somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি নজরুলের অদ্ভুত কান্ড, হাস্যরসের মন্তব্যগুলোর কয়েকটি.....

১২ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাজী নজরুল এসেছেন সিরাজগঞ্জে।
ইসমাইল হোসেন সিরাজীর প্রতি কবির ছিল অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও বিনয়মিশ্রিত ভালোবাসা। সিরাজীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কবি কাঁদলেন, খোদার কাছে মাগফেরাত চাইলেন। বেদনাবিধুর কণ্ঠে তিনি উপস্থিত লোকদেরকে শোনালেন, সিরাজী সাহেব আমাকে যে আদর করেছিলেন, তা আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ পাওয়া। এমন আদর আমাকে এই বাংলার আর কেউ করে নাই। এই সিরাজগঞ্জ থেকে তিনি আমার জন্য মানি অর্ডার করে সেকালে দশটি টাকা পাঠিয়েছিলেন, বলেছিলেন, একটি কলম কিনে নিও. আমার কাছে এর বেশী এখন নেই, থাকলে তোমায় পাঠিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।’ কথাগুলো বলার সময় বিদ্রোহী কবির চোখে অশ্র“ ছলছল করছিল।
সফরের তৃতীয় দিন কবি খেতে বসেছেন আসাদউদ্দৌলা সিরাজীর ঘরে। সবার পাত্রে ইলিশ ভাজা পরিবেশন করছেন তিনি। কবির পাত্রেও একখানা দিয়েছিলেন, কবি সেটি খেয়ে কেবল শেষ করছিলেন, তখনই একজন আরও কিছু ইলিশভাজা তার প্লেটে দিতে যাচ্ছিলেন, রসিক কবি নজরুল তাকে বাধা দিয়ে হো হো করে বলে উঠলেন, আরে আরে করছ কী? শেষকালে আমাকে বিড়াল কামড়াবে তো?

উপস্থিত সবাই কবির কথাটা বুঝতে পারল না। গিয়াসুদ্দীন নামে একজন জিজ্ঞেস করলেন, মানে?

কবি বলতে লাগলেন তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে, আরে বুঝলেন না! ইলিশ মাছের গন্ধ মুখে লালা ঝরায়, বিড়াল মাতাল হয়ে যায় এর ঘ্রাণে, বেশী খেলে কি আর রক্ষে আছে, সারা দেহ থেকে গন্ধ ছুটবে আর সে গন্ধ পেয়ে বিড়াল তেড়ে আসবে।
এমন ব্যাখ্যা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

খাওয়া দাওয়া শেষ। আয়োজকরা কবির পাতে দই ঢেলে দিচ্ছেন।
একটু দই মুখে দিয়ে কবি অদ্ভুত ভঙ্গিতে চোখ কপালে তুলে আসাদউদ্দৌলার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি হে! তুমি কি এই দই তেতুঁল গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে এলে নাকি?
সবাই আবারও হাসতে হাসতে কাত হয়ে গেল।
টক দইয়ের জন্য মেজবানকে এভাবে শাসানো কবি নজরুল ছাড়া আর কার পক্ষে সম্ভব ছিল?

দই খাওয়া শেষ। পান জর্দা মুখে দিয়ে বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে গা এলিয়ে শুয়ে আছেন কবি নজরুল।
এমন সময় এক লোক এল কবিকে সালাম করতে। দরজায় দাড়িঁয়ে সে বেশ জোরে আসসালামু আলাইকুম বলল। কবি তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, আরে, দুর্গা দাসবাবুর মুখে আসসালামু আলাইকুম যে!,

উপস্থিত সবাই কবির এমন আজব কথা শুনে আগন্তুকের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে, লোকটি সত্যিই বাংলা নাট্যমঞ্চের বিখ্যাত নট দুর্গা দাসের মতো সুদর্শন। আগত লোকটি বিনীত ভাবে বললেন, আমি বন্দোপধ্যায় নই, সৈয়দ। এই তো রায়পুরায় আমার বাড়ী।
একজন অচেনা মানুষকে এমন ভড়কে দিতে কবির আকস্মিক মন্তব্যে আবার হো হো করে হেসে গড়াল ঘরশুদ্ধ সব মানুষ।

