যার গান প্রেরণা যোগায়, সে নজরুল তাদের কাছে ছিলেন ঘৃণার পাত্র।

ফলে ঘরে ও সমাজে এমন বিপরীত ও অসহনীয় একটি পরিবেশে কবি থাকতেন চরম দুঃখে ও মানসিক বেদনায়। আর এসব ভুলে থাকার জন্য তিনি সবসময় ছাদফাটানো হাসি আর আড্ডার উপায় বেছে নিতেন। তবু আশ্চর্যের বিষয়, দুরন্ত মনের চঞ্চল কবি কাজী নজরুল ইসলাম কীভাবে তার জীবনের এ বৈপরীত্য মেনে দিন কাটাতেন, সুর সাগরে সাহিত্য ভান্ডারে প্রাণসঞ্চার করতেন?

কাজী নজরুল ইসলাম মানুষ হিসেবে যে কতটা নিঃসঙ্গ ছিলেন, তার মনের অবস্থা কতো বেদনাময় ছিলো, এর প্রমাণ মিলে তার বিভিন্ন চিঠি থেকে। এজন্যই হয়তো তিনি ঘুরে বেড়াতেন নানা জায়গায়। কয়েকবার তিনি এসেছেন আমাদের এই ঢাকায়, এসেছেন কুমিল্লায়, ফরিদপুরে, যশোরে, খুলনায়, চট্টগ্রামে, সিরাজগঞ্জে, ঠাঁকুরগায়ে।

বেগম মাহমুদ নাহারকে লেখা চিঠির এক জায়গায় কবি লিখেছেন, তোমরা ভালবাস আমাকে নয়, আমার সুরকে, আমার কাব্যকে। তোমরা কবিকে জানতে চাও না নজরুল ইসলামকে জানতে চাও?”

কাজী মোতাহার হোসনকে লেখা এক চিঠিতে কবি নিতান্ত দুঃখের সাথে লিখেছেন, “বন্ধু আমি পেয়েছি- যার সংখ্যা আমি নিজেই করতে পারবো না। এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, গানের বন্ধু। ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা। এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছে, প্রিয় হয়ে ওঠেনি কেউ। আমার চোখের জলের বাদলা রাতে এরা কেউ এসে হাত ধরেনি।”

এমনই অসংখ্য চিঠি থেকে কবির মনোবেদনার যে দুঃখময় চিত্র ফুটে ওঠে, তার পূর্ণ বিবরণ দিলে চোখের পানি ধরে রাখা মুশকিল। কবির ব্যক্তিজীবন তাই সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। মায়া ও করুণার অপূর্ব অনুভুতিতে মন সিক্ত হয়ে আসে।

ইসলামী সাহিত্য ও মুসলমানরা কবির সাথে যে ব্যবহার করেছিল, এ সম্পর্কে কবির মনোভাব কী ছিল? বাঙালী সমাজ নিয়ে কবি কীভাবে ভাবতেন? এসব নিয়ে আগামীতে...

আগের পর্বগুলো-
কেন এবং কীভাবে..
নজরুলের রক্ত নেয়া হলো না... কিন্তু কেন??
পাগলের গলায় গান ধরালেন কবি নজরুল
কবি কাঁদলেন এবং বদলে গেলেন যে ঘটনায়
কবি নজরুলের অদ্ভূত কান্ড কারখানা
চলুন, কাজী নজরুলকে দেখে আসি কলকাতা থেকে..
নজরুলের গান গজল কীভাবে তৈরী হতো....
কাজী নজরুলের খেয়ালখুশী
কবি যখন থেকে নির্বাক হলেন.. কবির ঢাকা ভ্রমণের বিচিত্র কান্ড
নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন কবি নজরুল, কিন্তু জয়ী হয়েছিলেন


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:৩৭
১২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×