somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীন বাংলা বেতারের ছয় ভাইবোন

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রবাল চৌধুরী, কল্যাণী ঘোষ, উমা খান, স্বপন চৌধুরী, দেবী চৌধুরী ও পূর্ণিমা দাশ। ছয় ভাইবোন ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী। চট্টগ্রামের এই সংগীত পরিবার নিয়েই আজকের আলোচনা:
একদিন যাত্রা শুরু হলো, নিরুদ্দেশ যাত্রা। মা-বাবা, ভাইবোন ও স্বামী-সন্তানসহ তাঁরা মোট ২৩ জন। নারীরা বোরকা পরলেন, কালি মেখে নিলেন মুখে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা থেকে বাঁচতে।
শহরের রহমতগঞ্জের বাড়ি পুড়িয়ে দিলে প্রাণ বাঁচিয়েছেন গ্রামে পালিয়ে। চিরচেনা সেই গ্রামে দেখলেন অচেনা সব ঘটনা, রাউজানের সেই বিনাজুরি গ্রামে তখনই শুরু হয়ে গেছে রাজাকারদের অত্যাচার। অবশেষে নিরুদ্দেশ যাত্রা।
রামগড় হয়ে প্রথমে ভারতের সাবরুমে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে, পরে আগরতলা। কিন্তু সেই যাত্রা শেষ হয়েছিল কলকাতায় গিয়ে। যোগ দিলেন অন্য রকম এক যুদ্ধে। নাম লেখালেন মুক্তির গানের দলে, একজন নয়, ছয় ভাইবোন—একসঙ্গে।
বলা হচ্ছিল চট্টগ্রামের প্রবাল চৌধুরীদের বিখ্যাত সংগীত পরিবারের কথা। রহমতগঞ্জের মনমোহন চৌধুরী ও লীলাবতী চৌধুরীর আট সন্তানের মধ্যে ছয়জনই গান করতেন। প্রবাল চৌধুরী, কল্যাণী ঘোষ, উমা খান, স্বপন চৌধুরী, দেবী চৌধুরী ও পূর্ণিমা দাশ। প্রবাল চৌধুরী, কল্যাণী ঘোষ, উমা খান তো সংগীতাঙ্গনের উজ্জ্বল তারকা। অন্য তিনজন পেশাদার শিল্পী ছিলেন না বটে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস স্বাধীন বাংলা বেতারে গান করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ণিমা দাশ ছিলেন চট্টগ্রাম কুসুমকুমারী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। উমা খান ছিলেন মুহসীন কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্রী। কল্যাণী ঘোষ ও দেবী চৌধুরী স্কুলের শিক্ষকতা করতেন। স্বপন চৌধুরী ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী আর প্রবাল সদ্য সংসারী হয়েছেন।
কল্যাণী ঘোষ বলেন, ‘আমরা চার বোন এবং বড় ভাই অসিত আর স্বপন চৌধুরীও গান করতেন। কিন্তু প্রবাল ছিল সেরা। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিসংগ্রাম শিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ তরুণ শিল্পীগোষ্ঠী ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যার ও স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে আমরা ছয় ভাইবোন গান গেয়েছি।
ছয় ভাইবোনের মধ্যে এখন একজন নেই, তিনি প্রবাল চৌধুরী। গত বছর চলে গেছেন না ফেরার দেশে। উমা খান থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। কল্যাণী ঘোষ বাংলা একাডেমীর উপপরিচালক, থাকেন ঢাকায়। অন্যরা আছেন চট্টগ্রামেই।
দিনটা ছিল ২১ এপ্রিল, ১৯৭১। সবার স্মৃতির পাতায় গেঁথে আছে সেদিনের স্মৃতি। জানা গেল মুক্তির গান সম্পর্কে। কল্যাণী ঘোষ, প্রবাল চৌধুরী ও উমা খান প্রথমে যুক্ত হন মুক্তিসংগ্রাম শিল্পী সংস্থার সঙ্গে। ১৪৪ লেনিন সরণির সে সংগঠনে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছিলেন রথীন্দ্রনাথ রায়, রফিকুল আলমকে। রূপান্তর দল নামে কলকাতার বিভিন্ন মঞ্চে গান করতেন। ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুনের সঙ্গে ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে গান করতে যেতেন।
পূর্ণিমা দাশ ফিরে যান সেই দিনগুলোতে—‘বাংলাদেশ তরুণ শিল্পীগোষ্ঠীতে আমরা সব ভাইবোনই ছিলাম। বড়দি কল্যাণী ঘোষ ছিলেন ওই সংগঠনের সম্পাদক। মিতালী মুখার্জি, কাদেরী কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রামের শিল্পী বাণীকুমার চৌধুরী, সুজিত রায়, আবু তালেবরা ছিলেন। ভারত সরকারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের ডাক পড়ত।’
কল্যাণী ঘোষ যেন চোখ বন্ধ করে চলে যান পশ্চিমবঙ্গের সেই সব জায়গায় যেখানে গেয়েছেন মুক্তির গান। বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনুদান সংগ্রহ করতে গোটা পশ্চিমবঙ্গ চষে বেড়িয়েছি। বারাসাত, বসিরহাট, নদীয়া কিংবা দুর্গাপুর, আসানসোল, বহরমপুর, কোথায় যাইনি?’
২৫ মে স্বাধীন বাংলা বেতার শুরু হওয়ার পর একদিন দেখা হয় সমর দাশ ও আবদুল জব্বারের সঙ্গে। তাঁরা কল্যাণীদের উদ্দেশে বললেন, ‘আমরা তো তোমাদের খুঁজছি।’ প্রথমে কল্যাণী, প্রবাল ও উমা যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতারে। পরে অন্য তিনজন।
১৯৭২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতারে কাজ করেছেন ছয় ভাইবোন। দেশে ফিরে দেখেন, শহরের বাড়ির দরজা-জানালাও খুলে নিয়ে গেছে রাজাকারেরা। প্রবালের ওপর দায়িত্ব পড়ল পরিবারের ভরণপোষণ আর বাড়ি সংস্কারের। নতুন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন তিনি। সম্বল বলতে সেই কণ্ঠ, সেই গান।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×