বন্ধু শৈলেনের কাছে এসে তার কাছে কবি চা চাইলেন এই বলে, তুমি তো অনেক টাকা পাবে আমার কাছে, হিসেব করে রেখো, আপাতত দু পেয়ালা চা দাও।
শৈলেন জিজ্ঞেস করে, দু পেয়ালা কেন?
কবি বলে চলেছেন, আরে, লাখ পেয়ালা চা না খেলে চালাক হয় না। লাখ পেয়ালা হতে আমার এখনও দু পেয়ালা বাকী আছে।
বন্ধুর কাছে থেকে চা আদায় করে নিতে এমন অদ্ভুত মন্তব্য ছিল কবির নিত্য অভ্যাস।

কবি নজরুলের পত্রিকা ধুমকেতুর অফিসে সারাক্ষণ চলত হাসি আনন্দের বন্যা। সেখানে সবাইকে চা দেয়া হতো মাটির ভাঁেড়।
এর কারণ কী?
কবি যখন চায়ে চুমুক দিতে দিতে তার কোন হাসির কথা মনে পড়ে যায় কিংবা কোন রসিক বন্ধুকে এই মাত্র অফিসে ঢুকতে দেখেন, অমনি দে গরুর গা ধুইয়ে বলে চায়ের পেয়ালা ছুড়ে মারতেন, মাটির পেয়ালা ভেঙে চা ছিটকে পড়তো কাগজে, মেঝেতে, মাদুরে, কারো গায়ে।
হাসতে হাসতে ক্লান্ত হতো কবির সঙ্গীরা, তবু থামতেন না কবি।

গোপীনাথ নামে একজন ধুমকেতুর অফিসে এসে এসব আজব কান্ড দেখে কবিকে জিজ্ঞেস করে বসল, আপনাদের মনে এত আনন্দ আসে কোত্থেকে?

এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে কবি আবারও বলে উঠেন, দে গরুর গা ধুইয়ে, শোন, আনন্দ কোত্থেকে জাগে, তার উত্তর নেই, কিন্তু নিরানন্দ কেন হবে, তার উত্তর শুনতে চাই তোমার কাছে।

গোপীনাথ জবাব দেয়, দেশ পরাধীন, সাহেবদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সবাই। এমন জ্বালার মধ্যে আনন্দ জাগে কীভাবে? প্রতিটি ইংরেজ আমাদের শত্র“, তারা বুক ফুলিয়ে হাঁটবে আর আমরা হাসব, গাইব?

ভরাট গলায় নজরুল তাকে বুঝালেন, প্রতিটি ইংরেজ নয়, সমগ্র ইংরেজ সমাজ আমাদের শত্র“, এ শত্র“দের ভাসিয়ে দিতে হলে চাই প্রাণবন্যা, এরই আবাদ করছি আমরা এখানে।’ গোপীনাথ চুপ হয়ে শুনে ভাবুক হয়ে যায় কবির জবাব শুনে।

এমন হাসিখুশী কবিও তার জীবনের এক ঘটনায় কেঁেদেছিলেন ছোট শিশুর মত, চোখ দুটো তার ফুলে গিয়েছিল তখন, এর পর থেকেই তার ভাবান্তর ঘটে। কিন্তু কী সেই ঘটনা? কীভাবে বদলে গেলেন কাজী নজরুল? উত্তর জানতে আগামী পর্ব পড়–ন।

কুইজঃ সর্বশেষ কবে কাজী নজরুল ইসলাম নামাজ পড়েছেন বলে কেউ দেখেছে?
উত্তর- ১৯৪০ সালে। এ সময় কবি একদিন তার বন্ধু জুলফিকার হায়দারের বাসায় গিয়ে স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছিলেন। এরপর এমন আর কেউ বর্ণনা করেছেন বলে জানা যায়নি।
চলবে...............
আগের পর্বগুলো
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×