somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে জন্ম হতো কবি নজরুলের গান কবিতার... কে ছিল তার গানের ওস্তাদ?

১১ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাজী নজরুল এসেছেন কুমিল্লায়। উঠেছেন শ্রী ইন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের বাড়ীতে। একদিন তার কানে একটি শিশুর আওয়াজ ভেসে আসল। তিনি কান পাতলেন, চোখ মেলে তাকালেন, দেখেন, সেই বাড়ীরই ছোট মেয়েটি একটি পেয়ারাডালে বসা কাঠবেড়ালীর সাথে ভাব জমাচ্ছে।
এই ভয় দেখায়, আবার আদর করে, কখনো নিজেই রাগ করে, আবার অভিমান ভুলে যায়, কখনো মেয়েটি কাঠবেড়ালটিকে বলছে, তোমার সাথে আমার আড়ি, যাও। কবি নজরুল এ দেখে নিজেও যেন শিশুর জগতে মিশে গেলেন।
তিনি তন্ময় হয় ছোট্ট মেয়েটির ভাব জমানো দেখছিলেন, মেয়েটি রাগ হয়ে বলছিল, হেই ভগবান, একটি পোকা যাস পেটে ওর ঢুকে।’
শিশুমনা নজরুল দারুণ মজা পেলেন তার এ দুষ্টুমী দেখে। তখনই কাগজ কলম নিয়ে বসে ফেললেন এবং হাসতে হাসতে লিখে ফেললেন তার সেই ছড়াটি, অজস্র শিশুর প্রথম পাঠ্য বইয়ে আজো সেই ছড়াটি বিদ্যমান।

গ্রামোফোন কোম্পানীতে কাজী নজরুল তখন খুব ব্যস্ত সময় কাটাতেন। চারিদিকে তার তখন শিল্পীদের ভীড়। তিনি লিখে চলেছেন অবিরাম, সুর করে শিখিয়ে দিচ্ছেন বিরামহীনভাবে।
রিহার্সাল ঘরে তুমুল হৈ হুল্লোড়ে বসে কবি সবার সাথে মিসে যেতেন আনন্দে। হঠাৎ দেখা যেত, কবি চুপ হয়ে আছেন। যেন ভাবান্তর ঘটেছে তার মনে। আনন্দে ব্যস্ত রুমভর্তি মানুষদের কেউ তার এ আচমকা নীরবতা টের পেলনা।
এত গোলমাল আর হট্টগোলের মধ্যে তিনি মুখভর্তি পান চিবোতে চিবোতে আধ ঘন্টার কম সময়ে লিখে ফেলতেন দশ বারোটি গান। তারপর হাতে হাতে তা বিলি করে দিতেন। যেন মাথায় তৈরী করা ছিল, শুধু কাগজে তুলে দিলেন।
একদিন এলেন শিল্পী আব্বাস উদ্দীন। এসে কবিকে বললেন, এই যে কাজীদা, দেখুন, পাশের রুমে পিয়ারু কাওয়াল উর্দু কাওয়ালী গানের রিহার্সাল দিচ্ছে। বাজারে সেসব গান খুব চলছে। আপনি বাংলায় এমন কিছু গান লিখে দেন না কেন? কোম্পানীর বাঙালী সাহেব বলে উঠলেন, না না, ওসব চলবে না বাজারে।
এভাবে চলে গেল প্রায় এক বছর। কী ভেবে এবার কর্তা রাজী হলেন। আব্বাসউদ্দীন ছুটে গিয়ে কবিকে বললেন, কাজীদা, কর্তা রাজী হয়েছেন।
এ খবর শুনে নজরুল একটি আলাদা রুমে গিয়ে ঢুকলেন। আব্বাসকে বললেন, কিছু পান নিয়ে এসো। তিনি পান নিয়ে এলেন ঠোঙা ভর্তি করে। কবি নজরুল তখন বললেন, দরজাটা বন্ধ করে এবার চুপচাপ বসে থাক।
পনেরো থেকে বিশ মিনিট। কবি মাথা তুলে তাকিয়ে বললেন, এই যে এসো, নাও, ধরো, সুর শিখে নাও।
শিল্পী আব্বাস উদ্দীন অবাক। এই ক মিনিটে তার কাজীদা লিখে ফেলেছেন, ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো...। শুধু কি লিখলেন, সুরও ধরিয়ে দিলেন সাথে সাথে। আর বললেন, কাল এসো আবার। রেকর্ডের অপর পৃষ্ঠার জন্য আরেকটি লিখে দিব।
পরদিন তিনি এলেন এবং কবি তার জন্য লিখে দিলেন, ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর। চারদিন পর গজল দুটো রেকর্ড হল এবং বাজার মাত হয়ে গেল। এভাবে শুরু হল তার গজল লেখা। কোম্পানীও দেদারসে মুনাফা করল এসব বিক্রি করে। মাত্র কয়েক মিনিটে জন্ম নেওয়া সেসব গানগজল এর মহিমা ডিঙাতে পারেনি আজও কোন কবি কিংবা শিল্পীর গান।

কুইজঃ কাজী নজরুলের কি কোন গানের ওস্তাদ ছিল?

উত্তরঃ গ্রামোফোন কোম্পানীতে নিমন্ত্রণ পাওয়ার পর কবি ভাবলেন, গানের বিদ্যাটা একটু ভালো করে শিখে ঝালিয়ে নেওয়া দরকার। সেসময় ১৯২৯ সালে তিনি ওস্তাদ জমীরুদ্দীন খানের কাছে কিছু তালিম নিয়েছিলেন, যাতে ওস্তাদী করতে তার কাজে লাগে। এর প্রমাণ মিলে ১৯৩২ সালে সেপ্টেম্বরে তার গানের বই ‘বনগীতি’ উৎসর্গপত্রে তিনি লিখেছিলেন, ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত কলাবিদ আমার গানের ওস্তাদ জমীরউদ্দীন খান সাহেব এর দস্ত মোবারকে।’

চলবে............................................
আগের পর্ব- Click This Link
প্রথম পর্ব - Click This Link
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×